নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৮ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
সমাবর্তন- বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে একটি স্বপ্নের অনুষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডিগ্রি নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার সমাপন ঘটে এ আয়োজনের মাধ্যমে। এদিন ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর হাতে সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল। এরপর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন সমাবর্তন আয়োজন করা হয়নি। অথচ এই ছয় বছরে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে এগারতম ব্যাচের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী।
আগামী ৯ মে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পদার্পণ করতে যাচ্ছে ১৮ তম বছরে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৮ বছরে মাত্র একবার সমাবর্তন অনুষ্ঠান হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তাদের বক্তব্য জেনেছেন ডেইলি বাংলাদেশের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহসান হাবীব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সার্বজনীন করতে নিয়মিত সমাবর্তনের বিকল্প নেই
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে এগিয়ে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সারাদেশে সরকারি, বেসরকারি, আধা-সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সফলতার সঙ্গে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও সুনাম সর্বত্রই প্রতিষ্ঠিত করছে। কিন্তু, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও সুনাম সার্বজনীন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সমাবর্তনের বিকল্প নেই। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পর্যন্ত ২০১৭ সালে একবার সমাবর্তনের সুযোগ পেয়েছিল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রথম সমাবর্তনে প্রথম ব্যাচ থেকে পঞ্চম ব্যাচের মোট ১ হাজার ৩৯৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭-৮টি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সমাবর্তনের কোন উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া হচ্ছে না।
অথচ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা জরুরি তা সবারই জানা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য মহোদয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচার, প্রসারের জন্য অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সমাবর্তন সংশ্লিষ্ট কোন নিয়েছেন কি-না সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে বিষয়টি জানতে ইচ্ছে করে। তার কাছে বিনীত অনুরোধ আপনার দায়িত্বে যেন অন্তত বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শিক্ষার্থীরা একটা সমাবর্তন পায়।
শহিদুল ইসলাম
প্রাক্তন শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
শিক্ষাবর্ষ: ২০১১-১২
সমাবর্তনের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছি
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ব্যাচ আর চারুকলার তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সময় ছয় বছর। অর্থাৎ ৪ বছর স্নাতক আর ২ বছর স্নাতকোত্তর হওয়া স্বত্বেও আমরা ৯ বছর ৮ মাস ১৪ দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিসমাপ্তি করি। তবুও বলতে পারব না পরিসমাপ্তি ঘটেছে। কেননা, সমাবর্তনের স্বপ্ন তো এখনো রয়েই গেল।
আমরা ২০১৭ সালে প্রথম ব্যাচ থেকে পঞ্চম ব্যাচের সমাবর্তন দেখেছিলাম কিন্তু আমরা ষষ্ঠ ব্যাচ। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ১৬তম ব্যাচ চলছে, তবুও আমাদের নিচে আরও অনেক ব্যাচ আস্তে আস্তে বের হয়ে যাচ্ছে, তবুও সমাবর্তন নামক সেই শব্দটা যেন আমরা দূর থেকেও শুনতে পাই না। আশায় আছি এখনো- হয়তোবা শুনব। সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছি।
শর্মিষ্ঠা রায়
সাবেক শিক্ষার্থী, চারুকলা অনুষদ
শিক্ষাবর্ষ: ২০১১-১২
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছরই হয়, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন নয়!
আমাদের প্রথম ও একমাত্র সমাবর্তনে মোট পাঁচটি ব্যাচ অংশ নিয়েছে। বেশকটি ব্যাচ তখন পাশ করলেও তারা অংশগ্রহণ করতে পারেনি। দীর্ঘদিন পরপর সমাবর্তন আয়োজন করলে এই সমস্যাটি হয়। ২০১৭ সালের পরে আর কোনো সমাবর্তন না হওয়ায় বেশ কয়েকটি ব্যাচ সমাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছে। সুতরাং এখন সমাবর্তন অনুষ্ঠান সময়ের দাবি। এখন এটি আয়োজিত না হলে পরবর্তীতে পাশ করা ব্যাচের সংখ্যা বেড়ে যাবে, পাশ করেও অনেকে সমাবর্তনে অংশ নিতে পারবে না। যেটি দুঃখের বিষয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে সমাবর্তন একটি স্বপ্নের মত। গাউন পরে, টুপি উড়িয়ে উদযাপন করা, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সনদ গ্রহণ করা অন্যরকম এক অনুভূতি। এখানে আমাদের অভিভাবকরাও এসে থাকেন। সাবেক শিক্ষার্থী, বর্তমান শিক্ষার্থী, ছাত্র-শিক্ষক নির্বিশেষে সবাই সবার চিন্তা-চেতনা শেয়ার করতে পারেন। সবার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অনুষ্ঠানটি নিয়মিত হয়ে থাকে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন তার ব্যতিক্রম হবে!
আমি সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে কর্মরত আছি। এখানে আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আমি বুঝতে পেরেছি যে এই অনুষ্ঠানটির মর্যাদা-আনন্দ কতটুকু হয়ে থাকে। তাই ছাত্রী হিসেবে আমারও ইচ্ছে করে, আমি যদি আমার সমাবর্তন অনুষ্ঠান পেতাম! আমার বন্ধুবান্ধব, ছাত্র-শিক্ষার্থী জুনিয়রদের সঙ্গে একত্রিত হতে পারতাম! অনেক ভিউ থর্ট শেয়ার করতে পারতাম! তাহলে নিজেকে অনেক ধন্য বলে মনে করতাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য মহোদয়কে অনুরোধ করব, খুব শিগগিরই একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হোক।
মাহনুমা রহমান রিন্তী
সাবেক শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
শিক্ষাবর্ষ: ২০১২-১৩
দুই সমাবর্তনের মধ্যে যেন পিতা-পুত্রের বয়স সমান ব্যবধান!
বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটা গ্লোবাল বা বৈশ্বিক। শিক্ষা ও গবেষণার যথার্থ প্রচার-প্রসার, বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ও গবেষণাভিত্তিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা এবং সাধ্যমত কাছাকাছি একটা সময়ে সমাবর্তনের ব্যবস্থা করা।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেমন গবেষণা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের দিকে খেয়াল রাখা উচিৎ, তেমনি সমাবর্তন আয়োজনের ধারাবাহিকতার দিক থেকেও বিশ্বমান বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিত। সমাবর্তন হচ্ছে শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান। বহির্বিশ্বে যেখানে প্রতিবছর সমাবর্তন আয়োজনের রীতি রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হাঁটছে এর ভিন্ন পথে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও ঘটেছে এই ঘটনা। শিক্ষাঙ্গনটির বয়স প্রায় দেড় যুগ। এত বছর গেলেও সবে মাত্র একটি সমাবর্তন হয়েছে- যা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বেমানান। এক সমাবর্তন থেকে আরেক সমাবর্তনের ব্যবধান বিশাল। পিতা-পুত্রের অঙ্কের মত পিতা-পুত্রের ব্যবধান সমান দূরত্বে সমাবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আমার মত অনেকেরই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হওয়ার পর অনেকদিন কেটে গেল।
এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া- দ্রুত আমাদের সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হোক।
নিলয় মাহমুদ রুবেল
সাবেক শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ
শিক্ষাবর্ষ: ২০১২-১৩
নিয়মিত সমাবর্তন যেন সোনার হরিণ!
২০১৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর কেটে গেছে ছয়টি বছর। আর কোনো সমাবর্তন আয়োজন করা হয়নি। অথচ উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবছর সমাবর্তন আয়োজিত হয়। সমাবর্তন হলো আমাদের মত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দঘন বিদায়। এটি আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু, উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ছাড়তে হচ্ছে মূল সনদ ছাড়াই। সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের জন্য উৎসাহ যোগায় বলে আমি মনে করি। কিন্তু, নিয়মিত সমাবর্তন এখন আমাদের কাছে সোনার হরিণ। সঠিক সময়ে সমাবর্তন হোক- এটা আমরা চাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত যতদ্রুত সম্ভব সমাবর্তনের আয়োজন করা।
শাহীনূর রহমান
সাবেক শিক্ষার্থী, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
শিক্ষাবর্ষ:২০১৫-১৬
সমাবর্তন আয়োজন করে ক্যাম্পাসে প্রাণের সঞ্চার করা হোক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পার হয়ে গেলেও সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র একটি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ১০টি ব্যাচ অনার্স ও মাস্টার্স দুটোই শেষ করছে বহুদিন। ১১ ও ১২ তম ব্যাচও অনার্স শেষ করেছে। এর মধ্যে শুধু প্রথম পাঁচটি ব্যাচ সমাবর্তন পেয়েছে। এখন ছয়-সাতটি ব্যাচ রয়েছে দ্বিতীয় সমাবর্তনের অপেক্ষায়। এর আগে বেশ কয়েকবার সমাবর্তন হবে বলে আশ্বস্ত করা হলেও এখন অবধি এর কোনো ফলাফল দেখা মেলেনি। আশা করছি, বর্তমান উপাচার্য বিষয়টি আমলে নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে একটি সুন্দর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র যে সনদ হাতে পাবে তা নয়, পাশাপাশি সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলারও দেখা মিলবে এই শিক্ষাঙ্গনে। ক্যাম্পাসে প্রাণের সঞ্চার হবে।
লামিয়া খন্দকার
শিক্ষার্থী, চারুকলা অনুষদ
শিক্ষাবর্ষ: ২০১৪-১৫
Posted ৮:২১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৮ মে ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin