নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পর বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন, শান্তি ফিরবে মধ্যপ্রাচ্যে। সেটিই এখন দেখছে বিশ্ব। বিবদমান দেশগুলো দীর্ঘদিনের বিভেদ ভুলে ঐক্যে ফিরছে। নিজেদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আবার শুরু করতে জোর আলোচনা চালাচ্ছে। এসব আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব।
গত বুধবার দেশটির রাজধানী রিয়াদে আলোচনায় মিলিত হয় কাতার ও বাহরাইন। এ ছাড়া মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি বৈঠক করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমিরের সঙ্গে। অন্যদিকে, আলোচনায় বসছে ইরান ও সিরিয়া। রিয়াদভিত্তিক এক আরব কূটনীতিক বলেছেন, ইরান ও সিরিয়ার নেতারা একই দিনে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন, এটি কয়েক মাস আগেও ছিল অকল্পনীয়। খবর এএফপি ও আলজাজিরার।
উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে বুধবার ইরান ও সিরিয়ার নেতাদের যুগান্তকারী সফর হয়েছে রিয়াদে। এই দুই দেশকে একই সঙ্গে রিয়াদ সফরে মধ্যস্থতা করেছে সৌদি আরব। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর দেশ দুটির মধ্যে এটিই এ ধরনের প্রথম সফর।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ তাঁর সৌদি প্রতিপক্ষের সঙ্গে দেখা করেছেন। সিরিয়ার সংকটের সম্পূর্ণ রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, সিরিয়াকে আরব দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি আরব বিশ্বে দেশটির স্বাভাবিক ভূমিকা আবার শুরু করাই এর লক্ষ্য। কনস্যুলার সেবা ও ফ্লাইট পুনরায় চালু করার পরিকল্পনার কথাও জানান দুই নেতা।
এদিকে, ইরানের প্রেসিডেন্টও শিগগিরই সৌদি আরব সফর করবেন। এ ছাড়া, চলতি সপ্তাহে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা করেছে সৌদি প্রতিনিধিরা। আজ শুক্রবার ৯টি আরব দেশের প্রতিনিধি জেদ্দায় বৈঠক করবেন। আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলনে সিরিয়ার যোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে সেখানে।
এদিকে, দীর্ঘদিনের বিরোধ সমাধানে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করছে কাতার ও বাহরাইন। গত বুধবার দেশ দুটির প্রতিনিধিরা রিয়াদে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সদর দপ্তরে বৈঠক করেন।
এ বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, জিসিসি সনদ অনুযায়ী উপসাগরীয় ঐক্য-সংহতি বাড়াতে বৈঠকে আলোচনা করেছে উভয় পক্ষ। বৈঠকে অংশ নেন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল আহমেদ বিন হাসান আল-হাম্মাদি ও বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি শেখ আবদুল্লাহ বিন আহমেদ আল খলিফা। তাঁরা ২০১৭ সালের বিবাদ মীমাংসা নিয়ে আলোচনা করেন। সৌদি আরবের সঙ্গে ওই বছরই জোট বাঁধে বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর। ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করেছিল দেশগুলো।
গত বুধবার কায়রো সফর করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমির শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। সেখানে তিনি বৈঠক করেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে।
সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি নিয়ে আশাবাদী হলেও এ চুক্তি আসলে কত দিন টিকবে, তা নিয়ে এখনও অনেক বিশ্লেষক সন্দিহান। কারণ, এ দুই বৈরী দেশের রেষারেষির পেছনের মৌলিক কারণগুলো সহসা দূর হওয়ার সম্ভাবনা কম। তারপরও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে চীনের প্রবেশ একটি মোড়-ঘোরানো পর্ব। কারণ, অঞ্চলটিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র অনুপস্থিত, আর মুখ্য ভূমিকায় আছে চীন।
Posted ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin