শুক্রবার ১লা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ব্রিকসকে বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর হিসেবে প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২৫ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট

ব্রিকসকে বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর হিসেবে প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের এই বহুমুখী বিশ্বে ব্রিকসকে একটি বাতিঘর হিসেবে প্রয়োজন। আশা করি, আমাদের প্রতি প্রতিক্রিয়ার সময় এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হবে। আমাদের শিশু ও যুবকদের কাছে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে- আমাদের জাতিগুলো সংকটে পড়তে পারে, কিন্তু কখনোই পরাজিত হবে না।

বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডারস ডায়ালগ (ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড দ্য ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ) ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ব্রিকস’-এর সদস্য হিসেবে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া তথাকথিত পছন্দ ও বিভাজনকে ‘না’ বলা উচিত। সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে। সব ধরনের হুমকি, উস্কানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমি বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে এসে বিশ্বব্যাপী জনগণের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও প্রযুক্তির জন্য সবাইকে একসঙ্গে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। জলবায়ু, ন্যায়বিচার, অভিবাসীদের অধিকার, ডিজিটাল ইক্যুইটি এবং ঋণ স্থায়িত্বের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগসহ নিয়ম-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা সংরক্ষণ করতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, উদীয়মান বিশ্বে আমাদের ভাগ্য ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে নিজেদের সামর্থ্যের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু ৫০ বছর আগে যে বার্তা দিয়েছিলেন, তা এখনো সত্য।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, নেলসন ম্যান্ডেলার স্নেহ ও আশীর্বাদ উপভোগ করার জন্য আমি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ব্যক্তিগত সংযুক্তি অনুভব করছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তার মতো জাতির জন্য ত্যাগের জীবন যাপন করতেন। বাংলাদেশের জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধু ১৩ বছরেরও বেশি সময় কারাগারে কাটিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার অনুসরণ করে গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে আমাদের সংহতি পুনরায় নিশ্চিত করতে আমরা এখানে ব্রিকস আউটরিচে এসেছি। আমরা বিশ্বের সব জাতির সঙ্গে বন্ধুত্বের মনোভাব বজায় রাখি, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়।

বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়নের দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আমরা ২০০৬ সালে ৪১.৫ শতাংশ থেকে দারিদ্র্য কমিয়ে ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশ এ নিয়ে এসেছি। একই সময়ে চরম দারিদ্র্য ২৫.০১ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশ কমিয়েছি। সরকার সবার ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করেছে। বিনামূল্যের সামাজিক আবাসন প্রকল্প আশ্রয়ণের অধীনে গৃহহীনতার অভিশাপ দূর করতে চলেছে।

তিনি আরো বলেন, সরকার সারাদেশে ডিজিটাল গণ অবকাঠামো তৈরি করেছে। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ১০৮ শতাংশ সেলুলার মোবাইল সংযোগে অ্যাক্সেস আছে, যা বিশ্বব্যাপী গড় থেকে বেশি। গত অর্থবছরে, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সিস্টেমস ১১১.২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লেনদেন রেকর্ড করেছে। এতে অন্যদের সঙ্গে আমাদের গ্রামীণ নারীরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে আমরা ১০০ মিলিয়ন মানুষের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি, যেখানে সমস্ত লেনদেন অনলাইনে হয়। সরকারি কর্মীরা পেনশন সুবিধা ভোগ করে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা। আমাদের অবকাঠামো, শিল্প এবং ক্লিন জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকে সমর্থন করার জন্য সম্ভাব্য অর্থায়ন প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক আর্থিক নীতি ব্যবস্থাপনা সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করার সময় আমাদের অবশ্যই কার্যকর বিকল্প থাকতে হবে।

মিয়ানমার থেকে আসা ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আফ্রিকায় শরণার্থী-আশ্রয়দানকারী দেশগুলো এর ভার বুঝতে পারেন। আমরা এ মহাদেশের সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন, সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের বিষয়ে আমাদের দক্ষতা ভাগ করে নিতে প্রস্তুত। আমরা সন্ত্রাসবাদ, মানবপাচার, সাইবার অপরাধ এবং মানি লন্ডারিং মোকাবেলায় সহযোগিতা বাড়াতে পারি। পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উন্নীত করার জন্য আমাদের আকাশ ও সামুদ্রিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রমুখ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:০০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৫ আগস্ট ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিজয়ের ছড়া
(199 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]