
নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
থাইল্যান্ডে সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে যে জোট, সেই জোট থেকে বাদ পড়েছে গত জাতীয় নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া পিটা লিমজারোয়েনরাতের নেতৃত্বাধীন সংস্কারপন্থী মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি)।
সেনাবাহিনী ও রাজতন্ত্রপন্থী সিনেটরদের বিরোধিতার মুখে তৈরি অচলাবস্থা কাটিয়ে সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন দেশটির আইনপ্রণেতারা। এর মধ্যে বুধবার এমএফপি জোট থেকে বাদ পড়ল।
গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিস্ময়কর সাফল্য পায় পিটার দল এমএফপি। এক দশক ধরে চলা সেনাশাসন নিয়ে উদ্বিগ্ন তরুণ ও শহুরে নাগরিকদের ব্যাপক সমর্থনে তারুণ্যনির্ভর দলটি ৫০০ আসনের নিম্নকক্ষে সবচেয়ে বেশি ১৫১ আসন পায়। কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠনে দলটির অন্য আইনপ্রণেতাদের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। তাই সরকার গঠনের লক্ষ্যে আরো সাতটি দলকে নিয়ে এই জোট গঠন করেছিল এমএফপি।
নির্বাচনে এমএফপির পর সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া এবং এমএফপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফেউ থাই পার্টিকে নিয়ে আট দলের জোট গঠন করা হলেও পিটাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার মতো প্রয়োজনীয় সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয় এই জোট। এতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়।
প্রধানমন্ত্রী হতে ৭৪৯ সদস্যের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতার সমর্থন থাকতে হবে। থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ৫০০ জন নির্বাচিত আইনপ্রণেতা ও উচ্চকক্ষ সিনেটে ২৪৯ জন সিনেটর রয়েছেন।
পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোটে প্রথম দফায় পিটা ৩২৪ ভোট পেয়েছিলেন। এর মধ্যে সিনেটর ছিলেন মাত্র ১৩ জন। সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেটরের সমর্থন না পাওয়ায় তিনি নির্বাচিত হননি। বাধার মুখে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হতে পারেননি পিটা এবং একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকানা থাকার অভিযোগে দেশটির সাংবিধানিক আদালত তাঁকে এমপি পদ স্থগিত করেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করা ৪২ বছর বয়সী পিটা প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হলেও সিনেটের বিরোধিতায় তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে পারেননি। সর্বশেষ সেনা-সমর্থিত সরকারের নিয়োগ দেওয়া সিনেটররা চান না পিটা প্রধানমন্ত্রী হোন। কারণ, পিটা এর আগে একাধিকবার বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে দেশটিতে রাজতন্ত্রের অবমাননা নিয়ে বিদ্যমান কঠোর আইনটি সংশোধন করবেন।
পিটা প্রধানমন্ত্রী হতে পার্লামেন্টের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হওয়ার পর পর্দার আড়ালে কয়েক সপ্তাহ ধরে অন্য দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চলছিল। অবশেষ গতকাল ফেউ থাই পার্টির নেতা কনলান শ্রিকাইউ জোট থেকে এমএফপি বাদ পড়ার এই ঘোষণা দেন।
ফেউ থাই পার্টির প্রধান কনলান বলেন, ‘এমএফপিকে ছাড়াই নতুন সরকার গঠন করা হবে। সরকার গঠনে পর্যাপ্ত সমর্থন আদায়ে চেষ্টা চালাবে ফেউ থাই পার্টি। আর এমএফপি বিরোধী দলে থাকবে। আমরা জনগণের কল্যাণে নব উদ্যমে কাজ করব।’
ফেউ থাই পার্টি প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী হিসেবে ধনকুবের স্রেথা থাভিসিনকে মনোনীত করবে বলেও জানিয়েছেন কনলান।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে আবারও সিনাওয়াত্রা পরিবারের প্রত্যাবর্তন হচ্ছে। এর আগে ২০০৬ ও ২০১৪ সালে থাইল্যান্ডের সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন। তাঁরা দুজনই ছিলেন ফেউ থাই দলের সদস্য।
Posted ২:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin