
নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
১৮ বছরের বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং তার স্ত্রী সোফি গ্রেগরি। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ট্রুডোর এমন সিদ্ধান্ত নতুন করে আলোচনায় এনেছে তার বাবা সাবেক প্রধামন্ত্রী পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডোর নামও।
জাস্টিন ট্রুডো যেমন প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ই স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিলেন তেমনই তার মায়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিলেন তার বাবাও। অর্থাৎ পারিবারিক জীবন নিয়ে বাবার পথেই হাঁটলেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ক্ষমতায় থাকাকালীন বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পিয়েরে এলিয়ট ট্রুডো। ১৯৭১ সালে বিয়ের পর ১৯৭৯ সালে পিয়েরে ট্রুডো এবং মার্গারিট ট্রুডো আলাদা থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে ১৯৮৪ সালে বিচ্ছেদ হয় তাদের।
পিয়েরে ট্রুডো কানাডার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৮ সাল এবং ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত। ২০০০ সালে মারা যান তিনি। জাস্টিন ট্রুডোসহ তার মোট পাঁচ সন্তান।
জাস্টিন ট্রুডো কানাডার দ্বিতীয়জন যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিয়ে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিলেন। ইনস্টাগ্রামে ৫১ বছর বয়সী জাস্টিন ট্রুডো ও ৪৮ বছরের সোফি গ্রেগরি দুজনেই একই ঘোষণা দিয়েছেন।
‘অর্থবহ এবং কঠিন আলাপ-আলোচনার’ পর তারা এই ঘোষণা দিয়েছেন জানিয়ে ইন্সটাগ্রামে বলেন, তারা ‘একটি ঘনিষ্ঠ পরিবারের মতো থাকবেন,যার ভিত্তি হবে ভালোবাসা ও সম্মান’।
কানাডার অন্যতম বিখ্যাত রাজনীতিবিদ জাস্টিন ট্রুডো। ২০১৫ সালে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। সাবেক মডেল ও টিভি উপস্থাপিকা সোফির সঙ্গে ২০০৫ সালে গাঁটছড়া বাধেন ৫১ বছর বয়সী এ নেতা। তাদের সংসারে তিন সন্তান রয়েছে- জ্যাভিয়ার (১৫), এলা গ্রেইস (১৪) এবং হার্ডিন (৯)।
কানাডীয় প্রধানমন্ত্রীর অফিসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিচ্ছেদের জন্য যেসব আইনগত ও নৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন, সেগুলো নিশ্চিত করতে তারা কাজ করছেন এবং সেগুলো চলমান রেখে তারা এগিয়ে যাবেন। আগামী সপ্তাহে তারা পরিবার হিসেবে ছুটি কাটাতে যাবেন বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে বিবৃতিতে।
এ বিষয়ে অবগত একজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে বলেছেন, বিচ্ছেদের পর সন্তানরা বাবা-মায়ের যৌথ হেফাজতে থাকবে। ট্রুডো ও সন্তানেরা থাকবেন অটোয়ায় অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন রিডো কটেজে। ২০১৫ সাল থেকে সেখানেই বসবাস করছেন তারা। আর ৪৮ বছর বয়সী সোফি অটোয়াতেই পৃথক বাসায় চলে যাবেন। তবে বাচ্চাদের যতটা সম্ভব স্বাভাবিক লালন-পালন নিশ্চিত করতে রিডো কটেজে নিয়মিত যাতায়াত থাকবে তার।
প্রেম থেকে বিয়ে, বিয়ে থেকে বিচ্ছেদ
জাস্টিন ট্রুডো ও সোফির মধ্যে প্রথম দেখা হয়েছিল ছোটবেলাতেই। ট্রুডোর ছোটভাই মাইকেলের সহপাঠী ছিলেন সোফি। বড় হওয়ার পরে ২০০৩ সালে একটি অনুষ্ঠানে আবারও সাক্ষাৎ হয় তাদের। ওই অনুষ্ঠানটি একসঙ্গে সঞ্চালনা করেছিলেন তারা। তারপর ধীরে ধীরে জমে ওঠে প্রেম। পুনর্মিলনের দু’বছর পরেই বিয়ে করেন ট্রুডো-সোফি।
২০১৫ সালে জাস্টিন ট্রুডো যখন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তখন এই দম্পতি ভোগ ম্যাগাজিনে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে ট্রুডো জানিয়েছিলেন, সোফি গ্রেগরির সঙ্গে প্রথম দেখার দিন তিনি বলেছিলেন, আমার বয়স ৩১ বছর এবং এই ৩১ বছর ধরে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
বিয়ের পর দেশ-বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান-আয়োজনে নিয়মিত একসঙ্গে দেখা যেতো ট্রুডো-সোফিকে। সদা হাস্যোজ্জ্বল এ যুগলকে বাইরে দেখে অন্তত সুখী দম্পতিই মনে হতো।
যদিও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই দুজনের মধ্যে টানাপোড়েন ছিল বলে নিশ্চিত করেছিলেন ট্রুডো নিজেই। ২০১৪ সালে নিজের আত্মজীবনী কমন গ্রাউন্ডে তিনি লিখেছিলেন, আমাদের বিয়ে নিখুঁত নয়। কঠিন উত্থান-পতনের মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদের।
গত বছর বিয়েবার্ষিকীতে সোফি ট্রুডোও দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ইনস্টাগ্রামে তিনি লিখেছিলেন, আমরা রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের ভেতর দিয়ে গেছি, শক্তিশালী ঝড় মোকাবিলা করেছি, আরও অনেক কিছু একসঙ্গে পার হয়েছি এবং এটি এখনো শেষ হয়নি। দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক অনেক দিক থেকেই চ্যালেঞ্জিং।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ যুগলকে একসঙ্গে খুব কমই দেখা গেছে। এ বছর রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক এবং গত মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কানাডায় স্বাগত জানানোর সময় একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল ট্রুডো-সোফিকে।
Posted ৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin