শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে সরকারি ভবন, বাড়ছে বিশৃঙ্খলা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ২১ মে ২০২৩ | প্রিন্ট

রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে সরকারি ভবন, বাড়ছে বিশৃঙ্খলা

রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ইমারত তৈরিতে ভবনের নকশা অনুমোদনের ক্ষমতা একমাত্র রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। তবে ইমারত তৈরিতে এই আইন মানছে না অনেক সরকারি সংস্থা। এতে ঢাকায় সরকারি ইমারত নির্মাণে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা।

রাজধানীতে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে তৎপরতা চালিয়ে ২০৭টি সরকারি ভবন শনাক্ত করেছে রাজউক, যেগুলোর নকশায় তাদের অনুমোদন ছিল না। এসব ভবন নির্মাণেও নানা ধরনের অনিয়ম পেয়েছে সংস্থাটি।

রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে নকশা অনুমোদনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান রাজউক। টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট-১৯৫৩, বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যাক্ট-১৯৫২ ও ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা-২০০৮ অনুসারে রাজউককে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

রাজউকের আওতাধীন এলাকার মধ্যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন যেমন আছে, তেমনি রয়েছে উত্তরে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, দক্ষিণে কেরানীগঞ্জ উপজেলার অংশবিশেষসহ ধলেশ্বরী নদী, পূর্বে শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা নদী এবং সোনারগাঁ উপজেলার অংশবিশেষ, পশ্চিমে বংশী নদী। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, কদমরসুল, সিদ্ধিরগঞ্জ, তারাব, সাভার, টঙ্গী ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা রাজউকের আওতাভুক্ত।

আইন অনুযায়ী, এসব এলাকায় ইমারত নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন নেয়ার কথা থাকলেও তা নিচ্ছে না ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, জনস্বাস্থ্য অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব গণমাধ্যমকে বলেন, রাজউকের সীমানায় যদি সরকারি কোনো সংস্থা নিজেরা অনুমোদন করে স্থাপনা নির্মাণ করে, তাহলে তা হবে অন্যায়। আইন অনুযায়ী রাজউকই একমাত্র নকশা অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিয়া বলেন, নির্মাণ অনুমোদনে রাজউকের যে আইন, তা খুবই শক্তিশালী। এখানে অন্য কোনো সংস্থার নকশা অনুমোদনের সুযোগ নেই। তবে যাদের নকশা প্রণয়ন শাখা রয়েছে, তারা প্রধান স্থপতিকে দিয়ে করাতে পারেন।

এদিকে সিটি কর্পোরেশনের একাধিক প্রকৌশলীর দাবি, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সব ইমারতের নকশা অনুমোদনের জন্য প্রধান প্রকৌশলীকে অথরাইজড অফিসার হিসেবে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৯ মার্চ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পর থেকে ইমারত নির্মাণের নকশা সিটি কর্পোরেশন করে থাকে।

এ বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সিটি কর্পোরেশনের মতো গণপূর্ত অধিদফতরও নিজস্ব প্রধান স্থপতির কাছ থেকে নকশা অনুমোদন করিয়ে ইমারত নির্মাণ করছে।

গণপূর্তের প্রকৌশলীদের দাবি— ২০০৮ সালে জারি হওয়া পরিপত্র অনুযায়ী গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোনো স্থাপনা নির্মিত হলে তা প্রধান স্থপতির কাছ থেকে নকশার অনুমোদন নেয়ার বিধান রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদফতরের একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধান স্থপতি আইন অনুযায়ী সরকারি সংস্থার নকশা অনুমোদন করতে পারেন। কিন্তু এখানে স্পষ্ট বলা আছে, এ অনুমোদিত নকশা সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে অর্থাৎ ঢাকার মধ্যে হলে রাজউকের কাছে জমা দিতে হবে। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলো তা মানছে না। ফলে রাজউকও সরকারি অন্য সংস্থার স্থাপনা তদারকি করতে পারছে না।

রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-২) প্রকৌশলী মোবারক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বিধিমালা অনুযায়ী প্রধান স্থপতির কাছ থেকে নকশা অনুমোদন করেও স্থাপনা করতে পারে। তবে সিটি কর্পোরেশন যে দাবি করে, তাদের প্রধান প্রকৌশলী নকশা অনুমোদন করতে পারেন; বিদ্যমান আইন তা সমর্থন করে না। আমরা পরিদর্শন করে দেখেছি, অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজেরা নকশা তৈরি করে স্থাপনা করছে। আবার এসব স্থাপনা পরিদর্শনকালে দেখা যায়, নিজেদের তৈরি নকশাও মানা হয়নি নির্মাণকালে।

তিনি আরো জানান, ঢাকায় গৃহায়ণের লালমাটিয়া ও মিরপুর প্রকল্প, সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন মার্কেট, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের বিভিন্ন স্থাপনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরসহ বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্মিত ভবনে তৈরিকৃত নকশার ব্যত্যয় পাওয়া গেছে।

সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ইমারত নির্মাণে বিশৃঙ্খলার বিষয়ে কথা হলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বিক্ষিপ্তভাবে নকশা অনুমোদন করার বিষয়টি আমাদের কাছে এসেছে। এ বিষয়ের একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২১ মে ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]