
দয়াল কুমার বড়ুয়া | মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটের আগুনের পেছনে নাশকতার কালো হাত জড়িত কি না তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে বিভিন্ন মহলে। ৪ এপ্রিল পুড়ে ছাই হয়েছে দেশের বৃহত্তম পাইকারি ও খুচরা বস্ত্র বিপণি কেন্দ্র বঙ্গবাজার। তার রেশ না কাটতেই নিউ সুপার মার্কেটের আগুন জনমনে সংশয় আর আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ৪ থেকে ১৫ এপ্রিল মাত্র ১২ দিনের ব্যবধানে সংঘটিত দুটি অগ্নিকান্ডের মধ্যে কি কোনো যোগসূত্র আছে?
বঙ্গবাজারের ১২ দিন পর পুড়েছে রাজধানীর সব শ্রেণির মানুষের কেনাকাটার অন্যতম আস্থার ঠিকানা নিউ সুপার মার্কেট। বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত ভোর ৬টা ১০ মিনিটে আর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লেগেছে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে। কাকডাকা ভোরে অনেকটা একই সময়ে দুটি প্রলয়ঙ্করী অগ্নিকান্ড ভাবিয়ে তুলছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়কেও। ঈদের আগে বেচাকেনার জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি ছিল ব্যবসায়ীদের। সবকিছু ভন্ডুল করে দিয়েছে আগুন। অগ্নিনির্বাপণ বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন ফাইলবন্দিই থেকে যায় বছরের পর বছর। কমিটির সুপারিশগুলোও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আলোর মুখ দেখে না। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া এবং সুপারিশমালা বাস্তবায়িত না হওয়ায় নাশকতাকারীরাও উৎসাহিত হয়। আমাদের দেশে নাশকতা নতুন কিছু নয়। স্বাধীনতার পর শুরু হয়েছিল নাশকতার বহু ঘটনা। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সে সময়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান মাধ্যম পাটের একের পর এক গুদাম। ২০১৪ সালে সরকার পতনের লক্ষ্যে শুরু হয় আগুনসন্ত্রাস। আগুন নিয়ে খেলা কখনো এর কুশীলবদের জন্য কল্যাণকর হয়নি। লঙ্কার আগুনে মুখ পুড়ে গিয়েছিল এর হোতা হনুমানের। আমাদের দেশেও যারা আগুন নিয়ে খেলা করেছে তাদের পরিণাম সবার জানা। বঙ্গবাজার এবং নিউ সুপার মার্কেটের অগ্নিকান্ডের পেছনে নাশকতা থাকলে তার হোতাদের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন করা সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।
ঈদের আগে বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ১১ দিনের মাথায় ঢাকা নিউ মার্কেটের পাশে নিউ সুপার মার্কেটে এই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে ছয় শতাধিক দোকান। মার্কেট বণিক সমিতি বলছে, আগুনের তাপ ও আগুন নেভানোর জন্য ব্যবহৃত পানিতে আরো ১০০ দোকানের মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কী কারণে আগুন লাগল, তা তাত্ক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে রাতে বা ভোরে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড অসতর্কতার জন্য নাকি অন্য কোনো কারণ রয়েছে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন মার্কেটে ধারাবাহিক আগুনের ঘটনা ষড়যন্ত্র বা নাশকতা কি না তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াতের কোনো যোগসূত্র আছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখার জন্য বলেছেন তিনি। ভোরের দিকে আগুন লাগার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ঈদের আগে মার্কেট ও বিপণিবিতানে দফায় দফায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ‘নাশকতার’ সন্দেহের কথা বলেছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকও। এ ঘটনাগুলো তদন্ত করে দেখতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। নিউ সুপার মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ব্যবসায়ীও বলেছেন, তাঁদের সন্দেহ, কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরাও প্রায় একই সময়ে বঙ্গবাজার ও নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের ঘটনা ঘটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁরা মনে করেন, প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য এর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে নানা কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে নাশকতাও একটি কারণ হতে পারে।
পুলিশের পক্ষ থেকে তারা সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করবে। এগুলো নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গভীর রাতে অথবা শেষরাতের দিকে অগ্নিকাণ্ড সন্দেহের উদ্রেক করবে, এটাই স্বাভাবিক। একের পর এক কেন আগুন লাগছে? আমরা মনে করি, নাশকতার বিষয়টি মাথায় রেখে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আমাদের বিশ্বাস, আমাদের চৌকস সংস্থাগুলো নিশ্চয় কারণ খুঁজে বের করতে পারবে।
লেখক: কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ, সভাপতি, চবি অ্যালামনাই বসুন্ধরা।
Posted ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin