নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
২০২৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ইয়োন ফসে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় স্টকহোমে অবস্থিত সুইডিশ একাডেমি থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে পুরস্কার দেওয়া হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর। নোবেলজয়ী ইয়োন ফসে পাবেন ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার, যা বাংলাদেশি ১০ কোটি টাকা সমমানের।১৯৫৯ সালে নরওয়ের পশ্চিম উপকূলে হাউজসুন্ডে জন্মগ্রহণ করেন ইয়োন ফসে। স্ট্র্যান্ডেবার্মে বেড়ে ওঠেন। সাত বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনায় প্রায় মরতে বসা ইয়োন ফসে সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী সাহিত্যিকদের একজন। নরওয়ের এই কথাসাহিত্যিক নাট্যকার হিসেবে সমধিক পরিচিত। নরওয়েতে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতাকে শৈল্পিক সুষমায় লেখনিতে তুলে ধরেছেন ইয়োন ফসে। সাহিত্যকর্মে মানুষের উদ্বেগ ও দোদুল্যমানতার বিষয়গুলোকে তুলে ধরতে পারার জন্য তিনি বিশেষভাবে প্রশংসিত। ফসে যা লিখেছেন, তা মূলত তাঁর শৈশবের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা এবং এটি শিল্পী হিসেবে তাঁকে গড়ে তুলেছে বলে বিশ্লেষকদের মত। তবে কৈশোরে তিনি রকস্টার হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতেন।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ইয়োন ফসের অভিনব নাটক ও গদ্য অবলাকে কণ্ঠ দেয়। এসব অনন্যসাধারণ কাজের জন্যই তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ইয়োন ফসের উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে- ‘আ নিউ নেইম’, ‘অ্যালিস অ্যাট দ্য ফায়ার’, ‘মেলাঙ্কলি’, ‘আ শাইনিং’ এবং ‘সেপ্টোলজি’ (সাত সিরিজের উপন্যাস) বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ফসে নাট্যকারের কাজ থেকে বিরতি নিয়ে সেপ্টোলজি লেখা শুরু করেছিলেন। এটি ২০১৩ সালের কথা, যখন তিনি ক্যাথলিক খ্রিষ্টান হিসেবে রূপান্তরিত হন। সাত উপন্যাসের এ সিরিজটি নরওয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে একা বসবাসকারী একজন বয়স্ক চিত্রশিল্পী এসলের জীবনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। সেখানে আরেক শহরে (জর্গভিন) বাস করা আরেক এসলেকে দেখানো হয়, যিনি অ্যালকোহলে আসক্ত।
তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘রেড, ব্ল্যাক’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৩ সালে। তাঁর প্রথম নাটক ‘অ্যান্ড নেভার শ্যাল উই পার্ট’ ১৯৯৪ সালে বার্গেনের ন্যাশনাল থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়। ১৯৯৯ সালে ফরাসি পরিচালক ক্লদ রেজি নাতেঁরেতে এটি মঞ্চস্থ করার পর তিনি সাহিত্য মহলের আলোচনায় আসেন। নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স ওলসন বলেন, ‘তাঁর (ইয়োন ফসে) বিশাল রচনাভান্ডার বিভিন্ন ধারায় বিস্তৃত। এ ভান্ডারে রয়েছে ৪০টির মতো নাটক, বেশ কয়েকটি উপন্যাস, কবিতা সংকলন, প্রবন্ধ, শিশুতোষ গ্রন্থ এবং অনুবাদের বিশাল সংগ্রহ। ফসে তাঁর রচনায় শৈল্পিক কৌশলের সঙ্গে নরওয়েজিয়ান পটভূমি এবং ভাষার গভীরতা মিশ্রিত করেছেন।’
ফসের প্রকাশক জ্যাক টেস্টার্ড ইয়োন ফসের নোবেল জয় সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি একজন ব্যতিক্রমী লেখক, যিনি কথাসাহিত্যে সম্পূর্ণ অনন্য উপায় খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর বইয়ের নরওয়েজিয়ান সম্পাদক সিসিলি সিনেস সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে যেমনটা বলেছিলেন– আপনি যদি ইয়োনের কোনো বই খুলে বসেন এবং কয়েক লাইন পড়েন; তাহলে নিশ্চিত করেই বুঝতে পারবেন– এটি অন্য কেউ লিখতে পারবেন না। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, তিনি নরওয়ের সংখ্যালঘু ভাষা, নিরস্ক বা নিউ নরওয়েজিয়ান ভাষায় লেখেন। এটি নিশ্চিতভাবেই একটি রাজনৈতিক কাজ। তিনি একজন ব্যতিক্রমী নাট্যকার ও কবি। অভাবনীয় মনের অধিকারী এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ফসে।’
তবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারও বিতর্কের বাইরে থাকেনি। অনেক সমালোচকের মতে, ১৯০৭ সালে লিও তলস্তয়কে নোবেল পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। আবার ২০১৫ সালে বেলারুশের সাংবাদিক সভেৎলানা আলেক্সেয়িভিচকে সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার প্রদান ছিল সাহিত্যমোদীদের জন্য এক ধাক্কা। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে মার্কিন কণ্ঠশিল্পী বব ডিলানকে নোবেল পুরস্কার প্রদানের পর এ পুরস্কারের গতিপ্রকৃতি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। ২০১৯ সালে পিটার হানৎকা, ২০২০ সালে কবি লুই গ্লিক এবং ২০২১ সালে আবদুররেজাক নোবেল পুরস্কার পাবেন সেটাও ছিল কল্পনাতীত। তারা কেউই প্রথিতযশা লেখক নন। তবে ২০২২ সালে আনি এরনোর নোবেল জয় ছিল অনেকটা প্রত্যাশিত। এ নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা চলছিল। এ বছরও সেই ধারা অব্যাহত রেখে প্রত্যাশা অনুযায়ীই পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে।
এবার নোবেল পুরস্কারের জন্য অনেক সাহিত্যিকের কথা এলেও যে দু’জনের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে, তারা হলেন– চীনা লেখিকা চান শুয়ে ও ইয়োন ফসে। ইয়োন ফসে এবার নোবেল পাওয়ায়, চান শুয়ের জন্য পরের বছর সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
Posted ৪:৪৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin