
নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ১৮ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
দক্ষিণ এশিয়ায় কৃষি শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। আজ ১৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়টি গৌরব ও মর্যাদার ৬২ বছর পার করে ৬৩ তে পা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কৃষি গবেষণায় অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষীকিতে বাকৃবি প্রশাসনের শিক্ষকদের ভাবনাগুলো জেনেছেন আবুল বাশার মিরাজ।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে বাকৃবি
বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি কৃষি। আজ ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। উচ্চতর কৃষি শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র এবং জাতীয় আশা-আকাঙ্খার প্রতীক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আজ ৬৩তম বর্ষে পদার্পণ করছে- এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্যে পরম আনন্দ ও গৌরবের। এ উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামগ্রিক চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর আজ বহুগুণে বেড়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে এর মর্যাদা ও সুখ্যাতি। নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণের গৌরবগাঁথা নিয়ে আমাদের প্রাণপ্রিয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬২ বছরের গৌরবোজ্জ্বল পথ চলা। বৈশ্বিক নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে আমরা এগিয়ে চলছি। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে গুণগত মানসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট বড়ই প্রয়োজন। গুণগত মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষা শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান ও উন্নত জীবন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। আর সেই লক্ষ্যেই গত ছয় দশক ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিথযশা শিক্ষক ও গবেষকবৃন্দ নিরলসভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করে চলেছেন।
এ বিশ্ববিদ্যালয় হতে উত্তীর্ণ কৃষিবিজ্ঞানীদের অনেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পুরস্কৃত হয়েছেন এবং একই সাথে পেশাগত পূর্ণতায় বিকশিত হয়ে দেশের কৃষি-সংস্কৃতির পরিমন্ডলকে করেছেন সমৃদ্ধ ও আলোকিত। ফলে দেশ আজ ক্রমবর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে অসামান্য সাফল্য লাভ করতে পেরেছে। কৃষিক্ষেত্রে দৃশ্যমান এ সাফল্যগুলোর কৃতিত্ব এ দেশের কৃষক ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের, এটি আজ সর্বজন স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নতুন লক্ষ্যমাত্রা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও কাজ করে চলেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটগণ।
অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী
উপাচার্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
কৃষি গবেষণার কারণেই বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ
বঙ্গবন্ধুকণ্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনে ১ম, পাট রপ্তানিতে ১ম, ধান উৎপাদনে ৩য়, স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে ৩য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আম উৎপাদনে ৭ম, আলু উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম, চা উৎপাদনে ৯ম স্থানে বিশ্বপরিমণ্ডলে সমাদৃত। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান দেয়া ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যেখানে বর্তমানে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের সংস্থান করেও বাংলাদেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের গর্বিত দেশ।
দেশের কৃষিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটগণ। গত ৬২ বছরে বাকৃবির রয়েছে অসংখ্য গৌরবময় অর্জন। যার মধ্যে বাউ ধান-৩, ডেঙ্গুর সিরোটাইপ নির্ণয় প্রযুক্তি, মানুষ ও পশুর ব্রুসেলোসিস রোগের জীবাণু শনাক্তকরণ, ইলিশ ও ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জিন রহস্য উন্মোচন, ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিকের বিকল্প উদ্ভাবন, হিমায়িত ভ্রুণ হতে ভেড়ার কৃত্রিম প্রজনন, শুকনো মৌসুমে বোরো ধান চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবন অন্যতম। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি আবিষ্কার, শস্য ও পশুর একাধিক জাত উদ্ভাবনের মতো কৃষির সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে অনন্য উচ্চতায় এখন বাকৃবি।
অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ
ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধুর কারণেই মেধাবীরা কৃষিতে যুক্ত হয়
কৃষিক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের কৃষিতে এক দীর্ঘমেয়াদি ও যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করে। অন্যান্য টেকনিক্যাল গ্রাজুয়েট যেখানে সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির মর্যাদায় যোগদান করতেন, সেখানে কৃষি গ্রাজুয়েটদের সরকারি চাকরিতে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় যোগদান করতে হতো। একই দেশে টেকনিক্যাল গ্রাজুয়েটদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য কর্মক্ষেত্রে এক জটিল ও বহুমাত্রিক টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছিল । কৃষিশিক্ষা, কৃষি গবেষণা, কৃষি সম্প্রসারণসহ কৃষির সর্বক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। পাকিস্তান সরকার আমাদের কৃষির উন্নতি হোক, সে বিষয়ে ভীষণ রকম উন্নাসিক ছিল। সে কারণে বিভিন্ন প্রকার টেকনিক্যাল গ্রাজুয়েটদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তা ছাড়া কৃষিকে তারা তেমন গুরুত্বই দেয়নি।
বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের যদি কৃষিশিক্ষায় আগ্রহী করে তোলা না যায়, তাহলে কৃষিতে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা কখনও সম্ভব নয়। অতঃপর সবদিক বিবেচনা করেই বঙ্গবন্ধু শিক্ষার্থীদের কৃষিশিক্ষায় আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন মঞ্চে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্ত্বর) আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াদের মতো কৃষিবিদদের চাকরিক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা ঘোষনা দেন। তাঁর ওই ঐতিহাসিক ঘোষণার পথ ধরে আজ কৃষিবিদরা সরকারি চাকরিক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত।
অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম
প্রক্টর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
Posted ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৮ আগস্ট ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin