বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বনে রহস্যময় আগুন, হুমকিতে শাল-গজারি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ১০ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট

বনে রহস্যময় আগুন, হুমকিতে শাল-গজারি

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শিমলাপাড়া এলাকার সংরক্ষিত শাল-গজারি বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। শুধু শিমলাপাড়াই নয় জেলার বিভিন্ন শালগাজির বনে শীতের শেষ বসন্তের লগ্নে রহস্যময় আগুনে প্রায়ই ঘটছে অগ্নিকাণ্ড। আগুন নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় বন কর্মীদের কোন আগ্রহ না থাকায়, নস্ট হচ্ছে বনের ছোট-বড় উদ্ভিদসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও প্রাণি।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার শ্রীপুর উপজেলার শিমলাপাড়া এলাকার সংরক্ষিত শাল-গজারি বনে আগুন জ্বলছিল। আগুন লাগার জায়গা থেকে শিমলাপাড়া বিট অফিসের দূরত্ব মাত্র ৫০ গজ। বৃহস্পতিবারের আগুন শুক্রবার সারাদিন ধরে জ্বললেও বন বিভাগের কোন কর্মকর্তাদের সেখানে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় বিট কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামানকে ফোন করলে তিনি আগুন নেভানোর মতো পর্যাপ্ত জনবল নেই বলে দায় এড়িয়ে যান।

গাজীপুরের ভাওয়াল মির্জাপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, শালবনে আগুন দেওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে একটি চক্র শাল-গজারি গাছ পুড়িয়ে দিয়ে বনভূমি দখল করতে চায়। শালগাছ কখনো চারা থেকে হয় না। গাছের কাণ্ড ও মূল থেকেই এর জন্ম। আগুনের কারণে নতুন করে শালগাছ জন্মাতে পারে না। প্রকৃতি বন্ধু হিসেবে পরিচিত এ শাল গাছ রক্ষার্থে সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এছাড়াও বনের ভেতর এমন আগুনের দায়ও বন বিভাগ কোনমতে এড়িয়ে যেতে পারে না।

ছোট টিলা মধ্যে শাল গজারি সমৃদ্ধ সবুজ গাছপালার জন্য বিখ্যাত গাজীপুর জেলা। যুগের পর যুগ ভাওয়াল গাজীপুরের অস্তিত্ব ধরে রেখেছে। হাজারো উদ্ভিদ ও প্রাণি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে শাল-গজারিগাছ। কিন্তু প্রতিবছর শীতের শেষে বসন্তের লগ্নে রহস্যময় আগুনে শাল-গজারিগাছ, বিভিন্ন প্রজাতির চারা ও বনের নানা ধরনের প্রাণী, কীট-পতঙ্গ, পোকামাকড় পুড়ে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে বন বিভাগ সচেতনতায় সভা সেমিনার করলেও আগুনের লাগাম টানতে পারেনি এবারও।

বন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রায় ৬৫ হাজার একর বনভূমি রয়েছে গাজীপুরে। জেলার মধ্যে ভাওয়াল, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর, কাঁচিঘাটা, রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ অফিসের মাধ্যমে এসব বনভূমির দেখভাল হচ্ছে। শিল্পায়ন, বন উপড়ে বনভূমি দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণের কারণে গাজীপুরের বনাঞ্চল এমনিতেই হুমকির মধ্যে রয়েছে কয়েক দশক ধরে। বন বিভাগের নজরদারির অভাবে বেপরোয়া এখন স্থানীয় বনদস্যুরাও।

শীতের শেষে শালগাছের পাতা ঝরে যায়। বসন্তের শুরুতে প্রকৃতি জেগে ওঠার সময় বনে আগুনের যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে বড় গাছগুলো কোনোমতে টিকে থাকলেও মাটি ফেটে তেড়ে উঠা ছোট হাজারো উদ্ভিদ ও কাণ্ড থেকে গজানো শালগাছ পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জীববৈচিত্র ও নানা প্রাণ। সঙ্গে বাতাসে কার্বনের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বনে যখন নতুন শাখা বের হয়, তখনই বন উজাড় করে তা দখলের জন্য রাতের আঁধারে আগুন দেয় একটি চক্র। তাদের উদ্দেশ্য, বনের গাছপালা পুড়ে বন পরিষ্কার করে তা দখলে নেয়া। এছাড়াও এ আগুনের ফলে চুরি হওয়া গাছের মূলও পুড়ে ফেলা। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় বন পরিস্কার করা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) গাজীপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, অসাধু এ চক্র বনের ভেতর আগুন দিয়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এতে বনের ভেতর থাকা হাজারো প্রাণীদের বসতের স্থান ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। আগুনে বনের ভেতরে থাকা সরীসৃপ সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়ে। কীটপতঙ্গ, বন্য প্রাণী ও পাখির আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ভাওয়াল বনের ইতিহাসের সঙ্গে মিশে থাকা কিছু বিচিত্র লতাগুল্ম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এ ধরনের আগুনে। এছাড়াও আমাদের বাতাসে কার্বনের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী নুরুল করিম বলেন, বনে আগুন লাগার ঘটনায় সাধারণ মানুষের সধ্যে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন। আমাদের জনবল সংকটে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর পরও আমরা বনের আগুনের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:২০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১০ মার্চ ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]