বুধবার ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ধীরে ধীরে নামছে পানি, চারিদিক রেখে যাচ্ছে ভয়াবহ সব ক্ষতচিহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট

ধীরে ধীরে নামছে পানি, চারিদিক রেখে যাচ্ছে ভয়াবহ সব ক্ষতচিহ্ন

বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে বন্যা কবলিত এলাকার পানি। তবে পানি নেমে গেলেও ভেসে উঠছে বন্যার ভয়াবহ ক্ষতচিহ্ন। স্রোতের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, মহাসড়ক, কালভার্ট ভেসে উঠছে। এছাড়া বীজতলা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, বেড়িবাঁধ, বসতঘর যেন সে ক্ষতের চিহ্ন বহন করছে।

জেলার চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের ফুলছড়ি গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, গেলো কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ডুবে থাকা পুরো এলাকা থেকে নেমে যাচ্ছে পানি। তবে এর সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে বিভিন্ন ক্ষতচিহ্ন। দেখা মিলছে বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট, কালভার্ট; একই সঙ্গে উপড়েপড়া গাছপালাও।

এ গ্রামের বাসিন্দা আব্দু রশিদ বলেন, রাস্তা থেকে কালভার্ট সরে গেছে, রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত, গাছপালা উপড়ে পড়ে বিধ্বস্ত রাস্তায় আটকে আছে। পানি নেমে যাওয়ায় ঘরে ফিরতে দেখি ঘর ভেঙে তছনছ। এখন কি চলাচলের রাস্তায় আটকে থাকা গাছ সরিয়ে নেব নাকি ঘর ঠিক করব; কিছু মাথায় আসছে না। তার ওপর খাবারের চিন্তাও করতে হচ্ছে।

শুধু এটি নয়, এখন উপজেলার প্রতিটি গ্রামের একই চিত্র। পানিতে তলিয়ে গেছে বীজতলা, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের। আর বিধ্বস্ত বসতঘরগুলোও যেন বহন করছে ক্ষতের চিহ্ন। এ অবস্থায় ঘরে ফেরা মানুষগুলো পড়েছেন নতুন দুশ্চিন্তায়।

লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা গফুর উদ্দিন জানান, চারদিন কমপক্ষে ৪-৫ ফুট পানিতে বন্দি ছিলেন তারা। পানি ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে; এর সঙ্গে সড়কের ভাঙন, বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান। যাদের বাড়িঘর এখনও রয়েছে, তাদেরও বাড়িতে গিয়ে রান্না করার সুযোগ নেই, বাড়ির ভেতরের পানি বের করার চেষ্টা করছেন।

মানিকপুর-সুরাজপুর ইউনিয়নের চিংড়ি চাষি সৈয়দ আলম বলেন, ঘেরে কয়েক লাখ টাকার পোনা ফেলেছিলাম; কিন্তু বন্যায় ভেসে গেছে সব। এখন ঘর নিয়ে চিন্তা করব, নাকি ঘের নিয়ে চিন্তা করব – কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

রশিদ আহমদ নামে এক কৃষক বলেন, দুই একর জমিতে ধানের চাষ করেছি। কিন্তু বন্যায় সব শেষ।

এবার বন্যায় পানিতে ডুবে ছিলো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া স্টেশন। আর স্টেশনের দু’পাশের অসংখ্য মার্কেট ও দোকানপাট তলিয়ে যায় বন্যার পানিতে। আর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় চকরিয়ার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলম।

তিনি বলেন, এবার স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা প্রত্যক্ষ করলো চকরিয়াবাসী। গেলো ৫০ বছরেও এমন বন্যা তারা দেখেনি। ভয়াবহ এ বন্যায় চিংড়ির ঘের, ক্ষেত-খামার, বাগান, ঘরবাড়ি থেকে শুরু রাস্তাঘাট, সড়ক-মহাসড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর চকরিয়া স্টেশনের পানিতে মার্কেট ও দোকানপাটের দুই কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এ ক্ষতি সীমাহীন। তারপরও এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য চকরিয়া ও পেকুয়াবাসীর সবসময় পাশে রয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করার পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে সময় লাগবে। তবে জরুরি প্রয়োজনীয় কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলে জানান চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান।

তিনি বলেন, বন্যার পানি এখনো পুরোপুরি নেমে যায়নি। এখন যারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করবেন, তারা সবাই খাদ্য বিতরণসহ নানা সহযোগিতার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। আর পুরোপুরি পানি নেমে যাওয়ার পর সবার সমন্বয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ শুরু হবে। তবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে সময় লাগবে। আর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর দুর্গতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার কাজ শুরু হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, গেলো কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫ লাখ মানুষ; আর বিধ্বস্ত হয়েছে ৫৯ কিলোমিটার সড়ক।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:১৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিজয়ের ছড়া
(200 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]