নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১০ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
বিশ্বের অন্যতম বৈষম্যপূর্ণ অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নানা ক্ষেত্রে এই বৈষম্য রয়েছে। অথচ সমতা কেবল ন্যায্যতার দাবিই নয়, অগ্রগতির জন্যও প্রয়োজন। বৈষম্যের কারণে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ কমে যায়। মানবপুঁজি গঠনে বাধা তৈরি হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ভুল পথে নিয়ে যায়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন প্রয়োজন।
সামাজিক অগ্রগতি বিষয়ে সাউথ এশিয়া ইকোনমিক পলিসি নেটওয়ার্ক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে এই সম্মেলন শুরু হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবং ব্র্যাক ইনিস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিজিআইডি) যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এটি এ ধরনের ১১তম সম্মেলন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত সামাজিক অগ্রগতির প্রয়োজন। সেজন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে প্রতিটি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি বলেন, সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় বিকশিত করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। জীবনমানের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বৈষম্য ও দারিদ্র্য দূর করতে হবে। তিনি বলেন, বৈষম্য নিরসনে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই দেশের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত হবে।
স্পিকার বলেন, সরকার কৃষকের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মেয়েদের জন্য উপবৃত্তি, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামারসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেছে। আইসিটি ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ হয়ে তরুণদের অনেকে এখন ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছে। সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির ফলে সামাজিক অগ্রগতি সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং কার্যকর সংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, জনমিতিক লভ্যাংশের পূর্ণ সুবিধা নিতে নারী-পুরুষ সবাইকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হতে হবে। তাহলেই টেকসই সামাজিক অগ্রগতি নিশ্চিত হবে।
আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন– শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রই দক্ষিণ এশিয়ায় বৈষম্য সুস্পষ্ট। বৈষম্য প্রতিভা বিকাশ ও মানবপুঁজি গঠনে বাধা তৈরি করে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ভুল পথে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, আন্তঃপ্রজন্ম গতিশীলতায় সারা বিশ্বের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। মা-বাবার ন্যূনতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল এমন সন্তানের হার এ অঞ্চলে ৯ শতাংশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা আরও কম, মাত্র ৮ শতাংশ। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, আয় ও ভোগ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে অবশ্যই আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা প্রসঙ্গে আবদুলায়ে সেক বলেন, বৈষম্য কমানোর উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাংক ৪০০ কোটি ডলার ঋণ সহযোগিতা দিয়েছে। এ সহায়তা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে বিজিআইডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগের ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের বৈষম্য দেখা যায়, যা সুবিচার-দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থি। দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে বড় ধরনের বাধা হিসেবে কাজ করছে অনাকাঙ্ক্ষিত এই বাস্তবতা।
তিনি বলেন, সামাজিক অগ্রগতিতে পিছিয়ে থাকার অর্থ হচ্ছে সামাজিক সুবিচারের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়া। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য চিহ্নিত করতে এ সম্পর্কিত নীতিগ্রহণ প্রয়োজন। সমতার পরিবেশ তৈরিতে যা সহায়ক হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতেও তা সহায়তা করতে পারে। এ জন্য রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের চিফ ইকোনমিস্ট হ্যান্স টিমার বলেন, সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য কমানো এবং অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়ানো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কিত বিষয় রাজস্ব আদায় বাড়ানোরও একটি অংশ।
সম্মেলনের দু্ই দিনে মোট কর্ম অধিবেশন ১০টি। এতে ২০টির মতো প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। বিশ্বব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, উচ্চ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা এসব প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন। আজ বুধবার এ সম্মেলন শেষ হচ্ছে।
Posted ৩:৫৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১০ মে ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin