নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ২৮ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
দাদন, অবরোধ ও সাগরে মাছ শিকারে বিভিন্ন জটিলতায় বছরের পর বছর লোকসান গুনে বিপাকে পিরোজপুরের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। যারা সমুদ্রে যাচ্ছেন তারাও দাদনের জালে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই এরইমধ্যে পেশা পরিবর্তন করছেন অনেকে। এতে বন্ধ হওয়ার উপক্রম শত বছরের পুরাতন পাড়েরহাটের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি।
কমল দাস। সদরের পাড়েরহাটের একজন ব্যবসায়ী। তিন পুরুষ ধরে চলে আসা এ ব্যবসায়ীর ৪টি ট্রলার। মাছ না পাওয়ায় প্রতিদিন লোকসান গুনে ঋণে জর্জরিত হয়ে এরইমধ্যে ৩টি ট্রলার বিক্রি করেছেন। ফলে পুরুষানুক্রমে চলে আসা এ ব্যবসার ইতি ঘটাতে যাচ্ছেন তিনি। এখন প্রায় সব হারিয়ে কাপড়ের দোকান দিয়েছেন।
কমল বলেন, ‘এক সময়ে আমার দাদু আমার বাবা মাছের ব্যবসা করত। আমিও ১২ বছর ধরে মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আগে মাছ ব্যবসায় প্রচুর লাভ ছিল। কিন্তু এখন সমুদ্রে মাছ পাওয়া যায় না। তার উপর বিভিন্ন রকমের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। লোকসান গুনতে গুনতে দেনার দায়ে পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছি।’
এখানকার আরেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন। পূর্ব পুরুষ থেকে চলে আসা এ ব্যবসায়ী দাদন, লোকসান আর দেনায় দায়ে নুয়ে পড়েছেন। জীবন বাঁচাতে সব ছেড়ে মুদির দোকান দিয়েছেন তিনি।
ইকবাল বলেন, ‘তিনটি ট্রলারের মধ্যে আমার দুইটি টলার সাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে গেছে। আমার লাখ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা আমি পাইনি। বর্তমানে একটি ট্রলার আছে, তাও ঠিকমতো মাছ না পাওয়ায় লোকসান গুনতে গুনতে দিশেহারা আমি।’
এ চিত্র যে শুধু কমল আর ইকবালের তা নয়। শত শত ট্রলার মালিক আর জেলেদের এ দৈন্যদশা। এ থেকে বাদ যায়নি এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপে চলা আড়ৎদারেরাও।
এক সময়কার জমজমাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পুরাতন পাড়েরহাট মৎস্যজীবীদের দেনা ও ঋণের বোঝায় এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পাড়েরহাটে এক সময় দুই শতাধিক ট্রলার মালিকের ব্যবসা পরিচালিত হতো। সঙ্গে ছিল অন্য জেলার আরও প্রায় তিন শতাধিক ট্রলার। একেকটি ট্রলার এক বার চালু করতে খরচ পড়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা। আর এক এক বার সাগরে পাঠাতে বাজার করতে হয় প্রায় ৩ লাখ টাকার। এ সবের অধিকাংশই চলে দাদনের মাধ্যমে।
মৎস্য ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘একটি ট্রলার প্রস্তুত করতে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ হয়। তারপর আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বাজার করে জেলেদেরকে সাগরে পাঠাতে হয়। কিন্তু মাছ নিয়ে ফিরলে ৬০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হয়। প্রতি বোর্ডে লস হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। লস দিতে দিতে জীবন শেষ। দু’ একটি ট্রলার ভালো মাছ পেলে সেটি বেশি প্রচার প্রচারণা হয়। বাস্তবে মৎস্যজীবীরা বেহাল অবস্থায় আছে।’
মৎস্য বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৭ হাজার ৮০০।
Posted ৭:১৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৮ আগস্ট ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin