শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মে দিবসের মূল ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ০১ মে ২০২৩ | প্রিন্ট

মে দিবসের মূল ইতিহাস

শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষায় আজ ১ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব শ্রমিক দিবস’ বা ‘মে দিবস’।
১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার মেহনতী শ্রমিকশ্রেণি দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবীসহ আরো কয়েকটি ন্যায্য দাবী ও অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জীবন বিসর্জন দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব শ্রমিক আন্দোলনের সূচনা করেছিল।

১ মে’র ঐ ধর্মঘট দিবসের আগে যুক্তরাষ্ট্র বা বিশ্বের কোথাও শ্রম আইন ছিল না। শ্রমিকদের মানবিক ও অর্থনৈতিক অধিকার বলতেও কিছু ছিল না। তারা ছিল মালিকদের দাস মাত্র। তাদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা ছিল না। ছিল না সাপ্তাহিক কোনো ছুটি। ছিল না চাকরির স্থায়িত্ব ও ন্যায়সঙ্গত মজুরির নিশ্চয়তা। মালিকরা তাদের ইচ্ছামত শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিত।

এমনকি দৈনিক ১৮-২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতেও বাধ্য করত শ্রমিকদের। এ অন্যায়, বঞ্চনা ও জুলুমের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকরা পর্যায়ক্রমে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার’এর ১৮৮৫ সালের সম্মেলনের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবীতে ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকা ও কানাডার প্রায় তিন লক্ষাধিক শ্রমিক শিকাগোর ‘হে মার্কেটে’ ঢালাই শ্রমিক, তরুণ নেতা এইচ সিলভিসের নেতৃত্বে এক বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে সর্বপ্রথম সর্বাত্মক শ্রমিক ধর্মঘট পালন করে।

শ্রমিকদের সমাবেশ চলাকালে মালিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী পুলিশ ও কতিপয় ভাড়াটিয়া গুন্ডা সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে অতর্কিতভাবে গুলী চালিয়ে ৬ জন শ্রমিককে নৃশংসভাবে হত্যা ও শতাধিক শ্রমিককে আহত করে। কিন্তু এতেও শ্রমিকরা দমে যায়নি। শ্রমিকদের ইস্পাতকঠিন ঐ সফল ধর্মঘটের কারণে কোনো কোনো মালিক ৮ ঘণ্টা কর্ম সময়ের দাবী মেনে নিতে বাধ্য হয়। ফলে শ্রমিকরা আরো উৎসাহী ও আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে এবং সর্বস্তরে ৮ ঘণ্টা কর্ম সময়ের দাবী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২ মে রোববারের সাপ্তাহিক বন্ধের দিনের পর ৩ তারিখেও ধর্মঘট অব্যাহত রাখে।

ঐ নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত ৪ মে শিকাগো শহরের ‘হে’ মার্কেটের বিশাল শ্রমিক সমাবেশে আবারো মালিকগোষ্ঠীর গুন্ডা ও পুলিশ বাহিনী বেপরোয়াভাবে গুলী বর্ষণ করে। এতে ৪ জন শ্রমিক নিহত ও বিপুল সংখ্যক আহত হয়। রক্তে রঞ্জিত হয় ‘হে’ মার্কেট চত্বর। গ্রেফতার করা হয় শ্রমিক নেতা স্পাইজ ও ফিলডেনকে। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পর শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে রীতিমত ‘চিরুনী অভিযান’ চালিয়ে শিকাগো শহর ও এর আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী ফিশার, লুইস, জর্জ এঞ্জেল, মাইকেল স্কোয়ার ও নীবেসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক নেতাকে।

পরবর্তীতে শ্রমিকদের এই ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের বিরোধিতাকারী মালিকপক্ষের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ‘জুরি’ গঠন করে ১৮৮৬ সালের ২১ জুন শুরু করা হয় বিচারের নামে প্রহসন। একতরফা বিচারের মাধ্যমে ১৮৮৬ সালের ৯ অক্টোবর ঘোষিত হয় বিচারের রায়। রায়ে বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে শ্রমিক নেতা পার্সন্স, ফিলডেন, স্পাইজ, লুইস, স্কোয়ার, এঞ্জেল ও ফিশারের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হয় এবং ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর সে আদেশ কার্যকর করা হয়।
শ্রমিক নেতা ও কর্মী হত্যার এ দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে প্রতিবছর ১ মে ‘শ্রমিক হত্যা দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কার্য সময় ও সপ্তাহে এক দিন সাধারণ ছুটি প্রদানের ব্যবস্থা করে প্রথম শ্রম আইন প্রণীত হয়।

অন্যদিকে নারকীয় এ হত্যাযজ্ঞ গোটা বিশ্বের শ্রমিকদের অধিকারে এনে দেয় নতুন গতি। শিকাগো শহরে সৃষ্ট এ আন্দোলন ক্রমশ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। পৃথিবীর সব শ্রমজীবী মানুষ এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয় ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ শ্লোগানটি। সেই সঙ্গে ১৩৭ বছর আগে ঘটে যাওয়া সে ঘটনাটির কথা এখন প্রতিবছর বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্মরণ করা হয়ে থাকে ‘বিশ্ব শ্রমিক দিবস’ বা ‘মে দিবস’ হিসেবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০১ মে ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]