শুক্রবার ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘কৌতূহলের বশে’ খুন করেছিলেন কোরিয়ান তরুণী

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

দক্ষিণ কোরিয়ার একটি আদালত ২৩ বছর বয়সী এক তরুণীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি ‘কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে’ অপরিচিত এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন।

এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ওই তরুণীর নাম জুং ইয়ু-জং। টেলিভিশনে দেখানো বিভিন্ন ক্রাইম শো এবং উপন্যাসের প্রতি আচ্ছন্ন ছিলেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, সাইকোপ্যাথ পরীক্ষায়ও তার নম্বর অনেক বেশি।

জানা গেছে, ‘খুন করতে কেমন লাগে’ সেটি দেখার কৌতূহল থেকে ইয়ু-জুং একটি অ্যাপের মাধ্যমে ইংরেজি-ভাষার এক শিক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর গত মে মাসে তার বাড়িতে গিয়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন।

এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড দক্ষিণ কোরিয়াকে হতবাক করে দিয়েছিল। কৌসুঁলিরা ইয়ু-জুংয়ের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন। তারা আদালতকে বলেছিলেন, জুং একজন নিঃসঙ্গ বেকার। পিতামহের সঙ্গে থাকতেন। কাকে খুন করবেন তা স্থির করতে একটি টিউটরিং অ্যাপ ব্যবহার করে তিনি কয়েক মাস ধরে শিকার খুঁজেছেন।

একাজ করতে গিয়ে ইয়ু-জুং ৫০ জনেরও বেশি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। মূলত নারীরাই ছিল তার প্রথম পছন্দ। তাদের কাছে জুং জানতে চাইতেন তারা বাড়ির পাঠশিক্ষার কাজ করেছে কি না।

কৌসুঁলিরা জানান, গত মে মাসে ইংরেজি শিক্ষা প্রয়োজন এমন এক হাইস্কুল শিক্ষার্থীর মা পরিচয় দিয়ে ২৬ বছর বয়সী এক নারী শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ইয়ু-জুং। ওই নারী দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর বুসানে থাকতেন। পুলিশ তার পরিচয় প্রকাশ করেনি।

পরে স্কুল ইউনিফর্ম পরে ওই শিক্ষকের বাড়িতে তার সঙ্গে দেখা করতে যান ইয়ু-জুং। বাড়িতে ঢুকেই তিনি শিক্ষককে আক্রমণ করেন। শিক্ষকের শরীরে ১০০ বারেরও বেশি ছুরিকাঘাত করেন তিনি। এমনকি তার মৃত্যুর পরও উন্মত্ত আক্রমণ চালিয়ে যান জুং।

পরে লাশ টুকরো টুকরো করে কেটে একটি স্যুটকেসে ভরে বুসানের উত্তরে একটি নদীর কাছের জঙ্গলে ফেলে দেওয়ার জন্য ট্যাক্সি ভাড়া করেন ইয়ু-জুং। ওই ট্যাক্সিচালকই তার বিষয়ে প্রথমে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ জুংকে গ্রেপ্তার করে এবং জঙ্গলে ফেলে আসা রক্ত ভেজা স্যুটকেসও উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, ইয়ু-জুংয়ের অনলাইন ব্রাউজিংয়ের রেকর্ডে দেখা গেছে, কীভাবে হত্যা করা যায় এবং লাশ লুকানো যায় তা নিয়ে তিনি কয়েক মাস ধরে গবেষণা করেছিলেন। তবে তিনি অসতর্ক ছিলেন। সিসিটিভি ক্যামেরা এড়ানোর কোনও চেষ্টা ছিল না তার। ক্যামেরার ফুটেজে নিহত শিক্ষকের বাড়িতে কয়েকবার জুংকে আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে।

শুক্রবার বুসান জেলা আদালতের এক বিচারক বলেছেন, এমন হত্যাকাণ্ড সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে কেউ বিনা কারণে হত্যার শিকার হতে পারে। ঘটনাটি সমাজে অবিশ্বাসও উসকে দিয়েছে।

বিবিসি জানায়, গত জুনে অপরাধ স্বীকার করে ইয়ু-জুং বলেন, তিনি ওই সময় হ্যালুসিনেশন ও মানসিক ব্যাধিতে ভুগছিলেন। এ কারণে তিনি তার কম সাজার জন্য অনুরোধ জানান। তবে আদালত তার যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ, অনেক সময় নিয়ে পরিকল্পনা করেই খুনটি করা হয়েছিল।

জুং হত্যাকাণ্ড নিয়ে একেক সময় একেক কথাও বলেছেন। প্রথমে তিনি বলেছিলেন, শিক্ষককে অন্য কেউ হত্যা করেছে। তিনি শুধু লাশটি সরিয়েছেন। পরে দাবি করেছিলেন, তর্কাতর্কির জেরে তিনি ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি হত্যার পেছনে আসল কারণ বলতে বাধ্য হন। বলেন, ক্রাইম শো এবং টিভির প্রোগ্রাম দেখে তিনি খুন করতে উৎসাহিত হয়েছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ না হলেও ১৯৯৭ সাল থেকে দেশটিতে কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:৩০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(235 বার পঠিত)
(204 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]