নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
এ দুই উপজেলায় পাটনাই, বোম্বাই, মাদ্রাজি, বেদেনা, চায়না থ্রিসহ নানা জাতের লিচু চাষ করছেন স্থানীয় কৃষকরা। এখন প্রতিটি লিচু গাছ মুকুলে ভরপুর হয়ে উঠেছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ফলনের আশা করছেন স্থানীয় লিচু চাষিরা। এর মধ্যে চাষিরা লিচু গাছের পরিচর্যা শুরু করে দিয়েছেন।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর মাঘ মাসের শেষদিকে বৃষ্টি হওয়ায় এ উপজেলায় লিচুর গাছগুলোতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে লিচু বাগানগুলোতে পাতার ফাঁকে ফাঁকে দেখা মিলছে আমের স্বর্ণালী মুকুলের। এদিকে উপজেলার আজমপুর, রামধননগর, চানপুর, দুর্গাপুর, খারকোট, মিনারকোট, নিলাখাত, বিজয়নগরের পাহাড়পুর, সেজামুড়া, কামালমুড়া, গিলামুড়া, জলিলপুর, মুকুন্দপুর,চানপুর, ভিটিদাউদপুর,খাটিংগা, বিষ্ণুপুর, ছতুরপুর, কালাছড়া, বক্তারমুড়া, শ্রীপুর, নোয়াগাও, পত্তন, আদমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বাণিজ্যিক ভাবে লিচু চাষ হচ্ছে। ওইসব এলাকায় বাগানে দেশি লিচু, এলাচি, চায়না, পাটনাই ও বোম্বাই লিচু চাষ করা হয়। তবে ওইসব এলাকার মাটি লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় তারা লিচু চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ জেলার মানুষের কাছে দিনদিন সমাদৃত হচ্ছে লিচুর বাগান।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ৫১০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিজয়নগর উপজেলায় ৩৭৫ হেক্টর, আখাউড়ায় ৯০ হেক্টর রয়েছে।
পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি গাছে শোভা পাচ্ছে লিচুর সোনালী মুকুল। বাগানগুলোতে লিচুর মুকুল থেকে কুঁড়ি আসা শুরু হবে। শিগগিরই কুঁড়ি থেকে ফুটবে গুঁটি লিচু। সবুজ গুঁটি থেকে থোকা থোকা শোভা পাবে লাল টকটকে লিচু। বর্তমানে লিচুর মুকুলে এখন মৌমাছির গুঞ্জন শুরু হয়েছে। মুকুলের মিষ্টিঘ্রাণ যেন জাদুর মতো কাছে টানছে তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা প্রশাখায় তাই চলছে ভ্রমরের সুর গুঞ্জন।
লিচু বাগানের মালিকরা জানান, গাছে মুকুল দেখার পর থেকে তাদের মনটা বেশ ভালো লাগছে। তারা লিচুর মুকুল ধরে রাখতে নানা প্রকার প্ররিচর্যায় এক ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। এই দুই উপজেলায় দেশি, এলাচি, চায়না, পাটনাই ও বোম্বাই লিচুর খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। এ লিচুর খোসা পাতলা, শাশ পুরো রসালো ও বিচি ছোট হয়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকাররা এসে নিয়ে যাচ্ছে।
চানপুর এলাকার লিচু বাগানের মালিক গিয়াস উদ্দিন বলেন, তিনি দীর্ঘ বছর ধরে বোম্বাই ও পাটনাই জাতের লিচুর চাষ করছেন। তবে এখানকার লিচুর জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর খ্যাতি রয়েছে। লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে থাকেন। গাছে যেভাবে লিচুর মুকুল এসেছে তিনি আশা করছেন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
বিষ্ণুপুর গ্রামের লিচু চাষি সুহাগ মিয়া জানান, তার ৪টি বাগানে চায়না, পাটনাই ও বোম্বাই ১২০টি লিচু গাছ রয়েছে। এর মধ্যে সবকয়টি লিচু গাছে মুকুল এসেছে। এখন তিনি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
লিচু চাষি আকরাম হোসেন জানান, তার ৩টি বাগানে দেশি,বোম্বাই ও পাটনাই জাতের ১৫০টি লিচু গাছ রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি গাছে অন্য কয়েক বছরের তুলনায় লিচুর মুকুল বেশি এসেছে। ফলন ভালো রাখতে নিয়মিত কৃষি অফিসের পরামর্শ নিচ্ছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম জানান, এখানকার মাটি লিচু চাষের জন্য খুবই উপকারি। লিচু ফলন বৃদ্ধিতে চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আখাউড়া ও বিজয়নগরের লিচুর খ্যাতি রয়েছে জেলাসহ দেশজুড়ে। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। যা লিচুর বাম্পার ফলনের জন্য উপযোগী। এ অবস্থায় থাকলে এবার লিচুর বাম্পর ফলনের আশা প্রকাশ করছেন। তবে সবকিছুই প্রকৃতির উপর নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।
Posted ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin