নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট বাস্তবায়ন করতে সরকার সক্ষম। কারণ তারা তাদের সক্ষমতা আগেই দেখিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের জাতীয় বাজেট দিয়েছি। আমরা এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা এটি বাস্তবায়ন করতে পারি এবং আওয়ামী লীগ তা করতে পারে।
রোববার চিলাহাটি-ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা গণভবন থেকে নীলফামারীর চিলাহাটি রেলস্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
তিনি বলেন, অনেকেই এই বাজেট নিয়ে অনেক কথা বলবে। কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল কীসে, তা জানি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৬ সালে বিএনপি শাসনামলে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আমাদের সরকার গত ১ জুন ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, একদল লোক দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক টেলিভিশন চ্যানেল থাকায় এর অপব্যবহার করছে, আওয়ামী সরকারই বেসরকারি খাতে যেগুলোর লাইসেন্স দিয়েছে। সরকার যাই করুক না কেন, তারা এসি রুমে বসে সরকারের সব কাজের সমালোচনা করে, আর ‘কিন্তু’ (ত্রুটি) খুঁজে বেড়ায়। তারা দেশের জনগণকে হতাশ করার জন্য এবং বিদেশিদের সামনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছু কথাও ছড়িয়ে দেয়। তারা এ থেকে কী পায় তা আমি জানি না। তারা সম্ভবত কিছু হাদিয়া (টাকা) সংগ্রহ করে থাকতে পারে, আমি ঠিক বলতে পারবো না। তবে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলে তৃপ্তি পায়।
প্রতি বছর জাতীয় বাজেট পেশ করার পর সরকারের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না— যারা এসব বলে বেড়ায় তাদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে তা করে দেখায়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি এই ধরনের লোকদের বলতে চাই— আপনি গত বছর কী বলেছিলেন এবং আজকের বাংলাদেশ কোথা থেকে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। অনুগ্রহ করে হিসাব করুন ও তুলনা করুন।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা- পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বজুড়ে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ অন্যান্য দেশ থেকে জ্বালানি তেল, গ্যাস, খাদ্যসামগ্রী, গম, চিনি ও অন্যান্য যা কিছু আমদানি করছে, তার দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবহন খরচ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৮০০ যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আন্তঃনগর ট্রেন ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ উদ্বোন করেন, যা সপ্তাহে ছয়দিন এই রুটে চলাচল করবে।
চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন নীলফামারী জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল। কারণ হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রুটটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করার জন্য পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। পণ্য বোঝাই ওয়াগনের পাশাপাশি এই রুটে চলছে আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার শতভাগ বিদ্যুৎ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল এবং তারা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু আজ সারা বিশ্বে গ্যাস-তেল-কয়লার দাম বাড়ায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। টাকা দিয়েও এখন আর তা (গ্যাস-তেল-কয়লা) কেনা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, আমি জানি এজন্য এই গ্রীষ্মে মানুষ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। একদিকে মুদ্রাস্ফীতি অন্যদিকে লোডশেডিং, এই দুটি সমস্যায় আমার দেশের মানুষ ভুগছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি বৈদ্যুতিক পাখায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তবে এটি ছাড়া থাকা তার পক্ষে আরো বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ে। এটাও সত্য যে- আমরা এটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু এটা এখন পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, যদি যুদ্ধ না হতো এবং এর কারণে নিষেধাজ্ঞা না থাকত, তাহলে দেশ এ ধরনের কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। আজ যুদ্ধের কারণে বিশ্বের প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখনো কোনো সংকটের মধ্যে পড়েনি। ইনশাআল্লাহ, দেশ এমন পরিস্থিতিতে পড়বে না।
তিনি বলেন, কিন্তু এ জন্য আমাদের দেশের জনগণকে একটা কাজ করতে হবে। আমি বারবার বলছি- আমাদের যত অনাবাদি জমি আছে তার সব চাষ করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের যত জলাশয় আছে সেখানে মাছ চাষ করতে হবে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলে চা উৎপাদন না হলেও আওয়ামী লীগ সরকার তার উদ্যোগে সেখানে চা চাষ শুরু করে। এখন পঞ্চগড় থেকে কুঁড়িগ্রাম পর্যনস্ত বিস্তীর্ণ এলাকা চা চাষের আওতায় আনা হয়েছে।
Posted ২:০৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin