
নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিশ্ব ও মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেদিন খুনিরা কেবল বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তার সঙ্গে বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতার আদর্শগুলোকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। মুছে ফেলতে অপপ্রয়াস চালিয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসও। বঙ্গবন্ধুর এ হত্যাকাণ্ড বাঙালি জাতির জন্য এক করুণ বিয়োগগাথা হলেও ভয়ঙ্কর ওই হত্যাকাণ্ডে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃতও হয়েছে নানাভাবে। হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাক সরকার।
সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের নির্মম বুলেটে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে সপরিবারে শাহাদতবরণ করেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এদিন একই সঙ্গে শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেল, একমাত্র সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, কৃষকনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও যুবনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণিসহ অনেক নিকটাত্মীয়।
পরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের পুনর্বাসনে দেশে-বিদেশে সহযোগিতা করেছে জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং তাদের দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পরপরই খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরির নিয়োগপত্র ঢাকা থেকে লিবিয়ায় পৌঁছে দেয়া হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরিও দেয়া হয়েছিল।
এর মধ্যে তৎকালীন লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিমকে চীনে প্রথম সচিব, লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব, মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব, মেজর শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব, মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব, মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব, মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব, কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব, লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব, লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব এবং লে. আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
তবে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত এবং নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বিচারকাজ শেষ করা হয়। পরে ২০০১ সাল থেকে জোট শাসনের পাঁচ বছর এ রায় কার্যকরের পথে বাধা সৃষ্টি করে রাখা হলেও বর্তমান মহাজোট সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের পাঁচজনের রায় কার্যকর হয় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি।
এরা হলেন: তৎকালীন লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার)।
আর একজনের জিম্বাবুয়েতে পলাতক অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ওই সময় পলাতক ছিলেন ৬ জন। ১০ বছর পলাতক থাকার পর ২০২০ সালে ৭ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি মাজেদকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ পরে ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বাকি পাঁচ খুনি এখনো পলাতক। এদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন; আর কানাডায় নূর চৌধুরী। তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সফল হচ্ছে না সরকার।
এদিকে, খন্দকার আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেম উদ্দিনের সন্ধান নেই। যদিও তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের পরোয়ানা জারি রয়েছে।
Posted ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin