নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
মধ্য মরক্কোয় শুক্রবার রাতে যে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, এই এলাকাতে এত শক্তিশালী ভূমিকম্প ১৯০০ সালের পর আর দেখা যায় নি। এরইমধ্যে এতে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় দুই হাজার মানুষ। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান এদের মধ্যে ১৪০০ এর বেশি মানুষ মারাত্মকভাবে আহত। খবর বিবিসির
যারা শারীরিকভাবে আহত হননি তারা এখনো ভয়ংকর মানসিক আঘাতের মধ্যে আছেন।
দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা এমএপি জানিয়েছে দেশটিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মারাকেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে।
ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশের নিচে থাকা দুই টেকটোনিকে প্লেটের সংঘর্ষ থেকেই এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি।
মনে করা হচ্ছে এই অঞ্চলের ভূ-অভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের ফলে অ্যাটলাস পাহাড়ে যে ধাক্কা লাগছে তার সাথে এই ভূমিকম্পের সম্পর্ক আছে।
ইতিহাস বলছে, শুক্রবার রাতে ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল যে এলাকা, তার আশেপাশে ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০০ সালের পর কখনোই ছয় মাত্রার উপরে ভূমিকম্প দেখা যায় নি।
তাই এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে অপরিচিত থাকার একটা প্রভাব তো পড়েছেই। এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকেরই ভূমিকম্পের কোন স্মৃতি আছে, ফলে সেরকম প্রস্তুতিও থাকার কথা না।
এছাড়া বেশিরভাগ ভূমিকম্প, যেগুলো রাতে আঘাত হানে, দেখা যায় সেগুলোতে মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। কারণ মানুষ সাধারণত এই সময়টায় ধ্বসে পড়া ভবনের ভেতরে অবস্থান করে।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে তাদের মডেল দিয়ে অনুমান করে যে এ ধরণের দুর্যোগে কি পরিমাণ হতাহত ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। আর তাদের মডেল বলছে মৃতের সংখ্যা অন্তত পাঁচ হাজারে গিয়ে ঠেকতে পারে।
ফলে মরক্কোয় ভূমিকম্পের পর বর্তমান হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এবং ভূমিকম্পের দ্বিতীয় ধাক্কার সম্ভাবনাও আছে। হিসাব অনুযায়ী ধারণা করা হয় দ্বিতীয় ধাক্কা প্রধান ভূমিকম্পের চেয়ে ১ মাত্রা কম শক্তিশালী হয়ে থাকে।
কিন্তু এর চেয়েও ছোট কম্পনে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতিটা সবচেয়ে মারাত্মক হয়েছে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ মেদিনার বিভিন্ন অংশে। এছাড়া পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ঐতিহাসিক কুতুবিয়া মসজিদের মিনারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া আরও বেশ কিছু শহর ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির শিকার। তবে অনেক দূরের যে অঞ্চল বিশেষ করে পাহাড়ি গ্রামের দিকে ক্ষয়ক্ষতিটা এখনো পরিষ্কার হওয়া যাচ্ছে না।
‘এক সেকেন্ডকেই যেন একটা মিনিট বলে মনে হচ্ছিল। এরপর মানুষের চিৎকার, সবাই বাড়ি ঘর ছেড়ে বের হয়ে আসতে থাকে…খুবই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ছিল,’ মারাকেশের বাসিন্দা মিনা মেতিওই বিবিসিকে বলছিলেন ভূমিকম্পের শব্দ ছিল ফাইটার জেটের মতো।
জাতিসংঘ বলছে ভূমিকম্পে মারাক্কেশের অন্তত ৩ লাখ লোক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। সংস্থাটি মরক্কো সরকারের সাথে মিলে উদ্ধার সহায়তা করার কথা জানিয়েছে।
উদ্ধারকাজ এখনো চলমান, কিন্তু ধ্বংসস্তুপের ভেতরে উদ্ধার কাজ চালাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা।
কর্তৃপক্ষ সবাইকে রক্তদানের আহবান জানিয়েছে। যাতে এগিয়ে এসেছে জাতীয় দলের ফুটবলাররাও।
Posted ৬:২৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin