দশ বছর আগেও ব্যাংক খাত চলত ম্যানুয়ালি। সেখান থেকে কোর ব্যাংকিং, কার্ড, অনলাইন পরিশোধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে এগিয়ে গেছে এ খাত। আগামী দিনের ব্যাংকিং হবে ডিজিটাল। টিকে থাকতে হলে ডিজিটাল রূপান্তরে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে হবে। যেসব ব্যাংক ডিজিটাল রূপান্তরে বিনিয়োগ করবে না, পাঁচ-সাত বছর পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকিং অন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন সামিটের সমাপনী দিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর. এফ. হোসেন।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি দু’দিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করে। বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ৪৬টি ব্যাংকের ১৫০ জন কর্মকর্তা এবং প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নানা অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমানো এবং সুশাসন জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়া কোনো ব্যাংক আর বড় হতে পারবে না। ডিজিটাল ব্যাংকিং এখন বিশ্বের অনেক দেশে চালু হয়েছে। এখন ভালো সেবা দিতে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষ জনবল তৈরি ও পদ্ধতিগত উন্নয়ন করতে হবে। ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য বেশি বেশি আর্থিক শিক্ষার দরকার। স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ে এসব বিষয় যুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে প্রযুক্তিবান্ধব ব্যাংক সিঙ্গাপুরের ডিবিএস। ডিজিটাল রূপান্তর শুরুর ১০ বছরে ব্যাংকটিতে যত ব্যাংকার আছেন, তার দ্বিগুণ রয়েছে প্রকৌশলী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেন, তখন তা বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা, সেটি নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। সেখান থেকে দেশ বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। ১০ বছর আগে ব্যাংকগুলো ম্যানুয়াল ছিল। এখন ঘরে বসে পরিশোধ করা যাচ্ছে। সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। স্মার্ট দেশ গঠনে অবদান রাখতে চাইলে ব্যাংকগুলোকে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। কোর ব্যাংকিং সিস্টেম, কার্ড ম্যানেজমেন্ট, অনলাইন পেমেন্ট থেকে আরেক ধাপ এগিয়ে ডিজিটাল রূপান্তর হতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসী আয় দেশে আনার ওপর জোর দিতে হবে।
সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এবিবির চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ একদিকে আমদানিনির্ভর দেশ; আরেকদিকে বড় আকারের রপ্তানিও করে। কোনো কারণে দেশের ব্যাংক খাতের ক্রেডিট রেটিং খারাপ হলে অর্থনীতিতে তার একটা প্রভাব আছে। তাতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে খরচ বেড়ে যায়। এটা বুঝে ব্যাংক খাতকে এগোতে হবে। ব্যাংক খাতের ভাবমূর্তি যত ভালো হবে, ক্রেডিট রেটিং তত বাড়বে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে খরচ কমবে।
তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আসার বিষয়টি অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। সবার আগে দেখা হয় রিটার্ন কেমন হবে। পাশাপাশি দেশের ক্রেডিট রেটিং, রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেওয়া হয়। এখন বিদেশি বিনিয়োগ কম আসার প্রধান কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার ৬ থেকে ৮ শতাংশ। বছর দুয়েক আগেও তাদের সুদহার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি ছিল। যে কারণে এ রকম সময়ে বিনিয়োগকারীরা উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী কম।