শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাম্রাজ্যের ‘পাল্টা আঘাত’ ব্রিটিশ রাজনীতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট

* প্রধানমন্ত্রী সুনাকের পর এবার স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টারও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত

একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, অন্যজন পাকিস্তানি। ব্রিটেনের রাজনীতিতে তাঁরা এখন সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখ। একজন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের শীর্ষ নেতা ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী। অন্যজন স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) প্রধান ও স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার স্কটল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী। ব্রিটেনের রাজনীতিতে এখন দক্ষিণ এশীয়দের দাপট। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিটেন রাজনৈতিক বৈচিত্র্যময়তার নতুন যুগে পদার্পণ করেছে।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হামজা ইউসুফকে নিয়ে এখন তুমুল আলোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি এসএনপির নেতা নির্বাচিত হন হামজা। বুধবার তিনি স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার (মুখ্যমন্ত্রী) হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তিনি নিকোলা স্টারজিওনের স্থলাভিষিক্ত হলেন। ৩৭ বছরের হামজা স্কটল্যান্ডের প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে প্রথম সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীও।

২০১১ সালে হামজা এসএনপি থেকে স্কটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর জন্ম স্কটল্যান্ডেরই গ্লাসগোতে। লেখাপড়া গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর বাবা মিয়া মুজাফফর ইউসুফের জন্ম পাকিস্তানের পাঞ্জাবে। মা শায়েস্তা ভুট্টো জন্ম নিয়েছেন কেনিয়ার নাইরোবিতে পাঞ্জবি পরিবারে। ১৯৬০ এর দশকে হামজার পরিবার যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমায়।
অন্যদিকে, ঋষি সুনাক যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীল দলের (কনজারভেটিভ পার্টি) নেতা বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আগেই। তাঁর জন্ম যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে হলেও বাবা ইয়াশভির ও মা ঊষা সুনাক ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাঁরাও ৬০ এর দশকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন। সুনাক যখন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, তখন দেশটির রাজনীতির টালমাটাল অবস্থা। একের পর এক নেতা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রিত্ব যেন নেতা বশ না মানা ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার হওয়ার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে সুনাক এখন পর্যন্ত সফলভাবেই পদটি সামলে রেখেছেন। তিনি বরিস জনসন সরকারেই অর্থমন্ত্রী ছিলেন।

এরই মধ্যে ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেছে যুক্তরাজ্য। কিন্তু স্কটল্যান্ড চেয়েছিল ইউরোপের দেশগুলোর জোটে থাকতে। এ নিয়ে সাবেক স্কটিশ মুখ্যমন্ত্রী নিকোলা স্টারজিওন বেশ উচ্চবাচ্যও করেছেন। হামজা ইউসুফ তাঁরই ‘যোগ্য উত্তরসূরি’। বলতে গেলে স্টারজিওনের আদর্শকেই তিনি লালন করেন। হামজাও যুক্তরাজ্য থেকে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার। তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পেছনে এটাই ছিল অন্যতম মন্ত্র।

এসএনপির প্রধান হওয়ার দৌড়ে হামজা প্রতিদ্বন্দ্বী কেট ফোর্বসের ৪৮ শতাংশের বিপরীতে ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এর পেছনে রয়েছে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবি স্পষ্ট করে তুলে ধরার প্রেক্ষাপট। হামজা অঙ্গীকার করেন, ‘আমরা একজোট হবো, এমন প্রজন্ম হবো, যারা স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনবে।’ মোট কথা, হামজাকে নির্বাচিত করার পেছনে আবারও স্কটিশদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা উন্মুক্ত হয়ে সামনে এসেছে। এ ক্ষেত্রে দাবিটি যার কাছে সরাসরি যাবে, তিনি ঋষি সুনাক। সরকারপ্রধান হিসেবে তাঁকে স্কটিশদের দাবি-দাওয়া মোকাবিলা করতে হবে। স্বাধীনতার প্রশ্নে স্কটিশরা আবারও গণভোট চাইতে পারে। এ ছাড়া ব্রেক্সিট প্রশ্নে মতানৈক্য বাড়তে পারে।
যুক্তরাজ্যের রাজধানী শহর লন্ডনের মেয়র সাদিক খানও একজন দক্ষিণ এশীয়। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত লেবার দলের এ নেতা ২০১৬ সাল থেকে শহরটির মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।

গ্লাসগোভিত্তিক স্কট এলিয়ান্স ফর ইন্ডিপেন্ডেন্সের আহ্বায়ক কাসিম হানিফ মনে করেন, যুক্তরাজ্যের আগামী সাধারণ নির্বাচনকে স্বাধীনতার জন্য গণভোটে পরিণত করতে পূর্বসূরি স্টারজিওনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হামজাই উপযুক্ত ব্যক্তি।

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে ভারত ও পাকিস্তানিদের ছাড়াও শক্ত অবস্থানে আছেন বাংলাদেশিরা। এই তিনটি দেশই একসময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রাজনীতিকদের অধিকাংশই দেশটির লেবার পার্টির সমর্থক। স্কটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির এমপি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফয়সল চৌধুরী বলেন, ইউসুফের ক্ষমতায় আরোহণ দক্ষিণ এশীয়দের জন্য গর্বের। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, সংখ্যালঘু হওয়া এবং রাজনীতি করা কতটা কঠিন। এটা উদযাপন করার মতো বিষয়। আমি সত্যিই গর্বিত।’ স্কটল্যান্ডের লেবার পার্টির প্রধানও একজন এশীয়। তিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আনাস সারোয়ার। টুইটারে তাই একজন মন্তব্য করেছেন, ‘পাল্টা আঘাত হেনেছে সাম্রাজ্য।’

হামজা স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবিকে সমুন্নত রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এ দাবিকে অনেক দক্ষিণ এশীয়রাই সমর্থন করেন না। গ্লাসগোর মানবাধিকার আইনজীবী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বারলো রহমান মনে করেন, যুক্তরাজ্য অখণ্ডই থাকুক। এ কারণে তিনি এসএনপির সমর্থক নন। তবে ব্রিটেনে যে রাজনৈতিক বৈচিত্র্যতার যুগের সূচনা হয়েছে, তার প্রশংসা তিনি করেছেন।

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে প্রভাবশালী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে রোশনারা আলী অন্যতম। তিনি লেবার দলের নেতা। তিনি হাউস অব কমন্সে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ। এ ছাড়া টিউলিপ সিদ্দিক, আফসানা বেগম, রূপা হকও আছেন। দীর্ঘদিন ধরে সফলতার সঙ্গে তাঁরা সবাই লেবার পার্টির রাজনীতি করছেন। লেবাররা ক্ষমতায় গেলে তাঁরা সরকারের বড় বড় দায়িত্ব পাবেন– এমনটা বলাই যায়। আলজাজিরা, সিএনএন ও দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন অবলম্বনে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:৫৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(216 বার পঠিত)
(194 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]