নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৫ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
ডলার সংকটের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার ফলে আমদানি কমেছে। একই সময়ে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এতে করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও চলতি হিসাবে ঘাটতি অনেক কমেছে। তবে বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ কমে যাওয়া, আগের ঋণ পরিশোধের চাপসহ বিভিন্ন কারণে দেশের আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে চাপ রয়েছে ডলার বাজারে। ব্যাংকগুলো থেমে থেমে ডলারের দর বাড়ালেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে উন্নতি হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল চলতি অর্থবছরের ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। চাহিদা মতো ডলার না পাওয়া, আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো, শতভাগ এলসি মার্জিনসহ নানা উপায়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার কারণে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) আমদানি কমেছে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। একই সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। এতে করে বাণিজ্য ঘাটতি আগের অর্থবছরের ৩ হাজার ৩২৫ কোটি ডলার থেকে কমে ১ হাজার ৭১৬ কোটি ডলারে নেমেছে। এ সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স বেড়েছে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমে ৩৩৩ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ১ হাজার ৮৬৪ কোটি ডলার।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, চলতি হিসাবের ঘাটতি কমার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে আমদানি কম হওয়া। এ পরিস্থিতি বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধে সাময়িকভাবে চাপ কমালেও অর্থনীতির সব খাতেই বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আবার চলতি হিসাবে ঘাটতি অনেক কমলেও লাভ হয়নি। কেননা, আর্থিক হিসাবে ঘাটতি এত বেড়েছে যে, সামগ্রিক হিসাবের বড় অঙ্কের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে এত কষ্ট করে চলতি হিসাবে ঘাটতি কমানোর সুফল পাওয়া যায়নি। তিনি মনে করেন, পরিস্থিতির উন্নতি করতে চাইলে আর্থিক হিসাবের ঘাটতিকে উদ্বৃত্তে নিতে হবে। আর এ জন্য সবচেয়ে জরুরি আস্থার উন্নয়ন। বিশেষ করে মুডিস যে ক্রেডিট রেটিং কমিয়েছে এবং এসঅ্যান্ডপি ভবিষ্যতের জন্য আভাস বা আউটলুক ‘নেতিবাচক’ করেছে। কেন তারা এমন করেছে, তা বিবেচনায় নিয়ে আস্থা পুনর্গঠনের চেষ্টা করতে হবে।
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, আর্থিক হিসাবে ঘাটতির অন্যতম কারণ বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণের মেয়াদ আগের মতো আর বাড়ানো যায়নি। আবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অ্যাকাউন্টে যে ডলার ছিল, তা অনেক কমেছে। অন্যদিকে এসব ব্যাংকের আগের দেনা পরিশোধ করতে হয়েছে। এভাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দায় ও সম্পদ দুটিই কমে আন্তর্জাতিক অবস্থানের অবনতি হয়েছে। পরিশোধের চাপ অনেক বেড়েছে। আবার উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণছাড় কমেছে। এ ছাড়া ট্রেড ক্রেডিট তথা রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণের সঙ্গে অর্থ আসার ব্যবধান বেড়েছে। এর বড় কারণ বিনিময় হারের বর্তমান নীতি। এখন রপ্তানি বিল আনতে দেরি করলেই বেশি টাকা পাচ্ছেন। ফলে বিল আনতে দেরি করছেন। সবাই এমন করবে এটাই বাস্তবতা। মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি ঠিক না করলে এখান থেকে বের হওয়া যাবে না।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আর্থিক হিসাবে ধারাবাহিক উদ্বৃত্ত থেকে বড় অঙ্কের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আগের অর্থবছর যেখানে উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ৫৪৬ কোটি ডলার, এবার তা ২১৪ কোটি ডলার ঘাটতিতে পড়েছে। মূলত আর্থিক হিসাবে ঘাটতির প্রভাবে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি হয়েছে ৮২২ কোটি ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল মাত্র ৬৬৬ কোটি ডলার। সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বৃদ্ধি মানে বিভিন্ন উৎসে দেশে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে, গেছে তার চেয়ে বেশি।
বাজারের সংকট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে গত অর্থবছর ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। আগের অর্থবছর বিক্রি করেছিল ৭৬২ কোটি ডলার। এভাবে বিক্রির ফলে রিজার্ভ আরও কমে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী ২৩ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
Posted ১:১৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৫ আগস্ট ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin