নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সমন্বয় নীতির উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবছর একত্র হন বিশ্বনেতারা। তবে প্রশ্ন উঠেছে– জি২০ তার লক্ষ্যে কতটা অগ্রগতি অর্জন করেছে? আগামী শনি ও রোববার ভারতে এ বছরের বৈঠক থেকে কতটা আশা করা যায়? যেখানে রাশিয়া ও ইউক্রেনে যুদ্ধ ঘিরে পুরো বিশ্ব বিভক্ত হয়ে পড়েছে। চীনসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান যোগ না দেওয়ায় এরই মধ্যে নয়াদিল্লির সফলতা অনিশ্চয়তায় পড়েছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও আলজাজিরার।
তবে ১৯৯৯ সালে গঠিত হওয়ার পর জি২০-এর বেশির ভাগ যৌথ বিবৃতিতে জটিল সমীকরণ উঠে এসেছে। দেশগুলো সামগ্রিক স্বার্থে ঐকমত্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ জোটের প্রতিষ্ঠার শুরুতে অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা বৈশ্বিক আর্থিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন। পরে ২০০৭ সালে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর এটি রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ে উন্নীত এবং ২০০৯ সালে এটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরাম হিসেবে মনোনীত হয়। জি২০ সর্বশেষ করোনা টিকার পেটেন্ট বা মেধাস্বত্ব প্রত্যাহারসহ মহামারিতে শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হয়। যদিও সেসময় তারা বিশ্বের কয়েকটি দরিদ্র দেশের ঋণ পরিশোধ স্থগিত করতে সম্মত হয়েছিল।
উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, জি৭ ও জি২০ বিভিন্ন কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। গ্রুপ অব সেভেনে শুধু উন্নত দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকায় এটি ছোট এবং অনেক বেশি প্রভাবশালী। আবার জি২০ এর গুরুত্ব হলো– এটি পুরো বিশ্বের প্রতিফলন। এর সদস্যদের মধ্যে এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, জি২০ খুব কঠিন ভূরাজনৈতিক জটিলতার মধ্যে পড়েছে। এতে জোটটির সক্ষমতাও সীমিত হয়ে পড়েছে। যে কোনো প্রেক্ষাপটে চীন ও রাশিয়ার মতো একই তাঁবুর নিচে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা থাকলে সমস্যা অনিবার্য। এই উত্তেজনা আরও বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে। এটি বিশ্বকে বিভক্ত করেছে।
আবার বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হলেও জি২০ দক্ষিণ এশিয়ায় উদ্বেগ উপেক্ষা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক ও নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হ্যাপিমন জ্যাকব বলেন, ভারত সরকার স্বীকার করছে, জাতিসংঘের ব্যবস্থার নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে এবং বিকল্প ও অ-পশ্চিমা ফোরাম বা দুটির মিশ্রণ থাকা প্ল্যাটফর্মগুলোর কিছু দায়িত্ব নিতে হবে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে মনোনিবেশ করেছে এবং তারা বিশ্বাস করে এটি বৈশ্বিক সংঘাত। কিন্তু যখন গ্লোবাল সাউথের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, যেমন জলবায়ু সমন্বয় তহবিল বা শ্রীলঙ্কা যখন দেউলিয়া হলো তখন পশ্চিমাদের তেমন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
প্রকৃতপক্ষে, গত বছরের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া জি২০ সভাপতিত্বের মাধ্যমে ভারত ইউক্রেনের যুদ্ধ ঘিরে ঐকমত্য তৈরির জন্য লড়াই করেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো সর্বশেষ সভাপতিত্ব করা ইন্দোনেশিয়াকেও জর্জরিত করেছিল। নয়াদিল্লি আরও ভালো কিছু করার আশা করছে। তবে সাফল্য এরই মধ্যে অনিশ্চয়তায় পড়েছে। বিশেষ করে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রথমবারের মতো শীর্ষ এ সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এতে অংশ নেবেন না এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোরেরও যোগ দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। সদস্যদের মধ্যে এ বিভাজনের কারণে সম্মেলন শেষে ভারত যদি একটি যৌথ ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়, সেটা হবে চরম বিব্রতকর।
Posted ৩:২০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin