শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

যে কারণে সিটির কাছে বিধ্বস্ত রিয়াল

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩ | প্রিন্ট

যে কারণে সিটির কাছে বিধ্বস্ত রিয়াল

একেই হয়ত বলে চরম প্রতিশোধ! গতবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে আধিপত্য করেও রিয়াল মাদ্রিদের ফাইনালে ওঠা ঠেকাতে পারেনি ম্যানচেস্টার সিটি। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এক মিরাকলের জন্ম দিয়ে ফাইনালে পা রাখে কার্লো আনচেলত্তির দল। তবে গতকাল নিজেদের মাঠে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের লড়াইয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা একরকম সম্পত্তি বানিয়ে রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ। প্রতিযোগিতাটির সফলতম দলটি গত দশ বছরেই পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেমিফাইনালে উঠে আরও একবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল লস ব্লাঙ্কোরা। কিন্তু এবার ইতিহাদ স্টেডিয়ামে সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। বুধবার (১৭ মে) রিয়ালকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছে ম্যানচেস্টার সিটি।

পেপ গার্দিওলার দলের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি রিয়াল। শুরু থেকেই সিটির গতি আর প্রেসিংয়ে কোণঠাঁসা হয়ে পড়ে কার্লো আনচেলত্তির দল। প্রথমার্ধে বের্নার্দো সিলভার জোড়া গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধে হুলিয়েন আলভারেজ আরও একটি গোল করেন। আত্মঘাতী গোল করে রিয়ালের দুর্দশা আরও বাড়ান এদার মিলিতাও।

 

চলতি মৌসুমে লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে, বিশেষ করে মৌসুমের শেষের দিকে এসে দারুণ পারফর্ম করছে ম্যানসিটি। অন্যদিকে লা লিগায় রিয়ালের ফর্ম খুব একটা আহামরি না হলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দারুণ খেলছিল। নিজেদের মাঠে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও রিয়ালকে নিয়ে এমন ছেলেখেলা করবে সিটি এমনটা খুব কম লোকই বিশ্বাস করতে পেরেছিল। রিয়ালের ঘাটতি ছিল কোথায় আর গার্দিওলাই বা কীভাবে আউটক্লাস করে দিলেন আনচেলত্তির মতো মাস্টারমাইন্ডকে?

সিটির হাই টেম্পো গেইমপ্লে: এদিন নিজেদের মাঠে শুরু থেকেই দারুণ স্পিডি ফুটবল খেলা শুরু করে সিটি। গার্দিওলার দলের কুইক পাসিং গেম বিল্ড আপের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না ক্রুস-মদ্রিচকে নিয়ে গড়া রিয়ালের বয়সের ভারে শ্লথ হয়ে আসা মধ্যমাঠ। তাই খেলার নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে চলে যায় সিটির দখলে। রিয়ালের ডিফেন্স লাইনও বাধ্য হয়ে নিচে নেমে আসে। লো ব্যাকলাইন ডিফেন্সের কারণে রিয়ালের রক্ষণের সঙ্গে আক্রমণভাগের সম্পর্কও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রিয়ালের রক্ষণভাগও এলোমেলো হয়ে পড়ে।

রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগে বোঝাপড়ার অভাব: নিজেদের মাঠে প্রথম লেগে রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগ দারুণভাবে সিটির আক্রমণভাগ সামলিয়েছে। সেদিন ডেভিড আলাবা-অ্যান্টনি রুডিগারের মধ্যকার বোঝাপড়াটা দারুণ ছিল। রুডিগার তো হলান্ডকে পকেটেই পুরে রেখেছিলেন। বাকিরাও খুব একটা জায়গা করতে পারেননি ডি বক্সে। কিন্তু এদিন রুডিগারকে বেঞ্চড করে এদার মিলিতাওকে খেলানোটা হিতে বিপরীত হয়েছে রিয়ালের। আলাবা-মিলিতাও জুটির মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব স্পষ্ট বোঝা গেছে খেলায়। প্রথম গোলটির সময় বের্নার্দো সিলভা সম্পূর্ণভাবে অরক্ষিত ছিলেন। হলান্ড হোল্ডিং প্লের মাধ্যমে প্রায়ই জায়গা করে দিয়েছেন সতীর্থদের। এই গোলেই যার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাছাড়া আত্মঘাতী গোলটির দায় সম্পূর্ণভাবে মিলিতাওয়ের ওপরেই বর্তায়।

বের্নার্দো সিলভার জ্বলে ওঠা: গত মৌসুমেই সিটি ছেড়ে বার্সায় যোগ দিতে চেয়েছিলেন বের্নার্দো সিলভা। সে সময় তিনি বার্সায় চলে গেলে আজ হয়ত আফসোস করতেন গার্দিওলা। রিয়ালের বিপক্ষে প্রথম লেগের পর দ্বিতীয় লেগেও দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডার। শুধু জোড়া গোল করেই নয়, সিটির আক্রমণভাগের অলিখিত নেতা কাল বের্নার্দোই ছিলেন। বিপজ্জনকভাবে রিয়ালের ডি বক্সে ঢুকে পড়ছিলেন বারবার। এই মিডফিল্ডারের প্লেমেকিং অ্যাবিলিটির ভালো একটা প্রদর্শনী ছিল গতকালের ম্যাচ।

ক্রুস-মদ্রিচের নিষ্প্রভতা: গত এক দশকে রিয়াল মাদ্রিদের সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা আছে তাদের মিডফিল্ডের। লুকা মদ্রিচ তো তার প্রজন্মের সেরা মিডফিল্ডার বটেই, ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা। ক্রুস ও ক্যাসেমিরোকে নিয়ে গড়া তাদের মধ্যমাঠ তর্কাতীতভাবে এই সময়ের সেরা ছিল। কিন্তু গত মৌসুমের শেষে ক্যাসেমিরোর বিদায়ের পর ছেদ পড়ে তাতে। আগের চেয়ে রক্ষণে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয় ক্রুস-মদ্রিচকে। সেই সঙ্গে বয়সের ছাপও পড়েছে খেলায়। গতকাল সিটির মধ্যমাঠের গতির কাছে পেরে ওঠেনি এই জুটি। যার কারণে মাঠের নিয়ন্ত্রণও পায়নি রিয়াল। উল্টো বেশ কয়েকবার ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বল হারিয়ে দলের বিপদ বাড়িয়েছেন মদ্রিচ। কালকের ম্যাচেই স্পষ্ট যে, রিয়ালের মাঝমাঠে সামনের দিনে পরিবর্তন আসছে। ক্রুস-মদ্রিচের কাছে আগের মতো ধারাবাহিক পারফরম্যান্স আশা করাটা একটু বাড়াবাড়িই। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা মিডফিল্ড জুটির সময় ফুরাল বলে!

বেনজেমা-ভিনিসিউসের সঙ্গে মাঝমাঠের সংযোগের অভাব: এদিন মাঠে ভিনিসিউস কিছুই করে দেখাতে পারেননি। আগের লেগে রিয়ালের তৈরি লরা প্রায় সব সুযোগের পেছনে ছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। একমাত্র গোলটিও তিনিই করেছিলেন। কিন্তু এদিন মাঝমাঠ থেকে খুব একটা বলই পাননি তিনি। তাই বেশ নিচে নেমে এসে বল সংগ্রহ করতে হচ্ছিল। আর সেটাও তাকে ঠিকমতো করতে দেননি কাইল ওয়াকার। একপ্রকার পকেটবন্দী করে রেখেছিল তাকে এই ইংলিশ রাইটব্যাক।

রিয়ালের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ বেনজেমার নিষ্প্রভতা। প্রথম লেগের মতো গতকালও নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন এই ফরাসি স্ট্রাইকার। হাতেগোণা যে কয়েকটি বল পেয়েছেন তাও খুইয়ে রিয়ালের আক্রমণগুলো নষ্ট করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে পাল্টা আক্রমণে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছেন গার্দিওলার দলকে।

আনচেলত্তির দল নির্বাচনে ভুল: এই ম্যাচে আনচেলত্তি দল নির্বাচনেই মুনশিয়ানার পরিচয় দিতে পারেননি। আগের ম্যাচে আলাবা-রুডিগার জুটির সাফল্যের পর এদিন মিলতাওকে একাদশে রাখাটা ভুল ছিল তার। চেলসির হয়ে খেলায় গার্দিওলার ট্যাকটিকস ও ইংলিশ লিগের খেলা ও মাঠের সঙ্গে ভালো পরিচয় আছে রুডিগারের। তার অভিজ্ঞতা হয়ত কাজে লাগতে পারত বিরুদ্ধ পরিবেশে খেলতে নামা রিয়ালের। শুয়েমিনিকে একাদশে না খেলানোটাও ভুল ছিল। রক্ষণভাগের সঙ্গে মধ্যমাঠের সংযোগ রক্ষার জন্য শুয়েমিনি ভালো ভূমিকা রাখতে পারতেন। তাছাড়া তার পাসিং অ্যাবিলিটিও রিয়ালকে আলাদা একটা শক্তি দিত।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]