বুধবার ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এডিপির আকার তেমন বাড়ছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩ | প্রিন্ট

এডিপির আকার তেমন বাড়ছে না

উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে ব্যয় সংকোচন নীতি আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকছে। এ ছাড়া আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নতুন প্রকল্প গ্রহণ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ এবং নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া হয়নি। বরং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের বিশ্ববাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে চলতি অর্থবছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিও। এসব কারণে নতু এডিপি তেমন বাড়ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকারের চেয়ে আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার মাত্র ৩.৬ শতাংশ বাড়ানো  হচ্ছে।  চলতি অর্থবছর এ বৃদ্ধির হার ছিল ৯.২০ শতাংশ। নতুন এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। এ অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির চেয়ে নতুন এডিপিতে মাত্র ৮ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা যোগ হচ্ছে; যা গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে বেশি আছে ২০ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা।

নতুন এডিপিতে উন্নয়ন সহযোগীদের মাধ্যমে আসা বিদেশি ঋণের পরিমাণও কমছে ৩ হাজার কোটি টাকার মতো। আসন্ন অর্থবছরে ৯০ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ ধরা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য, সংশোধিত এডিপিতে এ আকার ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
কম বরাদ্দ সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‌‘বাস্তবতা হচ্ছে, বরাদ্দ দেওয়া অর্থও খরচ করা সম্ভব হয় না। ব্যবস্থাপনা সমস্যা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ আরও কিছু কারণে উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না। এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। রাজস্ব আয়ও তেমন বাড়ানো যাচ্ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক কিছুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ফলে অর্থ সংকটের মধ্যে এডিপিতে বাস্তবায়ন অযোগ্য বরাদ্দের যুক্তি থাকতে পারে না। যতটুকু বরাদ্দ, তা যেন যথাযথ এবং সঠিক সময়ে বাস্তবায়িত হয় সেদিকে গুরুত্ব দেবে সরকার।’

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সরকারি বরাদ্দের বাইরে বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহতায়তা বা থোক বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৪ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং সিটি করপোরেশনগুলোর নিজস্ব বরাদ্দ ১১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। এ তিন খাত হিসাবে নিলে আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে চলতি অর্থবছর মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে আগামী অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সূত্র। পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মলেন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। এতে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত করা খসড়া এডিপি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হবে।

সূত্র আরও জানায়, আগামী অর্থবছরের এডিপির জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোর যে চাহিদা ছিল, তা আমলে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
নতুন এডিপিতে প্রকল্প প্রস্তাবের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন কিছু নির্দেশনা দেয় গত মার্চে। এতে বলা হয়, নতুন প্রকল্প নেওয়ার চেয়ে চলমান প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় একান্ত অপরিহার্য এবং উচ্চ অগ্রাধিকার না হলে সরকারি অর্থায়নে নতুন প্রকল্প নেওয়া যাবে না। তবে বৈদেশিক ঋণের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে, এমন নতুন প্রকল্প ও বরাদ্দে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অগ্রাধিকার দিতে হবে খাদ্য নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গত ১ মার্চের একনেক সভায় চলতি অর্থবছর সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্প কোনোভাবেই আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিশনের নির্দেশনায়ও সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত এডিপির খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। দ্বিতীয় বড় বরাদ্দ ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা পাচ্ছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিভাগ। ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে শিক্ষা খাত। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর যা ছিল ১৬ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা।

সাধারণত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এডিপি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এএমএস) মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়ে থাকে। প্রস্তাবে থাকে প্রকল্পের বরাদ্দ ও প্রকল্প নেওয়ার ব্যাখ্যা। পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যাচাই-বাছাই এবং প্রয়োজনে সংশোধন করে কার্যক্রম বিভাগে পাঠায়। এরপর কার্যক্রম বিভাগের মাধ্যমে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে যায়। অর্থ বিভাগের মনিটরিং ও সম্পদ কমিটি সার্বিক পরিস্থিতি এবং সরকারের উন্নয়ন দর্শনের ভিত্তিতে এডিপির আকার নির্ধারণ করে পরিকল্পনা কমিশনকে জানায়। দুই মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবিত এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]