মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আখাউড়ায় জমে উঠেছে পাকা তাল বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট

প্রকৃতিতে চলছে ভাদ্র মাস। এ মাসের শুরুতেই পাকা তালের মৌ মৌ গন্ধ মুখরিত হয়ে উঠেছে চারদিক। বাড়িতে বাড়িতে চলছে তালের পিঠা তৈরির উৎসব। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মৌসুমী ফল পাকা তাল বাজারে বিক্রি জমে উঠেছে। পুষ্টি গুণে ভরপুর হওয়ায় অনেকেই পাকা তাল ক্রয় করছেন।

তাল পিঠা সবার কাছে প্রিয় হওয়ায় তালের আঁশ থেকে নির্যাস বের করে চিতই পিঠা, কলকি পিঠা, তাল পিঠা, তাল বড়া, তালের পায়েসসহ হরেক রকমের পিঠাপুলি ঘরে ঘরে তৈরি করছেন। তাই সর্বত্র হাট বাজারে জমে উঠেছে পাকা তাল বিক্রি।

একাধিক ব্যবসায়ী জানান, মৌসুমী পাকা তালের ভালো চাহিদা রয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ভালো বিক্রি হচ্ছে।

সরজমিন পৌর শহরের সড়ক বাজার, বড়বাজার, খড়মপুরসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় গিয়ে দেখা যায় বিক্রেতারা তাল বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে স্থানীয় বাজারে দুই ধরনের তাল বিক্রি হচ্ছে। একটি কালো এবং অন্যটি একটু লালচে বর্ণের। তবে কালো রঙের তালের চাহিদা ক্রেতাদের কাছে বেশি। কারণ এতে রস ও খেতেও মিষ্টি তুলনামূলক বেশি।

একেকটি তাল ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে তাল কেনার সময় নাকের কাছে টেনে একবার হলেও ঘ্রাণ
নিতে ভুল করেন না ক্রেতারা। এটাই মনে হয় এ সময়ের ফরমালিনমুক্ত ফল। স্থানীয় তাল ছাড়া ও বিক্রেতারা বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছেন।

এদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানান, তালের রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি। এছাড়াও জিংক, পটাশিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও এ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। পাকা তালের প্রতি ১০০ গ্রামে জলীয় অংশ ৭৭ দশমিক ২ গ্রাম, খনিজ শূন্য দশমিক ৭ গ্রাম, আঁশ শূন্য দশমিক ৫ গ্রাম, আমিষ শূন্য দশমিক ৭ গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ২ গ্রাম, শর্করা ২০ দশমিক ৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯ মিলিগ্রাম ও খাদ্যশক্তি ৮৭ কিলোক্যালরি রয়েছে।

তালের রস শ্বাসনালির লালাগ্রন্থিকে বাসকের মতো সক্রিয় করে বলে এটি শ্নেষ্ফ্মানাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ। টাটকা তালের রস মূত্রবর্ধক, কোষ্ঠকাঠিন্য, উদ্দীপক, প্রবাহ নিবারক ও সর্দি-কাশির মহৌষধ।

মৌসুমী তাল বিক্রেতা মো. শুকুর আলী জানান, ভাদ্র মাস হলো পাকা তালের মৌসুম। পাকা তালের ভালো চাহিদা থাকায় বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছেন। আকারভেদে এক একটি তাল ৫০-৭০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, দৈনিক ৭০-৮০পিচ তাল বিক্রি করা যায়। পাকা তালের ভালো দাম পাওয়ায় তিনি খুবই খুশি।

মো. কাদির মিয়া জানান, বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি মৌসুমী ফল বিক্রি করছেন। এখন ভাদ্র মাস হওয়ায় কয়েক দিন ধরে বাজারে পাকা তাল বিক্রি করছেন। তাল বিক্রিতে দৈনিক ৪শ টাকা আয় হয় বলে জানান।

পৌর শহরের তারাগন এলাকার গৃহিণী মাজেদা বেগম জানান, তার স্বামী ও ছেলে পাকা তালের পিঠা খুবই পছন্দ করেন। তাই বাজারে তাল উঠায় এক জোড়া মাঝারি আকারের তাল ১শ টাকায় কেনা হয়েছে। গত বছরের থেকে এবার তালের দাম বেড়েছে বলে জানান।

কলেজ পাড়া এলাকার গৃহিণী নুরজাহান বেগম বলেন, মৌসুমী পাকা ফল তালের পিঠা পরিবারের সবার পছন্দ। বাজারে পাকা তাল দেখতে পেয়ে ১ জোড়া কেনা হয়েছে। এখন বাসায় পাকা তালের রসের সঙ্গে নরিকেল, চিনি বা গুড় এবং চালের গুঁড়ো বা ময়দা মিশিয়ে সুস্বাদু নানা জাতের পিঠা তৈরি করে সবাই মিলে মজা করে খাবো।

মো. মিজান মিয়া জানান, তার দুই ছেলে প্রবাসে থাকেন। এক ছেলে ছুটি কাটিয়ে আগামী শুক্রবার কর্মে চলে যাবে। সে দেশে থাকতে সব সময় তাল পিঠা পছন্দ করতো। তাই ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য বড় আকারের ২টি তাল ১৩০ টাকায় কেনা হয়েছে। তাকে খাওয়ানোর পাশাপাশি তার ভাইকেও তাল পিঠা তৈরী করে দেওয়া হবে।

উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন,তাল পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। তাল দিয়ে নানা প্রকারের সুস্বাদু পিঠা তৈরি করা হয়। তাছাড়া তালগাছ শুধু প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে না বরং বজ্রপাত নিরোধক হিসেবেও কাজ করে। তাই বেশি করে তালগাছ লাগানো হলে এ দেশ আরো সমৃদ্ধশীল হবে এবং কাঠের চাহিদা পূরণ করবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]