
নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
অবস্থান
ইতিহাস
ঐতিহাসিকদের মতে, ১৬৮০ সালের দিকে নবাব শায়েস্তা খাঁর পুত্র উমিদ খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। এই ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় মোঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ রাজত্ব স্থাপন করেছিলেন। এটা মনে করা হয় যে, হয়তো এককালে সাত গম্বুজ মসজিদের আশপাশেই কোথাও দাঁড়িয়ে থাকতো নবাবের ঘোড়া।
এছাড়াও, রানি, রাজপুত্র, রাজকন্যারা ঘুরে বেড়াতো এখানকার পথে-প্রান্তরে, নদীতে কিনারা ঘেঁষে এবং এখানেই হয়তো দল বেঁধে ছোটাছুটি করেছে নবাবের সৈন্য-সামন্ত। সাত গম্বুজ মসজিদের পুরনো ইতিহাস এটি জানা গেলেও মোহাম্মদপুরসহ আশেপাশের কিছু এলাকায় মসজিদের ইতিহাস ঘিরে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সাত গম্বুজ মসজিদ।
কেউ কেউ ধারণা করেন, মসজিদটি ‘গায়েবি’। তবে, সময় যত পরিবর্তন হয়েছে ততই লোকেদের এমন লোককথার অবসান ঘটেছে। এছাড়াও, প্রচলিত আছে, এক সময় এ অঞ্চলে কোন ধরনের মসজিদ ছিল না এবং এক রাতের মধ্যে মসজিদটি গায়েবিভাবে দৃশ্যমান হয়। মসজিদটি গায়েবি হওয়ায় এতে কোন রঙ করা সম্ভব হয় না। যদিও এর সঠিক ব্যাখ্যা আছে।
ইতিহাসবিদদের মতে, এই মসজিদটি সিরামিক বা চুনামাটি দিয়ে বানানো। ফলে কোনো রঙ ধরার কথা না। মোঘল শাসনামল এবং তার কাছাকাছি সময়ের স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করলে বোঝা যায় সবগুলো স্থাপনার নির্মাণ কৌশল প্রায় একই ধরনের। সে সময় মসজিদটি ঘেঁষে প্রবহমান ছিল বুড়িগঙ্গা নদী। ১৮১৪ সালে স্যার চার্লস ডি ওয়াইলি সাতগম্বুজ মসজিদকে নিয়ে ছবি আঁকেন। শিরোনামে লেখা ছিল, ‘গঙ্গার শাখা নদী বুড়িগঙ্গার তীরে সাত মসজিদ’।
অভ্যন্তরভাগ
সাত গম্বুজের ছাদে রয়েছে তিনটি বড় গম্বুজ এবং চার কোণের প্রতি কোনায় একটি করে অণু গম্বুজ। এ কারণে একে সাত গম্বুজ মসজিদ বলা হয়েছে। আয়তাকার নামাজকোঠার বাইরের দিকের পরিমাণ দৈর্ঘ্যে ১৭ দশমিক ৬৮ এবং প্রস্থে ৮ দশমিক ২৩ মিটার। এর পূর্বদিকের গায়ে ভাঁজবিশিষ্ট তিনটি খিলান এটিকে বেশ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। দূর থেকে মসজিদটি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। মসজিদের ভেতরে চারটি কাতারে প্রায় ৯০ জন মুসল্লির নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অন্যদিকে, মসজিদটির পূর্বপাশে এরই অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছে একটি সমাধি। কথিত আছে, এটি শায়েস্তা খাঁর মেয়ের সমাধি। সমাধিটি ‘বিবির মাজার’ বলেও সমাদৃত। এ কবর কোঠাটি ভেতর থেকে আটকোনাকৃতি এবং বাইরের দিকে চতুষ্কোণাকৃতির। বেশ কিছুদিন আগে সমাধিক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল। বর্তমানে এটির সংস্কার করা হয়েছে। মসজিদের সামনে একটি বড় উদ্যানও রয়েছে।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সাত গম্বুজ মসজিদ।
মসজিদটিকে ঘিরে রয়েছে আরো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ পশ্চিম দিকের বিশাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসাটি শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (র.) ১৯৮৬ সালে নির্মাণ করেন। অনেকে সাতগম্বুজ মসজিদকে গায়েবি মসজিদ বলে আখ্যায়িত করে বিভিন্ন ঝাড়ফুঁকের জন্য মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাছে আসেন।
প্রসঙ্গত, একসময় মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে যেত বুড়িগঙ্গা। মসজিদের ঘাটেই ভেড়ানো হতো লঞ্চ ও নৌকা। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় তা কল্পনা করাটাও কষ্টকর। এখন বড় দালানকোঠায় ভরে উঠেছে মসজিদের চারপাশ। অনেকটাই প্রাচীন সেই সৌন্দর্য। বর্তমানে এটিকে পরিচর্যার জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে দায়িত্ব পেয়েছে।
Posted ২:৫৭ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin