সম্প্রতি বাংলাদেশে গেপ্তার হওয়া হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি. এর ৭ পরিচালকসহ যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৮ পরিচালক লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করে হয়রানি বন্ধ ও তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষার দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৮ পরিচালক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। যার মধ্যে ৭ জন গত বছর বাংলাদেশে হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন এবং ৮ দিনের কারাবাস শেষে জামিনে ছাড়া পান। এসব বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে প্রবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের পথ অবিলম্বে বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবি জানান।

বাংলাদেশে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটে। এসব মামলার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা। প্রবাসীদের বিনিয়োগ আত্মসাৎ করতে দুর্নীতিবাজরা মিথ্যা মামলা দায়েরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। যাতে প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা মামলার ভয়ে বিনিয়োগ রেখে দেশ ছাড়েন। নিজেদের গ্রেপ্তার ও কারাবরণের নেপথ্যে এমন দূরভিসন্ধি কাজ করেছে বলে মনে করেন তারা। বলেন, আগের মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পর আবারও নতুন করে দুটি মামলা এবং একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী এসব বিনিয়োগাকারী বলছেন, আইন মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।

কিন্তু এই আইনকে যদি হয়রানির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়, অন্যের সম্পদ দখলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়-সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা হলেন- ভাইস চেয়ারম্যান জামাল মিয়া, পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক, পরিচালক কামাল মিয়া, পরিচালক আব্দুল আহাদ, পরিচালক আব্দুল হাই, পরিচালক জামাল উদ্দিন, পরিচালক এম এ রব ও পরিচালক ফয়জুল হক। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে গেলে গত বছরের ২১শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই ৭ পরিচালককে ঢাকার মতিঝিলে কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। গেপ্তারের কোনো কারণও ব্যাখ্যা করেনি পুলিশ। কেবল বলেছে, ‘আপনাদের সঙ্গে কথা আছে’। থানায় নেয়ার পর জানানো হয় মাগুরায় তাদের বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা হয়েছে। বীমার টাকা না পেয়ে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চার গ্রাহক এসব মামলা করেছেন। বিনিয়োগকারীরা বলেন, কোম্পানির চেয়ারম্যান ছাড়াও তখন ১০জন পরিচালক ছিলেন। তাদের মধ্যে আমরা ৭জন ব্রিটেন প্রবাসী, একজন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। চেয়ারম্যান ও দুই পরিচালক থাকেন বাংলাদেশে। কিন্তু বীমার টাকা না পাওয়ায় বেছে বেছে কেবল যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৭ পরিচালক এবং একজন শেয়ারহোল্ডারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলো মাগুরার ৪ গ্রাহক। আবার ওই মামলা সম্পর্কে কোনো কিছু জানার আগেই কোম্পানির সভা থেকে আমাদের গ্রেপ্তার করা হলো- এ ঘটনা থেকে অনুমান করা যায়, এটি কোনো সাধারণ মামলার ঘটনা নয়। এটি প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কোম্পানি দখলের গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা প্রশ্ন করেন, গ্রাহক টাকা না পেলে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। আর বিষয়টি দেওয়ানি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নেয়া হলো কি করে? লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তারা মামলাগুলো মোকাবেলা করে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর মাগুরার আদালত থেকে মুক্তি পান। এরপর তারা নতুন করে কোম্পানি পরিচালনার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু বোর্ড মিটিং এলেই তাদের বিরুদ্ধে নানাকিছু শুরু হয়ে যায়। তাদের জড়িয়ে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে নিয়ে নানা ধরণের মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয় বাংলাদেশের কয়েকটি কাগজে। ওইসব খবরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে বানোয়াট অভিযোগ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে এসব প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে রিট পিটিশনও হয়। এছাড়া গত এপ্রিল মাসে আরও দুটি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এই মামলাগুলোও গ্রাহকের টাকা ফেরত না দেয়ার অভিযোগে করা। তারা বলেন, আগের মামলা কেবল আমরা ৮ জন যুক্তরাজ্য প্রবাসীর বিরুদ্ধে করা হয়েছিলো। এবারের মামলাগুলোতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৮জনের পাশাপাশি কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্যদেরও রাখা হয়েছে। যাতে মনে না হয় কেবল যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের টার্গেট করা হয়েছে।

স্থায়ীভাবে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে এবং প্রবাসী বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য জাতীয় সংসদে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান তারা। বলেন, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা যদি কোনো অন্যায়ের শিকার হয়, তাদের বিনিয়োগ হারায় সেটি বাংলাদেশে প্রবাসী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চরম খারাপ উদাহরণ তৈরি করবে। হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা।