সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাশের মিছিলের মধ্যে হঠাৎ আনন্দাশ্রু

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

লাশের মিছিলের মধ্যে হঠাৎ আনন্দাশ্রু
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর প্রায় পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। ঘণ্টার হিসাবে শত ঘণ্টারও বেশি। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা। ধ্বংসস্তূপ সরালেই মিলছে লাশ। তারই মধ্যে বিস্ময়করভাবে শিশুসহ কয়েকজন মানুষকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনা চরম বিষাদের মধ্যে ক্ষণিকের জন্য হলেও হঠাৎ খুশির জোয়ার আনছে।

বাংলাদেশ সময় গত রাত ৯টা পর্যন্ত পাওয়া খবরে ভূমিকম্পে মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ২২ হাজার। গতকাল রাত ১২ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২২ হাজার ৭৬৫ জন। তুরস্কে ১৯ হাজার ৩৮৮ জন এবং সিরিয়ায় তিন হাজার ৩৭৭ জন।

ধ্বংসস্তূপ সরালেই অনবরত বেরিয়ে আসছে লাশ। তুরস্কের উদ্ধারকর্মী ইসমাইল হাক্কি কালকান গতকাল বলেন, ‘আমাদের হৃদয় আর এমন দৃশ্য নিতে পারছে না।’

জীবিতরাও নাকাল হচ্ছে তীব্র শীতে। ঘরহারা অনেকে নিজেদের গাড়িতে বাস করছে। কেউ কেউ কোনো রকম তাঁবু বানিয়ে রাত পার করছে। দুর্যোগকবলিত বিস্তীর্ণ দক্ষিণ অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কোটি মানুষের মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার তাঁবু এবং ১২ লাখ কম্বল সরবরাহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ (আফাদ)। অনেকে বলছে তা যথেষ্ট নয়।

শীতের মধ্যে যথাযথ আশ্রয় ও শীতবস্ত্রের অভাবে মৃত্যুর মিছিল আরো লম্বা হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়েও জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। আদিয়ামান প্রদেশের বাসিন্দা হাকান তানরিভেরদি বলেন, ‘যারা ভূমিকম্পে মারা যায়নি, তাদের শীতে মারা যাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।’

দুর্যোগ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যাওয়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান নিজেও স্বীকার করেছেন উদ্ধারকাজের সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতার কথা। তিনি বলেন, ‘অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা যতটা দ্রুত প্রয়োজন সাহায্য পৌঁছাতে পারিনি।’ একই সঙ্গে এক লাখ ৪১ হাজারের কর্মী বাহিনী নিয়ে তুরস্ক বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে দাবি করেন এরদোয়ান।

এমন বেদনা ও হতাশার মধ্যেও কিছু মানুষ আনন্দাশ্রুতে ভাসছে শত ঘণ্টা পরও স্বজনকে জীবিত ফিরে পেয়ে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ভূমিকম্পের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই কেবল জীবিত অবস্থায় মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এরপর সে সম্ভাবনা দ্রুত ক্ষীণ হতে থাকে। তবে গত সোমবার ভোরের ভয়াবহ ভূমিকম্পের ১০৫ ঘণ্টা পর ইউসুফ হুসেইন নামে এক দেড় বছরের শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে আনতাকিয়া শহরে। এর ২০ মিনিট পরই উদ্ধার করা হয় সাত বছর বয়সী মোহাম্মেদ হোসেইনকে।

জার্মানির জরুরি বিভাগের কর্মীরা ভূমিকম্পের ১০৪ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করেছেন ৪০ বছর বয়সী জেইনেপ কাহরামানকে। উদ্ধারের পর আশপাশের সবাইকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করেন এই নারী। ঘটনাস্থলে থাকা আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দলের নেতা স্টিভেন বেয়ার বলেন, ‘এখন আমি অলৌকিকতায় বিশ্বাস করি।’

গতকাল আনতাকিয়া থেকেই উদ্ধার করা হয় তিন বছরের শিশু জেইনাপ ইলা পারলাককে। আদিয়ামান প্রদেশে উদ্ধার করা হয়েছে ৬০ বছর বয়সী ইউপ একে-কে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দু গাজিয়ান্তেপেও এক শিশুসহ দুজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে গতকাল।

আদিয়ামানে কর্মরত চেক প্রজাতন্ত্রের উদ্ধারকারীরা টুইট করে গতকাল দুজনকে জীবিত উদ্ধারের কথা জানান।

এর আগে ধ্বংসস্তূপে ৯০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার হাতেয় প্রদেশে ১০ দিন বয়সী নবজাতক ও তার মাকে জীবিত উদ্ধারের কথা জানিয়েছে তুরস্কের কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটিকে ‘অবিশ্বাস্য’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে গণমাধ্যমে। উদ্ধারের পর নবজাতককে কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে শিশুটির মাকে আলাদাভাবে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে মা এবং নবজাতকের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানা যায়নি।

আয়াকে দত্তক নিতে চায়
হাজারো মানুষ

এদিকে তুরস্কের পাশের দেশ সিরিয়ার একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচেই জন্ম নেওয়া এক মেয়েশিশুকে দত্তক নিতে চাইছে হাজার হাজার মানুষ। মেয়েটির মাসহ অন্য স্বজনরা মারা গেছে।

উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার জিনদায়রিস শহরের একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে উদ্ধার করা শিশুটির নাম রাখা হয়েছে আয়া। এর অর্থ অলৌকিক।

ভূমিকম্প আয়ার মা, বাবা এবং চার ভাই-বোনের সবার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। শিশুটিকে উদ্ধারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

মানবিক সহায়তা পরিস্থিতি

গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়ায় জাতিসংঘের সহায়তার দ্বিতীয় বহর তুরস্ক সীমান্ত পেরিয়েছে। জানা গেছে, এতে তাঁবু, কম্বল ও বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের ১৪টি ট্রাক আছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রথমবার বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছে দেয় জাতিসংঘ। বিদ্রোহীদের দখলে থাকা এসব অঞ্চলে এত দিন ত্রাণ পৌঁছে দেওয়াও দুরূহ ছিল।

এদিকে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে সাড়ে আট কোটি মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কানাডা এরই মধ্যে এক কোটি কানাডিয়ান ডলার দান করার পর আরো এক কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি ও এনডিটিভি

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:৩৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(238 বার পঠিত)
(204 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]