সোমবার ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িসহ বহুমুখী সংকটে নাকাল উত্তরাবাসী

উত্তরা সংবাদ দাতা :   |   সোমবার, ২১ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট

অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িসহ বহুমুখী সংকটে নাকাল উত্তরাবাসী

অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি ও জলাবদ্ধতায় নাকাল রাজধানীর উত্তরখান-দক্ষিণখান ও তুরাগ এলাকাবাসি। সড়কের খানাখন্দ ছাড়াও রয়েছে গ্যাস ও পানির সংকট।নতুন ওয়ার্ড গুলোর মেইন সড়কে জমে থাকা পানি ও বড় বড় সিমেন্টের পাইপ, ইটা-বালুর স্তুপ ও যানজটে জনদুর্ভোগ চরমে।

ইউনিয়ন পরিষদ বিলুপ্ত করে ২০১৮ সালে সিটি কর্পোরেশন গেজেট পাশ করে রাজধানী বৃহত্তর উত্তরা এলাকার নতুন ওয়ার্ড ঘোষণা করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। প্রায় ৬লাখ লোকের বসবাস রাজধানীর উত্তরখান, দক্ষিণখান ও তুরাগসহ নতুন ওয়ার্ডে।অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি ও জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ১৫ মাস যাবত সড়কের বেহাল দশা।

রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে পরিবহন সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উত্তরখান মাষ্টার বাড়ি কলাবাগান, মুন্ডা এলাকার কয়েকটি সুতা ফেক্টরী, গার্মেন্টস ফেক্টরী, সকলেট ফেক্টরীসহ ২০ /২৫ টি মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধের মুখে। এছাড়াও দক্ষিণখান প্রেমবাগান এলাকা,আর্মি সোসাইটি এলাকা,হলান ও আনল এলাকার শতাধিক ওয়াশ ফেক্টরী,ছোট ছোট গার্মেন্টস ফেক্টরীসহ বিভিন্ন বেকারি গুলো রয়েছে ব্যবসায়ীক হুমকির মুখে।

তুরাগের নলভোগ,রানাভোলা,বাউনিয়া এলাকার বিভিন্ন ফ্যাক্টরী গুলোও যে কোন সময়ে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানান ফ্যাক্টরীর মালিকগণ। উৎপাদ মুখি এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় বাড়ছে বেকারত্ব,ফলে চুরি চিনতাই সহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সড়কে জলাবদ্ধতা, রাস্তা খোঁড়াখোঁড়ি ডেঙ্গু মোশা, বিদ্যুৎ সমস্যা এসব সংকটে নাকাল উত্তরার উত্তরখান, দক্ষিণখান ও তুরাগের বাসিন্দারা। এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে দিন দিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে ও প্রাণহানি ঘটছে।

এই নিয়ে সরকার ও সিটি কর্পোরেশন নানান উদ্যোগ নিলেও সুফল পাচ্ছে না সাধারণ জনগণ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থেকে নাজেহাল হচ্ছেন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিসগামীরাসহ স্কুল,কলেজও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

উত্তরার নতুন ওয়ার্ডের খানাখন্দভরা ভাঙা সড়ক গুলো বর্তমানে মানুষের চরম কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রায়ই নতুন নতুন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। এসময়,এখানকার স্থানীয়রা জানান,মূল সড়কের পাশাপাশি শাখা রাস্তার ও বেহাল দশা। বৃষ্টি ছাড়াই অনেক জায়গায় ড্রেন থেকে ময়লা পানি উঠে রাস্তা তলিয়ে যাচ্ছে।২০১৮ সালে উত্তরখান দক্ষিণখান ও হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদ বিলুপ্ত করে সিটি কর্পোরেশন গেজেট পাশ করা হয়। ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী স্বল্প মেয়াদে নতুন ১৭টি ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি ২য় দফা কাউন্সিল নির্বাচন হয়।

সরেজমিনে এখানকার নতুন ওয়ার্ডের শাখা রাস্তা গুলো ঘুরে দেখা যায়,উত্তরখান – দক্ষিনখান ও তুরাগের সড়ক গুলোতে স্থানীয় নেতা কর্মীদের দলীয় কোন্দলের কারণে উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। ঢাকা-১৮ আসনের নতুন ওয়ার্ড গুলোর রাস্তাঘাট খানাখন্দে ভরা। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা ঘাট ডুবে যায়। অসুস্থ রোগীরা এ রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় ঝাঁকিতে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। গর্ভবতী মহিলা ও শিক্ষার্থীরা নানান ঝুকি নিয়ে এ রাস্তায় চলাচল করে। সু-পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তায় পানি দীর্ঘসময় জমে থাকার কারণে অধিকাংশ রাস্তা মানুষ ও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে ঘুরে আরো দেখা যায়,নতুন ওয়ার্ডের পাড়া মহল্লার রাস্তাগুলো বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং উঠে ইটের সলিং ভেঙ্গে বড় বড় গর্তে পরিনত হয়েছে। এই সমস্যা গুলোর মধ্যেই প্রতিদিন পথ চলতে হচ্ছে উত্তরখান ও দক্ষিনখান ও তুরাগের বাসিন্দাদের। জয়নাল মার্কেট, দক্ষিণখান থানা রোড,বাবুর্চী বাড়ি রোড,কাওলা নর্দাপাড়া আশকোনা প্রাইমারি স্কুল রোগ, উচ্চারটেক মেডিকেল রোড,নগইরাবাড়ী রোড,পন্ডিত পাড়া থেকে সোনার খোলা, সিটি কমপ্লেক্স রোড, দক্ষিনখান বাজার থেকে মাজার রোড, মাস্টারপাড়া হতে বালু মাঠ ও হেলাল মার্কেট হয়ে চানপাড়া,কলাবাগান মুন্ডারোড ও মাউসাইদ এলাকা। তুরাগের দলিপাড়া, বটতলা থেকে ডেসকো অফিস, হয়ে ভুমি অফিস সংলগ্ন রাস্তা, রাজাবাড়ী, ভাটুলিয়া ধউর,নলভোগ,রানা ভোলা ধরংগারটেক, নয়ানগর ফুলবাড়িয়া ছাড়াও এলাকার আভ্যন্তরিন রাস্তা গুলোর এতোটাই খারাপ অবস্থা পায়ে হেটে চলাচলের অনোপযুগী হয়ে উঠেছে।

ভুক্তভুগি এলাকার বাসিন্দারা আক্ষেপ করে বলেন,ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি কর্পোরেশন হওয়ায় বর্তমানে আমরা আরো বেশি বিপদে আছি। আমাদের নিয়মিত ট্যাক্স বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেগুলো পরিশোধ ও করছি কিন্তু আমরা প্রয়োজনীয় নাগরীক সুবিধা তেমন পাচ্ছিনা।

এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের দাবি জানিয়ে, উত্তরখান দক্ষিণ খান, প্রেমবাগান, আজমপুর, নগইরাবাড়ী ও কলাবাগান মুন্ডা, রাজাবাড়ি হেলাল মার্কেট ও হযরত শাহ কবির (রহ.) মাজার এলাকার একাধিক স্থানীয় বয়স্ক ভুক্তভুগি মুরুব্বীগণ বলেন, রাজনৈতিক দন্ধে নেতাদের প্রতিশ্রুতি জাদুঘরেই বন্দি।সরকারি ছুটির দিন ছাড় বাসা বাড়ীতে সকাল বেলা গ্যাস থাকে না। রাস্তা ঘাটও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ ধীর গতিতে চলছে,কাজের গতি বাড়াতে হবে, জনবল বাড়িয়ে এটিকে আরো বেশি বেগবান করতে হবে। এবিষয়ে তারা মেয়র ও ঢাকা ১৮- আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোহাম্মদ হাবিব হাসানের সহযোগিতা কামনা করছে।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন,নতুন ওয়ার্ড গুলোকে মেইন স্টিমিংয়ের সাথে সংযুক্ত করে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, একনেক প্রকল্পের ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা, সরকারি বরাদ্ধের কিছু অংশ ছাড় হওয়ায় নতুন ওয়ার্ডে ড্রেন ও রাস্তা সংস্কার কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারের ভুলে এটি থমকে গেছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ বলেন, সরকারী বরাদ্দের একটা বড় অংশ ছাড় হলেও এটি চাহিদার তুলনায় অনেক কম, তবে উন্নয়নের কাজ চলছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:২৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২১ আগস্ট ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিজয়ের ছড়া
(200 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]