প্রযুক্তি খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনের লাগাম টেনে ধরতে যুক্তরাষ্ট্র নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তবে এবার জোটগতভাবে এগোচ্ছে দেশটি। জাপানের হিরোশিমায় শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিশ্বের ধনী দেশগুলোর জোট জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে বিষয়টি রয়েছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। একই সঙ্গে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার ও নিরাপত্তা হুমকির বিষয়েও দেশগুলো একমত হয়েছে। মস্কোকে অস্ত্রে সংকটে ফেলতে প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞাও দিচ্ছে সংগঠনটি। সম্মেলনে গুরুত্ব পাচ্ছে জলবায়ু বিপর্যয় রোধে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে তৈরি জ্বালানির বিষয়টিও। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসির।
জি৭ (গ্রুপ অব সেভেন) হলো, বিশ্বের সাতটি মূল উন্নত অর্থনীতির দেশ– জাপান, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত সদস্য দেশগুলোর সংগঠন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও সংগঠনটিতে প্রতিনিধিত্ব করে। এ সম্মেলনে আজ যোগ দেবেন জি৭ এর আউটরিচ নামে পরিচিত আরও আট দেশের নেতারা। এই তালিকায় রয়েছে– ভারত, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ।
ধনী সাত দেশের লক্ষ্য, চীনের ওপর নির্ভরতা কমানো। সে ক্ষেত্রে যেসব পণ্যের জন্য চীনের ওপর নির্ভর করতে হয়, সেগুলোর উৎপাদন বাড়াবে তারা। নিজস্ব কোম্পানিগুলোকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়ে আসতে চায় দেশগুলো। মূলত প্রযুক্তিপণ্য সেমি কন্ডাক্টর, অবকাঠামো এবং কম নির্গমন শক্তির উৎসগুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এই এজেন্ডায় দেশটির সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক যানবাহন, ব্যাটারি, বায়ু খামার, সৌর উদ্ভিদসহ আরও বেশ কিছু জলবায়ুবান্ধব জ্বালানিতে ভর্তুকি দিচ্ছে দেশটি।
এদিকে রাশিয়াকে আরও বেকায়দায় ফেলতে দেশটিতে প্রযুক্তি ও শিল্প সরঞ্জাম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জি৭ দেশগুলো। এর মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কো অস্ত্র তৈরি ও মেরামতে সংকটে পড়বে বলে মনে করছে তারা। এক বিবৃতিতে নেতারা জানান, এসব পদক্ষেপ যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অস্ত্র-সরঞ্জাম রপ্তানি সীমিত করবে। শুধু রাশিয়াই নয়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে মস্কোকে সহায়তাকারী গ্রুপগুলোও। অন্যদিকে, ইউক্রেনকে আর্থিক, মানবিক, সামরিক এবং কূটনৈতিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন নেতারা।
রাশিয়াকে সমর্থন করা ৭১টি কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব কোম্পানির মধ্যে ৬৯টি রাশিয়ান, একটি আর্মেনিয়ার এবং একটি কিরগিজস্তানের।
এদিকে, সৌদি আরবে আকস্মিক সফর করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। দেশটিতে আরব লিগের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে এই সফর করেন তিনি। সেখানে ভাষণে তিনি বলেন, ইউক্রেন ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধে জড়ায়নি। এ সময় তিনি রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়ার ইউক্রেনীয় এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য আরব নেতাদের আহ্বান জানান। এর আগে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলেনস্কি।
শুক্রবার টুইটে তিনি জানান, আরব বিশ্বের সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক বাড়াতেই তিনি সৌদি সফর করেন।
এদিকে, রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিন আগামী মঙ্গলবার থেকে দু’দিনের চীন সফর করবেন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন জানান, চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে রুশ প্রধানমন্ত্রী এই আনুষ্ঠানিক সফর করবেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাশিয়া-চীন সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে এই সফরে। এ ছাড়া, শিল্প, জ্বালানি, পরিবহন, অবকাঠামো এবং কৃষিও থাকবে আলোচনায়। বেশ কয়েকটি চুক্তিও সই হবে।