বুধবার ২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে দুই মেরুতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২৫ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট

যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ নেই। সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন স্থগিত থাক, এমনটাই চাওয়া ওয়াশিংটনের। আর বেইজিং চাইছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু হোক। বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে দুই দেশ এভাবেই দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার ঢল শুরুর পর থেকে তাদের প্রত্যাবাসন ঢাকার অন্যতম অগ্রাধিকার। তবে এ প্রত্যাবাসন যাতে মর্যাদাপূর্ণ, নিরাপদ এবং স্বেচ্ছায় হয়, তা নিয়ে চাপ রয়েছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের। বাংলাদেশও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের এ প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে একের পর এক অসফল প্রচেষ্টা চালিয়েছে বেইজিং।

 

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এবারও বর্ষা মৌসুমের আগেই পাইলট প্রত্যাবাসন সফল করতে চেয়েছিল বেইজিং। তবে রোহিঙ্গারা বেঁকে বসলে তা আর সম্ভব হয়নি। এখন বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে প্রত্যাবাসনের আরও একটি চেষ্টা চালাচ্ছে চীন। আর এ উদ্দেশ্যে চীনের এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত দেং সিজুন একাধিকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। এমনকি চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমার বৈঠকও করেছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতে। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দেওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ায় এ সংকট সমাধানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে নিজ মুকুটে আরেকটি পালক যোগ করতে চাইছে চীন।

তবে পুরো পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে দেখে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারে সেনা শাসনের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি মনে করে, মিয়ানমারে গণতন্ত্রের অভাবের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এখনও সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়নি। যেহেতু পরিবেশ এখনও সহায়ক নয়, ফলে প্রত্যাবাসন হলে তা টেকসই হবে না। যেমন– সত্তর ও নব্বই দশকে রোহিঙ্গারা ফেরত গেলেও মূল সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তারা আবার বিতাড়িত হয়েছে নিজ ভূমি থেকে। তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানের কারণ আসলে ভূ-রাজনৈতিক বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের এভাবে দুই মেরুতে অবস্থানকে ভূ-রাজনৈতিক বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। সমকালকে তিনি বলেন, চীন মনে করে, রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হলে পশ্চিমারা এ অঞ্চলে আরও সক্রিয় হতে পারে। এখানে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বেশি সক্রিয় হলে তা চীনের জন্য অস্বস্তির হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ‘বার্মা অ্যাক্ট’-এর আওতায় বড় ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিলে চীন এ অঞ্চলে বেকায়দায় পড়বে। এ কারণে চীন চাইছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান।

সাবেক এই কূটনীতিক মনে করেন, পুরো প্রক্রিয়াটি মিয়ানমারকে সঙ্গে রেখে করতে চাইছে চীন। বেইজিং কোনোভাবেই মিয়ানমারকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে না। কারণ কোনো কারণে মিয়ানমার মার্কিন বলয়ে চলে গেলে ঝুঁকিতে পড়বে চীন। নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্র জানায়, গত ২৪ মে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তার পরদিন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য অপেক্ষার সময় মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন পিটার হাস। সেই কর্মকর্তা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এখনও না হওয়ার পেছনে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, প্রত্যাবাসনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো, যা পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একাধিকবার গণমাধ্যমে বলেছেন। কূটনৈতিক সূত্রের মতে, রোহিঙ্গা সংকট যত দীর্ঘায়িত হবে, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের অবস্থান এ অঞ্চলে তত দৃঢ় হবে। এর মাধ্যমে তাদের সরব উপস্থিতি থাকবে। এতে চীনকে কোণঠাসা করা সহজ হবে। অন্যদিকে চীনের উদ্বেগের কারণ হচ্ছে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদের উপস্থিতি। মিয়ানমারসহ চীন সীমান্তে প্রতিবেশীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে বেইজিং। ফলে দুই শক্তিধর দেশের ভিন্ন অগ্রাধিকার ও স্বার্থের বলি হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট।

এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রত্যাবাসনে বাধা না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা নিজ ভূমিতে ফেরত যেতে চায়। যদিও সেখানে তাদের ঘরবাড়ি নেই, তবে অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে সেখানে একটি দল গেলে, কী কী ধরনের সমস্যা রয়েছে, তা চিহ্নিত হবে। এটা পরে নিয়মিত প্রত্যাবাসন শুরুর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

অনুদান কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে প্রতিবছর সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চলতি বছর থেকে সেই সহায়তা বেশ কমিয়েছে দেশটি। তবে এখনও অনুদানে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে চলতি বছরের আট মাসে চাহিদার মাত্র ২৯ শতাংশ তহবিল জোগাড় করতে পেরেছে জাতিসংঘ। তহবিল কমে যাওয়াকে হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল কমানোর পেছনে ঢাকা-ওয়াশিংটনের বর্তমান সম্পর্ক কোনোভাবে প্রভাবিত করছে কিনা– জানতে চাইলে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার সমকালকে বলেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সালে থেকে এখন পর্যন্ত ২১০ কোটি ডলার সহযোগিতা করেছে। রোহিঙ্গাদের টেকসই জীবন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পুরো বিশ্বে মানবিক সহায়তার চাহিদা বাড়ছে। ফলে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সংকটে তহবিল কমেছে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতাদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের সহায়তায় একত্রে কাজ করবে বলে জানান তিনি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:০৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৫ আগস্ট ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(239 বার পঠিত)
(204 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]