নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে গঠিত নিরাপত্তা জোট কোয়াডের শীর্ষ সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে সিডনিতে ওই চার দেশের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এশিয়া সফর সংক্ষিপ্ত করায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঋণ সংকটের জন্য বাইডেনকে এশিয়া সফরসূচি কাটছাঁট করে ওয়াশিংটনে ফিরতে হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। বুধবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেন, জাপান সফরের সময় কোয়াডের আলোচনা সেরে নেওয়া হবে। কোয়াড গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, আলোচনা শীর্ষ পর্যায়ের হোক। খবর সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমসের।বাইডেন, আলবেনিজ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার ২৪ মে অনানুষ্ঠানিক নিরাপত্তা সংলাপে বসার কথা ছিল। অঞ্চলটিতে চীনের উত্থান ঠেকানোর পদক্ষেপ হিসেবে কোয়াডকে বিবেচনা করা হয়। শুক্রবার জাপানের হিরোশিমায় শুরু হতে যাওয়া জি-৭ সম্মেলনের পর পাপুয়া নিউগিনিতে যাওয়ার কথা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের। এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন তিনি।
সব মিলিয়ে বেইজিংয়ের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরে নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারের অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এবারের এশিয়া সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে কোয়াড ও পাপুয়া নিউগিনির সফর বাতিলের বিষয়টি চীনকে সুবিধা করে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে মার্কিন কংগ্রেসকে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের সীমা বাড়াতে হবে। তা না হলে ১ জুন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৩১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি ডলারের ঋণখেলাপি হয়ে যাবে। আর্থিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে শীর্ষ অর্থনীতিগুলোর জোট জি-৭ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর রোববারই বাইডেন দেশে ফিরবেন। এরপর তিনি মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরই মধ্যে বাইডেন হোয়াইট হাউসে কংগ্রেসের রিপাবলিকান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি জানিয়েছেন, দুই পক্ষের মধ্যে এখনও অনেক বিষয়ে মতবিরোধ আছে।
২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত নিরাপত্তা জোট কোয়াড যাত্রা শুরুর পর অনেকটা স্তিমিত ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জোটটি বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সিডনিতে কোয়াড মিটিং এবং পাপুয়া নিউগিনির রাজধানী পোর্ট মোরসবিতে বাইডেনের সফরকে পর্যবেক্ষকরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন উপস্থিতি জোরদার করার সুযোগ হিসেবে দেখেছিলেন। এ অঞ্চলটি ওয়াশিংটনের জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, চীন সমুদ্রে তার আঞ্চলিক দাবির বিষয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠেছে। দেশটি নৌ সক্ষমতা বিস্তৃত করছে এবং দক্ষিণ চীন সাগরে দ্বীপগুলোকে সামরিকীকরণ করছে।
অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে ওয়াশিংটন কোয়াডে অতিরিক্ত মনোযোগ দিতে পারছে না। এতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমে চীনের চেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত কয়েক বছরে চীনও এ অঞ্চলে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে। গত বছর দেশটি সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরসহ কিছু প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের সরকারের সঙ্গে আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক আরএএনডি করপোরেশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান বলেন, সিডনিতে কোয়াড সম্মেলন বাতিলের প্রভাব নগণ্য হতে পারে। কারণ, দলটি আগের বৈঠক থেকে ভালো গতিশীল হয়েছে। তবে পাপুয়া নিউগিনি সফর বাতিলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের প্রতি মার্কিন নীতির আরও সুদূরপ্রসারী পরিণতি হতে পারে। দেশটিতে সফর বাতিলের বিষয়টি প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে যে ওয়াশিংটন দীর্ঘ মেয়াদে বিশ্বস্ত অংশীদার নয়। এটি সরাসরি বেইজিংয়ের হাতকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
Posted ১২:৩৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin