শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে হাইকমিশনের জরুরি নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে হাইকমিশনের জরুরি নোটিশ

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) ফেসবুক পেজে শেয়ার করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নিয়োগের ওপর চার বছর আগে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় এবং কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের নিবিড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া যে দ্বি-পাক্ষিক সমঝোতা স্মারক সই হয়, এটা তারই ফলশ্রুতি।

পরে ২০২২ সালের ২ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়। এরপর দুই দেশের সংশ্লিষ্ট অফিস সমূহে প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কিং হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার স্থাপনপূর্বক আনুমানিক ২০২২ সালের আগস্টে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়।

সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ লেবার ডিপার্টমেন্ট ৮ হাজার ৭২৭টি নিয়োগের ডিমান্ডের বিপরীতে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯২ বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। এরই মধ্যে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৫ নতুন কর্মী মালয়েশিয়ায় এসে পৌঁছেছে।

 

বাকি প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর আসাটা প্রক্রিয়াধীন আছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় আনুমানিক মোট পাঁচ লাখ নতুন বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থান হবে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন আশা করছে।

এদিকে মালয়েশিয়ায় আসার পর কিছু বিদেশি কর্মী সঠিক কাজ পাচ্ছে না বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্যক্তিগত সোর্স থেকে জানা গেছে। এর মধ্যে কিছু বাংলাদেশি কর্মীও সমস্যায় পড়েছে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন অবহিত হয়েছে।

এ বিষয়ে হাইকমিশন নিজস্ব উদ্যোগে এবং মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কিছুসংখ্যক কর্মীকে কাজ দিতে নিয়োগকর্তাকে বাধ্য করতে সমর্থ হয়েছে। বাকি কর্মীদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে কিছুটা আলোকপাত করা প্রয়োজন বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন মনে করে। মালয়েশিয়া সরকারের বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হলে একজন কর্মীও কর্মহীন হবার কথা নয়।

কারণ, মালয়েশিয়ায় সারা দেশব্যাপী লেবার ডিপার্টমেন্টের শাখা-প্রশাখা রয়েছে। একমাত্র তারা যদি সঠিক যাচাই-বাছাই করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন অনুমোদন করেন তাহলেই বিদেশি কর্মীদের সঠিক চাকরি, কর্ম পরিবেশ, আবাসন ও মজুরি নিশ্চিত হবে।

তাছাড়াও, মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী দেশি-বিদেশি সব কর্মীর আইনগত সব অধিকার নিশ্চিতের দায়িত্ব লেবার ডিপার্টমেন্টের ওপর এবং সে লক্ষ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে সাংগঠনিক ও আইনগত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কোনো দেশের দূতাবাসের পক্ষেই শতভাগ যাচাই-বাছাই করে কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড সত্যায়ন করা সম্ভব নয়।

এক্ষেত্রে, দূতাবাসকে আবশ্যিকভাবে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করতে হবে। এটা বাংলাদেশসহ সব সোর্সিং কান্ট্রির দূতাবাসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

বাংলাদেশ দূতাবাস আনুমানিক ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সঠিক আছে কি-না সে সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ডিমান্ড সত্যায়ন করে থাকে।

বাকি আনুমানিক ৫ ভাগ ডিমান্ডের বিপরীতে দূতাবাস নিয়োগকর্তার অফিস/প্রজেক্ট সাইট ইত্যাদি ভিজিট করে সত্যায়ন করে থাকে। শতভাগ প্রজেক্ট /ফ্যাক্টরী তথা হাজার হাজার নিয়োগ প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে ভিজিট করা দূতাবাসের পক্ষে বাস্তবিকভাবেই অসম্ভব।

মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের পক্ষেই একমাত্র সম্ভব। তাই, মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের ছাড়পত্রের ওপর আস্থা রেখে শ্রমিক পাঠানোটাই যুক্তিসংগত এবং শ্রমিক পাঠানো অন্যান্য সব দেশ এটাই করছে।

তাছাড়া, শতভাগ প্রজেক্ট দূতাবাস ভিজিট করে ডিমান্ড সত্যায়ন করতে হলে কর্মী আসার গতি এতই ধীর হবে যে, যেটা কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। অপরদিকে, প্রতিযোগী দেশসমূহ সেই সুযোগ গ্রহণের কারণে বাংলাদেশ তার যথাযথ সুফল থেকে বঞ্চিত হবে।

তবে, এক্ষেত্রে ডিমান্ড সংগ্রহকারী বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিসমূহ তাদের মালয়েশিয়ার সহযোগী এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগকর্তার সঠিকতা এবং বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের সক্ষমতা যথাযথভাবে যাচাই করার পর শ্রমিক প্রেরণের কার্যক্রম গ্রহণ করলে শ্রমিকদের কর্মহীনতার ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে সতর্ক করেছে, যাতে দূতাবাস কোনো প্রজেক্ট সাইট/কোম্পানি সরেজমিনে যাচাই করতে না যায়।

কূটনৈতিক পত্রে তারা জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার যে কোনো কোম্পানি পরিদর্শনের একমাত্র এখতিয়ার মালয়েশিয়ার লেবার ডিপার্টমেন্টের। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক সভায়ও বিষয়টি বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে এবং কর্মী নিয়োগের ডিমান্ডের যথার্থতা নিশ্চিতের দায়িত্ব মালয়েশিয়ার সরকারের বলে মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চতর প্রতিনিধি বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনকে কোম্পানী ভিজিট থেকে বিরত থাকার জন্য পুনরায় বলা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় আসার পর কাজ না পাওয়া কর্মীর সংখ্যা মোট আগত কর্মীর তুলনায় খুবই কম এবং এটি এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণযোগ্য সীমার মধ্যে রয়েছে। এটিা শুধু বাংলাদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রেই হচ্ছে না, নেপাল ও মিয়ানমার সহ অনেক দেশের শ্রমিকও এ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।

বাংলাদেশি কর্মীদের নতুন নিয়োগকর্তার অধীনে নিয়োগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ পরিস্থিতির অবনতি না হয়, সে বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে তারা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে করে বৈধভাবে আগত একজন বাংলাদেশি কর্মীও মালয়েশিয়াতে বিড়ম্বনার শিকার না হয়।

মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগ এবং ব্যবস্থাপনার বাস্তবতার বিষয়টি সব সচেতন মহল সম্যক অবহিত আছেন। মালয়েশিয়ার নতুন সরকার এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশকে অবহিত করেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের দীর্ঘদিনের পুরানো ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও অধিকতর সচ্ছতা নিশ্চিতে মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনাকে বাংলাদেশ হাইকমিশন সাধুবাদ জানাচ্ছে।

বাংলাদেশ হাইকমিশন বিশাল এ কর্মযজ্ঞ পূর্ণ আন্তরিকতা ও সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর। লক্ষ্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীর নিরাপদ অভিবাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে।

এক্ষেত্রে, কর্মীদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে সব চ্যালেঞ্জকে বিবেচনায় রেখে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন শ্রমিক নিয়োগের ডিমান্ডসমূহের অনুমোদনের সত্যতা এবং নিয়োগকারীর সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু কোম্পানি সরেজমিনে তদন্তের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ কার্যক্রম পরিচালনায় হাইকমিশনের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় কোনো প্রকার শিথিলতাকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে না।

মহৎ এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ হাইকমিশন সব সচেতন মহল এবং সব অংশীজনের যথাযথ দায়িত্ববোধ, পূর্ণ আন্তরিকতা ও সহায়তা প্রত্যাশা করে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:৩৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]