সোমবার ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চা বিক্রি করে জনপ্রিয়তা, লড়ছেন নির্বাচনে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০৯ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট

চা বিক্রি করে জনপ্রিয়তা, লড়ছেন নির্বাচনে

মোবাইলে ফোন করলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে চা নিয়ে হাজির হন ক্রেতাদের কাছে। কখনো নগদ, কখনো বাকি আবার কখনো বিনামূল্যেই চা নিয়ে হাজির হন রাজশাহীর রনি। তিনি শুধু চা-ই বিক্রি করেন না; চা আড্ডায় সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের গল্পেরও সঙ্গী তিনি। আর সেই সঙ্গই রনির প্রতি জনপ্রত্যাশা বাড়িয়েছে। লড়ছেন ইউপি মেম্বার পদে।

রাজশাহী নগরীর অদূরে হরিয়ান এলাকার দহপাড়া গ্রামে রনির বাড়ি। রাজশাহী হরিয়ান ও কাটাখালি অঞ্চলে এক নামে তাকে সবাই চেনে। আর এই জনপ্রিয়তা মূলত করোনাকালেই তৈরি হয়েছে। সে সময় দোকান বন্ধ হওয়ার পর থেকেই তিনি প্রথমে সাইকেলে এবং বর্তমানে মোটরসাইকেলে চা বিক্রি করে আসছেন। কারো কাছে টাকা না থাকলেও দিয়েছেন চা। দাঁড়িয়েছেন গরিব মানুষের পাশে। চা বিক্রি করে নিজের সংসারেও স্বচ্ছলতা এনেছেন রনি। এবার জনগণের চাওয়াতেই ভোটরে মাঠে নেমেছেন তিনি। ভোটের প্রচারণাতেও চা বিক্রির পাশাপাশি বিনামূল্যে চা পান করিয়ে ভোট নয়; দোয়া প্রার্থনা করছেন রনি।

শুক্রবার বিকেলে দহপাড়া তেঁতুলতলা মোড়ে দিয়ে দেখা যায়, দুই সন্তান জুলকারনাইন ও জুলফিকারকে পেঁছনে বসিয়ে মোটরসাইকেলে চা বিক্রি করে বেড়াচ্ছেন তিনি। মোটরসাইকেলকেই ভ্রাম্যমাণ দোকান বানিয়েছেন। দুপাশে দুটি করে বড় বড় চারটি ফ্লাস্ক। এগুলো লোহার তৈরি ফ্রেমের মধ্যে রাখা। সামনে একটি ব্যাগের মধ্যে ওয়ান টাইম চায়ের কাপ। এছাড়া মাটরসাইকেলের সামনে ও পেছনে লাগানো আছে রনির একাধিক নির্বাচনী পোস্টার। পোস্টারে লেখা, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপ্রার্থী রনি আহম্মেদ। দুই ছেলেকে নিয়েই তিনি সকলকে চা খাওয়াচ্ছেন। ভোটের সঙ্গে দোয়াও চাচ্ছেন।

রনি আহম্মেদ জানান, করোনার আগে তেঁতুল তলা বাজারেই তার একটি ছোট্ট চায়ের দোকান ছিলো। ৬ বছর ওই দোকানেই তিনি চায়ের ব্যবসা করেছেন। আগে চায়ের বিক্রিও তেমন হতো না। সংসারে অভাব ছিলো নিত্য দিনের সঙ্গী। করোনা মহামারীতে সেই দোকানটি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। একারণে সংসার চালানোর তাগিদেই একটি সাইকেলে করে মানুষের দোয়ারে দোয়ারে গিয়ে চা বিক্রি করতেন। তার মোবাইল নম্বরটিও সে সময় ক্রেতাদের দিয়ে আসতেন। তারা প্রয়োজনে ফোন দিয়ে চা নিয়ে ডাকতো। এটা করোনার মধ্যেই হরিয়ানের কাটাখালী বাজার ও আশেপাশে এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পায়। এরপর আর হতাশা নিয়ে ঘুরে তাকাতে হয়নি তাকে।

রনি আরো জানান, করোনার সময় অনেক অসুস্থ ও অসহায় মানুষকে বিনামূল্যেই চা খাইয়েছেন তিনি। আল্লাহর রহমতে ব্যবসায়ে বরকত এসেছে। এখন চা বিক্রি করে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। সাধারণ মানুষের এখন প্রত্যাশা বেড়ে গেছে তাকে (রনিকে) নিয়ে। সবাই মিলেই তাকে ভোটে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।

রনি জানান, তার নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো খরচই হচ্ছে না। সাধারণ মানুষই সব খরচ বহন করছে। আর তিনি চা বিক্রি করেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই প্রচারণায় বিনামূল্যেও খুব কম মানুষ চা খাই। টাকা নিতে না চাইলেও মানুষ দিয়ে দেয়। এই ভালোবাসায় তাকে (রনিকে) নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চিয়তা দিচ্ছে।

রনি চা খেতে খেতে দেওপাড়া এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, রনি করোনার মধ্যে যখন সবকিছু বন্ধ সে সময় মোবাইলে কল করলেই চা নিয়ে হাজির হয়েছেন। কারো কাছে টাকা আছে, কারো কাছে নেই; সবাইকেই চা খাইয়েছেন। সে সময় তিনি মানুষের মন জয় করে ফেলেছেন। আর এখন নির্বাচন এসেছে। মানুষ তার পরপোকারী দিক বিবেচনায় নিয়ে রনিকে নির্বাচনে দাঁড়াতে উৎসাহ দিয়েছে। তারাও তার পাশে আছে।

শুধু নজরুল ইসলামই নয়; শুক্রবার বিকেলে তেঁতুল তলার চা-আড্ডায় আশেপাশের সকল মানুষই তাকে একনিষ্ঠ সমর্থনের কথা জানিয়েছেন প্রতিবেদককে। এছাড়া আসন্ন ১৭ জুলাই হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে রনির বিজয়ের লক্ষ্যে এক হয়ে কাজ করার বিষয়টিও প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিচ্ছেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৩:৪৭ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৯ জুলাই ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]