সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্যের পর ক্ষমা চাইলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গত ৭ অক্টোবর দেশটিতে হামাসের হামলা ঠেকানোর ব্যর্থতায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করেন তিনি। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে রোববার তিনি আগের টুইট মুছে দিয়ে নতুন এক টুইটে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কাজের প্রতিও পূর্ণ সমর্থন দেন। তাঁর এ বক্তব্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর তীব্র মতবিরোধের বিষয়টিই প্রকাশ্যে এসেছে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
নেতানিয়াহু বলেছিলেন, হামাসের হামলার আগে তাঁকে গোয়েন্দা সতর্কতা পাঠানো হয়নি। এ জন্য তিনি সেনাপ্রধান এবং শিন বেত প্রধানের ওপর দোষ চাপান। কিন্তু নতুন টুইটে তিনি বলেন, ‘আমি ভুল ছিলাম। আমি যা বলেছি তা উচিত হয়নি। এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আমি সব নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি।’ সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার টুইট করার পরই ইসরায়েলের রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েন নেতানিয়াহু। এতে যুদ্ধ মন্ত্রিসভায় ফাটল দেখা দেয়। অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল এবং ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ বলেন, তাঁর ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। পরে সেই দাবি মেনে নেন যুদ্ধবাজ নেতানিয়াহু।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল রোববার পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি মৃত্যু ছাড়িয়েছে ৮ হাজার। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। এ ছাড়া পশ্চিম তীরে আরও ১১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৯০০ জন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে ৭ অক্টোবর থেকে অন্তত ৩৩১ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। অন্তত ২৩০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস।
গাজায় খাদ্যাভাবে জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষের। ফলে শনিবার গাজার দেইর আল-বালাহে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তার পণ্য সংরক্ষণ এবং বিতরণ কেন্দ্রে ঢুকে পড়ে শত শত মানুষ। তারা সেখানে মজুত থাকা আটাসহ বিভিন্ন পণ্য ছিনিয়ে নেয়। গতকাল রোববার পর্যন্ত ২২ দিনের যুদ্ধে মাত্র ৮০টি লরিকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। ফলে ২০ লাখের বেশি গাজাবাসী কার্যত না খেয়ে বেঁচে আছে। ৭ অক্টোবরের আগে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল সতর্ক করেছেন, হামাস শাসিত গাজার পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। এই রক্তপাত বন্ধ করতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান ফের ব্যক্ত করেন তিনি। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু সফরে গুতেরেস বলেন, গাজার পরিস্থিতি প্রতি ঘণ্টায় খারাপ হচ্ছে। বেসামরিক মানুষ হত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে ইসরায়েলি বর্বর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে বিশ্বজুড়ে। গতকাল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বড় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায়। কোঝিকোড়ে আয়োজতি সমাবেশে এক লাখের বেশি মানুষ অংশ নেয় বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ। এ ছাড়া পাকিস্তানের ইসলামাদ, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, লেবাননের বৈরুত, জার্মানির বার্লিন, মিউনিখ ও স্টুটগার্ট, স্পেনের মাদ্রিদ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায়ও ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি সমাবেশ হয়েছে।
এক দিনে আরও ৪৫০ স্থানে হামলা
ইসরায়েল দাবি করেছে, শনিবার রাতে গাজার ভেতরে আরও বেশ কিছু ইসরায়েলি সেনা প্রবেশ করেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় হামাসের আরও ৪৫০ লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এক দিন গাজায় পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখে ইসরায়েল। তবে রোববার থেকে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সংযোগ আবারও চালু হয়।
গাজায় মুখোমুখি যুদ্ধ
গতকাল পর্যন্ত বড় মাপের কোনো স্থল আক্রমণ হয়নি। তবে গত ক’দিন গাজা উপত্যকার উত্তরে বিমান হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। হামাসসহ যোদ্ধা দলগুলো বলছে, তারা এখন পর্যন্ত গাজা উপত্যকার দক্ষিণ দিকের রাফাহ থেকে শুরু করে উত্তর দিকে ইসরায়েলি বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছে।
কূটনীতিক প্রত্যাহারের জবাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তুরস্ক। গত শনিবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী কূটনীতিকদের প্রত্যাহার এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক থাকবে কিনাু তা নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনার কথা জানান। এর জবাবে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েল সমালোচনা ও নিন্দা সহ্য করতে পারে না। এমনকি দেশটি পুরো বিশ্বের সামনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।