শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোন খাতে কত বরাদ্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট

কোন খাতে কত বরাদ্দ

দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ও ৫২তম বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত এ বাজেট বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন। এবারের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শীর্ষক বাজেটে উন্নয়‌নের অভিযাত্রার দেড় দশক পে‌রি‌য়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অ‌গ্রযাত্রাকে সামনে রেখে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ গড়ার কথা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেটে বা‌র্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ লাখ ৬৩ হাজার কো‌টি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বা‌জে‌টে ঘাটতির প‌রিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কো‌টি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর মূল্যস্ফীতির বার্ষিক হারের লক্ষ্য থাকছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

এছাড়া রাজস্ব আয় প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা, এনবিআর বহির্ভূত কর ৮ হাজার কোটি টাকা। করছাড় প্রাপ্তিতে ৪৩ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক অনুদানে ৩ হাজার ২৭১ কোটি, উন্নয়ন ব্যয়, ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ কোটি, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ বাজেটের ঘাটতির জোগান দিতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, ব্যাংক থেকে ঋণ ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, ব্যাংক বহির্ভূত ঋণ ৪০ হাজার ১ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা এবং করমুক্ত বার্ষিক আয়সীমা থেক ৩ লাখ টাকা।

বা‌র্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ২ লাখ ৬৩ হাজার কো‌টি টাকা। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কো‌টি টাকা। জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির বার্ষিক হারের লক্ষ্য ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

খাতভিত্তিক বরাদ্দ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ২১৭ কোটি টাকা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৪ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ৪৭ কোটি টাকা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ৭ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৬৯৯ কোটি টাকা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ২ হজার ৫০৯ কোটি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগে ৪৬ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগে ১ হাজার ৪৩৩ কোটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ২৪ কোটি টাকা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ৬০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে ৯৯৪ কোটি টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ২৫ হাজার ১২২ কোটি টাকা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৪ হাজার ২৪০ কোটি টাকা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা, ভূমি মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ১০ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ১০ হাজার ১১৮ কোটি টাকা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ৩৯ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১৯ হাজার ১০ কোটি টাকা, নৌ পরবহন মন্ত্রণালয়ে ১০ হাজার ৮০১ কোটি টাকা, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৭ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা, দুর্নীতি দমন কমিশনে ১৮৫ কোটি টাকা, সেতু বিভাগে ৯ হাজার ৭৩ কোটি টাকা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগে ৪ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যণ বিভাগে ৮ হজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

প্রবাসী, বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক চাকরিজীবী, শ্রমিকশ্রেণি, অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিভুক্ত জনগোষ্ঠী ও শিক্ষার্থী- তাদের জন্য আলাদা ছয় ধরনের কর্মসূচি করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ বিভাগ।

যেসব খাতে খরচ বাড়ছে
ফ্ল্যাট-প্লট নিবন্ধন করার সময় ক্রেতাকে নানা ধরনের কর দিতে হয়। যেমন- গেইন ট্যাক্স, ভ্যাট, স্ট্যাম্প মাশুল, নিবন্ধন মাশুল, স্থানীয় সরকার কর। এ খাতে সব মিলিয়ে ১৫ শতাংশ হারে কর বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভ্রমণ কর
অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে জল, স্থল ও আকাশ- তিন পথেই ভ্রমণ কর বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ হারে বাড়বে ভ্রমণ কর। প্রস্তাব অনুমোদিত হলে মানুষের ভ্রমণব্যয় বাড়বে।

সর্বজনীন পেনশনের ঘোষণা
বর্তমান মেয়াদের শেষ বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পরীক্ষামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর ঘোষণা দেন। জানা যায়, প্রবাসী, বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক চাকরিজীবী, শ্রমিকশ্রেণি, অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিভুক্ত জনগোষ্ঠী ও শিক্ষার্থী- তাদের জন্য আলাদা ছয় ধরনের কর্মসূচি করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ বিভাগ।

সামাজিক ভাতা বৃদ্ধি
সামাজিক সুরক্ষা খাতে অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ছে। সঙ্গে কিছু কিছু কর্মসূচির ভাতাও বাড়ছে। কোথাও বাড়ছে জনপ্রতি ৫০ টাকা, কোথাও বা ১০০ টাকা। ভাতা কিছুটা বৃদ্ধির পাশাপাশি উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়বে।

বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। সঙ্গে কিছু কিছু কর্মসূচির ভাতাও বাড়ছে। ভাতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়বে। খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় টিআর, জিআর, ভিডব্লিউবি, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ভিজিএফ ইত্যাদি ১১টি শ্রেণিতে বরাদ্দ রয়েছে।

খাদ্যনিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়বে
খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় টিআর, জিআর, ভিডব্লিউবি, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ভিজিএফ ইত্যাদি ১১টি শ্রেণিতে ১৫ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে চলতি অর্থবছরে। আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দুই হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার সাধারণ মানুষের কাছে কম দামে চাল ও আটা বিক্রি করে। আবার কাজের সুযোগ তৈরি করতে গ্রামে বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়। বাজেটে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা বাড়তে পারে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:৩২ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]