শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথিবীকে ৪৮ বার প্রদক্ষিণ করেছেন যে নারী!

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

পৃথিবীকে ৪৮ বার প্রদক্ষিণ করেছেন যে নারী!

১৯৬১ সালে ইউরি গ্যাগারিন প্রথম মহাকাশচারী হিসাবে মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে স্থান পেলেন। এরপর তৎকালীন সোভিয়েত ঠিক করল আরো একটি অভিযানের। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ নারী মহাকাশচারীদের নির্বাচন ও বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রায় ৪০০ নারীর মধ্য থেকে নানা ধাপে চূড়ান্ত করা হয়েছিল পাঁচ নারীকে।

এই পাঁচজনের একজন ছিলেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। শুরু হলো ১৮ মাসের কঠিন ট্রেনিং। অবশেষে ১৯৬৩ সালের ১৬ই জুন ভস্তক ৬ (Vostok 6) যাত্রা করলো মহাকাশে। মহাকাশচারী হিসাবে দ্বিতীয়, নারী হিসাবে প্রথমবার ৭১ ঘন্টা ধরে পৃথিবীকে ৪৮ বার প্রদক্ষিণ করে মহাকাশবিজ্ঞানের ইতিহাসে স্থান পেলেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। সে সময় ভ্যালেন্তিনার বয়স ছিল মোটে ২৬ বছর।

৬ই মার্চ, ১৯৩৭ সালে রাশিয়ার ইয়ারোস্লাভ অঞ্চলের মাসলেনিকোভো গ্রামে ভ্যালেন্তিনা জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ট্র্যাক্টরচালক, মা বস্ত্র কারখানায় কাজ করতেন। নিতান্ত গরীব পরিবারে জন্ম ভ্যালেন্তিনার। মাত্র ৮ বছর স্কুলে পড়াশোনা করতে পেরেছিলেন ভ্যালেন্তিনা। এরপর তিনি কলকারখানায় কাজ নিয়েছিলেন। শৈশব থেকেই ভ্যালেন্তিনা স্বপ্ন দেখতেন আকাশে ওড়ার। সেজন্য তিনি স্থানীয় বিমানচালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও যোগ দেন। ১৯৫৯ সালের ২১শে মে, ২২ বছর বয়সে তিনি প্রথম আকাশ থেকে লাফ দেন, প্যারাসুট কাঁধে নিয়ে।

তখনকার সময়ে প্রযুক্তি এত উন্নত না থাকার কারণে মহাকাশচারীদের ক্যাপসুল মাটিতে পড়ার আগে প্যারাসুটে করে তাদেরকে নেমে আসতে হত। মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে কোনও ধারণা না থাকলেও ভ্যালেন্তিনার ১২৬ টি প্যারাসুট লাফের অভিজ্ঞতাই তাকে সুযোগ করে দেয় মহাকাশচারী হিসাবে নিজের নাম সুপারিশ করার জন্য।

ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর তেরেসকোভা একমাত্র মহিলা নির্বাচিত হন মহাকাশে যাওয়ার জন্য। সোভিয়েত একসঙ্গে দুইটি মহাকাশ অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছিল। ভস্তক ৫-এ চড়ে ১৪ই জুন, ১৯৬৩ সালে ভ্যলেরি বয়োস্কি মহাকাশে রওনা দেন। তার দুইদিন পরে ভস্তক ৬-এ করে পাড়ি দেন ভ্যালেন্তিনা। মহাকাশে ভ্যালেন্তিনার হাসিমুখ এবং উড়ন্ত নোটবুক দেখে বিজ্ঞানীরা আশ্বস্ত হলেও পুরো অভিযানের পরিণাম মর্মান্তিক হতে পারতো। প্রায় ৪০ বছর পরে সেই অভিজ্ঞতার কথা বিজ্ঞানীরা সামনে আনেন।

মহাকাশযানের যে সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভ্যালেন্তিনার পৃথিবীতে ফেরার কথা ছিল সেটি কাজ করতে সমস্যা দেখা দেয়। যদিও সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা দ্রুত একটা বিকল্প সমাধান বের করে ফেলেন এবং ভ্যালেন্তিনা অধুনা মঙ্গোলিয়া – চীন – কাজাকিস্থান বর্ডারের কাছে নামেন। সাধারণ গ্রামবাসীরা তাকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ করলে তিনি যোগ দেন এবং এর জন্যে পরে তাকে লাঞ্ছিত হতে হয়। কারণ, মহাকাশ থেকে ফেরার পরে প্রথম নিয়ম হলো নিজের মেডিকেল পরীক্ষা করানো।

এরপর তেরেসকোভা আর কোনোদিন মহাকাশে যেতে পারেননি। দেশে ফিরে তিনি ‘অর্ডার অফ লেনিন’ এবং ‘গোল্ড স্টার পদক’ দ্বারা সম্মানিত হন। তৎকালীন সোভিয়েত তাকে মহাকাশচর্চার মুখপাত্র হিসাবে নিয়োগ করে এবং এই দায়িত্বে থাকাকালীন রাষ্ট্রপুঞ্জ তাকে স্বর্ণপদক দেয় বিশ্বশান্তিতে। ১৯৬৩ সালের ৩রা নভেম্বর ভ্যালেন্তিনা নিজের সহকর্মী, মহাকাশচারী এন্ড্রিয়ান নিকোলায়েভকে বিয়ে করেন। তাদের প্রথম মেয়ে এলেনাকে নিয়ে সোভিয়েত মেডিকেল দল যথেষ্ট কৌতূহলী ছিল কারণ, এলেনা বিশ্বের প্রথম সন্তান যার পিতামাতা দুজনেই মহাকাশে সময় কাটিয়ে এসেছেন!

২০০৮ সালে ২৯তম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের (বেজিং অলিম্পিক) সেন্ট পিটার্সবার্গ অংশে তিনি মশাল বহন করেছিলেন। সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নানা মর্যাদাপূর্ণ খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। পেয়েছিলেন ‘হিরো অব দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন’,‘দ্য অর্ডার অব লেনিন’ প্রভৃতি সম্মাননা।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, অ্যাডভেঞ্চার জার্নাল ডটকম, ব্রিটানিকা এবং উইকিপিডিয়া অবলম্বণে

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(219 বার পঠিত)
(198 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০  
সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]