আজকের অগ্রবাণী ডেস্ক | ১১ জুলাই ২০১৮ | ৭:২৩ অপরাহ্ণ
দীর্ঘ ১৭ দিন থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে থাকার পর ১২ জন কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার করেছেন ডুবুরীরা। অত্যন্ত কঠিন ও বিপদজনক অভিযানের মাধ্যমে গুহা থেকে তাদের নিরাপদে বের করে আনেন ব্রিটিশ ও থাই ডুবুরীরা।
রাশিয়ায় বিশ্বকাপ চলার মাঝপথে থাই কিশোরদের গুহায় আটকে পড়া নিয়ে সমবেদনা জানায় ফুটবল বিশ্বের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। শুধু সমবেদনা জানানোই নয়, মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ দেখার আমন্ত্রণও জানান ফিফার সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। তবে ওই খুদে ফুটবলারদের পক্ষে সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
চলতি সপ্তাহে থাইল্যান্ড ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট সামিওত পোম্পানমুংয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠান ফিফার প্রধান। সেই চিঠিতে যদি সম্ভব হয় তাহলে গুহায় আটকে পড়া কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ রাশিয়াতে উপস্থিত হয়ে দেখার আমন্ত্রণ জানান জিয়ান্নি। তবে উদ্ধার হওয়া খুদে ফুটবলারদের চিকিৎসক জানিয়েছেন, রাশিয়ায় গিয়ে খেলা দেখার মতো শারীরিক অবস্থা নেই তাদের।
উদ্ধারকৃত খুদে ফুটবলারদের বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখতে যাওয়া নিয়ে থাইল্যান্ডের জনসাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সজীব জেসাদা চকেডামরংসুক বলে, ‘তাদের পক্ষে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাদের আরও কিছুদিন চিকিৎসা নিতে হবে। তবে, ফাইনাল খেলা তারা টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে পারে।‘
এদিকে থাই গুহায় থেকে উদ্ধার হওয়া কিশোরদের খেলা দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিশ্বের সেরা দুই ক্লাব বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। আটকে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই তাদের খোঁজ নিতে থাইল্যান্ডে নিয়োজিত থাইল্যান্ডে স্প্যানিশ এম্বাসেডর এমিলিও দে মিগুয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্লাব দুটি। এরপর উদ্ধার হওয়ার খবর জানার পর ন্যু ক্যাম্প ও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে খেলা দেখার আমন্ত্রণ জানায়।
গত ২৩ জুন বার্ষিক ভ্রমণে থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে হারিয়ে যায় ১১-১৬ বছর বয়সী ১২ ফুটবলার ও তাদের কোচ। পরে ২ জুলাই উত্তরাঞ্চলের চিয়াং রাই প্রদেশের থাম লুয়াং গুহায় তাদের সন্ধান পায় উদ্ধারকারী দল।
গুহায় বৃষ্টির পানি প্রবেশ করলে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির পানি আরও বৃদ্ধি পেতে থাকলে গুহার ভেতরের দিকে অবস্থান নেয় তারা। অতঃপর ব্রিটিশ ডুবুরীরা বিপদসংকুল এ গুহার কয়েক কিলোমিটার ভেতরে কর্দমাক্ত চেম্বারে এই ১৩ জনের সন্ধান পান।
কিন্তু সাপের মতো আঁকাবাঁকা এ গুহায় তখনই ঝুকিপূর্ণ উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব হয় না। অন্ধকার এ গুহার একেক জায়গা একেক রকম। কোনো জায়গা পানিতে টইটম্বুর, আবার কোনো জায়গা অনেক উঁচু। কোনো কোনো জায়গা একদম সরু। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দক্ষ সাঁতারু হওয়া দরকার। কৃত্রিম উপায়ে সেখান থেকে পানি সরাতে গেলেও সফল কিছু হওয়ার ছিল না।
আটকে পড়াদের জীবনের ঝুঁকিও দিন দিন বাড়তে থাকে। গুহার অক্সিজেন কমে আসতে থাকে। শনিবার (৭ জুলাই) গুহার অক্সিজেনের পরিমাণ ১৫ শতাংশে নেমে আসে, স্বাভাবিকভাবে যা ২১ শতাংশ প্রয়োজন। উদ্ধার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, গুহায় অক্সিজেন ও খাবার সরবরাহ করা হয়।
এদিকে আটকে পড়াদের অক্সিজেন সরবরাহ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন এক থাই ডুবুরী। উদ্ধার অভিযানের আগে, আটকে পড়া কিশোরদের ডুব সাঁতার শিখতে হয়। ডুবুরীরা তাদের ডুব সাঁতার শেখান।
রোববার (৮ জুলাই) স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। চারজনকে উদ্ধার করে রাত ৯টায় তা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ভেতরে রয়ে যায় আরও নয়জন।
এরপর সোমবার (৯ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে আবারও অভিযানে নামে যৌথ ডুবুরীরা। পরে চারজন উদ্ধার করে সেদিনের মতো অভিযান স্থগিত রাখা হয়। মঙ্গলবার অভিযানে নেমে বাকি পাঁচজনের মধ্যে প্রথমে তিনজন পরে বাকি দুইজনকে উদ্ধার করা হয়।