নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৬ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
ময়মনসিংহের নান্দাইলে প্রতিদিন জমে শ্রমিক বা কামলা হাট। উপজেলা সদর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর হেমগঞ্জ বাজার সংলগ্ন ঝালুয়া ব্রিজের ওপর প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত জমজমাট থাকে এ শ্রমিক হাট।
দূর-দুরান্ত থেকে অটোরিকশা, ইজিবাইক, লেগুনা, টমটম গাড়ি করে ফজরের আজানের পরপর শ্রমিকরা এই ব্রিজের ওপর এসে জমায়েত হয়। সেই সঙ্গে নান্দাইলসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে গৃহস্থ, খামারি ও ঠিকাদাররা আসেন এখানে। এরপর চলে দরদাম প্রত্যেকেই তাদের চাহিদামত শ্রমিক নিয়ে চলে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে। সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে সমাপ্তি ঘটে এ শ্রম বাজারের।
স্থানীয় বাসিন্দা আলী আকবর জানান, অন্তত ৩০ বছর ধরে এই কামলা হাটের সূচনা হয়েছে। প্রথম দিকে ৫-৬ বছর স্থানীয় শ্রমিকরা বিশেষ করে ধান কাটা ও লাগানোর মৌসুমে ভোর বেলা এখানে এসে জড়ো হতো, তখন স্থানীয় গৃহস্থরা দরদাম করে তাদের কিনে নিত। এরপর থেকে আস্তে আস্তে এই কামলা (শ্রমিক) বাজারের বিস্তৃতি ঘটতে থাকে।
তিনি আরো বলেন, ধান কাটা ও লাগানোর মৌসুমে পাশ্ববর্তী ঈশ্বরগঞ্জ, হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও শ্রমিকরা এই বাজারে আসতে শুরু করেন। ফলে এই বাজারের প্রচার প্রসার বৃদ্ধি পেতে থাকে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলতি বোরো ধান কাটা মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত ৩-৪ হাজার শ্রমিক এই হাটে জমায়েত হয়। প্রথমদিকে চাহিদা বেশি থাকায় দৈনিক ১২’শ টাকা মজুরিতে একেক জন শ্রমিক বিক্রি হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার লক্ষীগঞ্জ এলাকা থেকে আসা শ্রমিক জালাল উদ্দীন বলেন, আমি ৬-৭ বছর ধরে এই কামলার হাটে আসি। এখানে এলে কোনো না কোনো কাজ পেয়ে যাই, আর দামও পাই ভালো।
গিয়াস উদ্দিন নামে এক গৃহকর্তা জানান, প্রথমদিকে তাকে ১২’শ টাকা দৈনিক মজুরিতে টানা ৮-১০ দিন ধান মাড়াইয়ের জন্য একজন শ্রমিক কিনতে হয়েছে। এরপর চাহিদা কমতে থাকায় ১ হাজার, পরবর্তীতে ৭-৮’শ টাকা এখন ৫-৬’শ টাকায় শ্রমিক কিনতে পারছেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আতিক হাসান বাবুল বলেন, নান্দাইল ছাড়াও আশপাশের জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে এবার অন্তত ১ হাজার শ্রমিক এই হাটে তাদের শ্রম বিক্রি করতে এসেছে। তারা হেমগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন পরিত্যক্ত দোকান, সবজি শেড, বড় মার্কেটের বারান্দা এমনকি পাশেই অবস্থিত নান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের বারান্দায় তারা রাত্রি যাপন করে। তাদের টাকাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থানীয়রা সহযোগিতা করেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন কাজল জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে এখানে কামলা (শ্রমিক) হাট জমে। ধান রোপণ ও কাটার সময় প্রতিদিন কয়েক হাজার শ্রমিক এই ব্রিজে আসে। এমনিতে সারা বছর প্রতিদিন ১৫-২০ জন বা তার বেশি কর্মজীবি শ্রমিক এখানে আসে।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে আমি কখনো যাইনি। তাদের জন্য সরকারিভাবে সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করার মতো কোনো উদ্যোগ এই মুহূর্তে নেই।
Posted ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৬ মে ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin