নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট
বাড়ির আঙ্গিনায় অনাদরে বেড়ে ওঠা ফুলের নাম জবা। শৈল্পিক সৌন্দর্য্য বহু ঔষধি গুনে ভরা ফুল জবা হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দেবী কালীর পূজায় অপরিহার্য। চিরসবুজ ঝোপ জাতীয় এই গুল্ম উদ্ভিদের, ফুল, ছাল ও পাপড়ি নানান রোগ নিরাময়ে প্রমাণিত। নারীর খোঁপার শ্রী বাড়ানো আর চুলের যত্নে প্রসংশিত জবা। জবা নিয়ে বিদ্রোহী কবির শ্যামা সংঙ্গীত ‘বলরে জবা বল, কোন সাধনে পাইলিরে তুই মায়ের চরণ তল’ গানটি।
মালভেসি বংশীয় চিরসবুজ পুষ্পধারী গুল্ম উদ্ভিদ ফুলের আদি নিবাস পূর্ব এশিয়ায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম লাতিন শব্দে ‘হিবিস্কোস রোসা সিনেন্সিস’ মানে চীনা গোলাপ। যদিও গন্ধহীন এই ফুলের সঙ্গে কোনো সাদৃশ্য নেই গোলাপের।
জানা যায়, পৃথিবীতে কয়েক শত প্রজাতির জবা ফুল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে প্রায় ২০ ধরনের জবার দেখা মিলে। জবার অঞ্চলিক নাম, জবা কসুম, জপা, সিতা, ত্রিসন্ধ্যা, জবাপুষ্প, অরুণাসহ নানা নামে ডাকা হয়। ইংরেজি নাম (China Rose) চায়না রোজ। কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের বিভিন্ন ইউনিয়ন বাড়ি, সড়ক ও পুকুর ঘাটে অবাধে জবা ফুলের মোহনীয় সৌন্দর্য চোখে পড়ে।
সাধারণত গ্রীষ্ম ও শরৎকালে ফোটে জবা। ৮-১৬ ফুট উচ্চতা ও ৫-১০ ফুট প্রস্ত ঝোপ জাতীয় গাছের চকচকে সবুজ ও করাতের মত খাঁজকাটা পাতা। প্রায় ৪ ইঞ্চি ব্যাসার্ধে পঞ্চপাপড়ির ঠোঙা বা মাইক আকৃতির গাঢ় লালসহ নানা রঙ্গের ফুল জবা।
জবাকে বলা হয় আর্দশ ফুল, এর পুষ্পাক্ষ, বৃতি, পাপড়ি, পুংকেশর ও গর্ভকেশর নামক পাঁচটি মুলাংশসহ বৃতাংশ, পুষ্পবৃন্তাংশ নিয়ে জবা ফুলের গঠন।
জবা ফুলে থাকা সাইট্রিক ও ম্যালিক এসিড মুখের কালোদাগ, ত্বকে রুক্ষ ও শুষ্কতা রোধে কাজ করে। হাতের তালুর চামড়া উঠা, চোখ ওঠা, সর্দি-কাশি, চুলের শিকড় শক্ত করতে জবার ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম অতুলনীয়। রক্ত চলাচল বাড়ানো, মহিলাদের ঋতুস্রাব জনিত সমস্যা, চুলপড়া রোধ, চুলের ঘনত্ব বাড়ানো, সর্বপরি চুলের যত্ন ও খুশকি প্রতিরোধে কার্যকর। রয়েছে জবা ফুলের হেয়ার কন্ডিশনার ও শ্যাম্পু। হিবিস্কাস ‘চা’র অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস বাড়তি মেদ, ওজন হ্রাস ও মরণব্যাধি প্রতিরোধে অতুলনীয়।
বহু প্রজাতির জবার মধ্যে আমাদের দেশে পরিচিত, রক্ত জবা, ঝুমকো জবা, জবা কুসুম, মরিচা জবা, সাদা জবা ও বাসন্তি জবা প্রভৃতি। তবে ঝুমকো ও মরিচা জবা ভিন্ন আকৃতির। এছাড়াও হলুদ, কমলা, সাদা ও মিশ্র রঙ্গে শংকর প্রজাতির জবা রয়েছে।
গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি ও সড়কের পাশে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ির আঙ্গিনা, পুকুর ঘাট ও অভ্যন্তরীণ রাস্তায় নানা ধরণের জবা ফুলের গাছ চোখে পড়ে। জবা গাছের ডাল বা কলম বর্ষা মৌসুমে স্যাঁত স্যাঁতে মাটিতে রোপণ করে এর সৌন্দর্য উপভোগ ও ঔষধি গুণ ব্যবহার করে উপকৃত হওয়া যায়।
রানু রাণী শীল বলেন, যত্ন না করলেও এই জবা ফুল ফোটে। পূজাসহ মহিলাদের নানান রোগের কাজে আসে জবা। আর মা কালীর দেবীর পছন্দনীয় জবা।
কিশোরগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টার উদ্যান উপ-পরিচালক আবু আদনান বলেন, জবা ফুল এখন আর অনাদরে নয়, যত্নের সঙ্গে বেড়ে উঠছে। তার সৌন্দর্য, ঔষধি গুণ এবং পূজা অর্চনার অনুসঙ্গ হিসেবে ব্যবহার হয় জবা। আমার জানামতে, কিশোরগঞ্জে কোথাও বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে না। কেউ চাষ করতে চাইলে আমরা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করব।
Posted ৮:০০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin