রবিবার ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে চীনের বিনিয়োগ ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি; যা দেশের জন্য অর্থবহ ও জনগণের জন্য কল্যাণকর

দয়াল কুমার বড়ুয়া   |   শুক্রবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

দেশে চীনের বিনিয়োগ ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি; যা দেশের জন্য অর্থবহ ও জনগণের জন্য কল্যাণকর

যোগাযোগ, প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও শিক্ষা খাতের একাধিক প্রকল্পে বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ করছে চীন। দেশে চীনের বিনিয়োগ ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। জাপানের পরই বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী একক দেশ হিসেবে চীনের অবস্থান এখন দ্বিতীয়। চীনের বিনিয়োগ রয়েছে এমন অন্তত ২৫টি প্রকল্প চলমান। নয়টি বৃহৎ প্রকল্পেই চীনের বিনিয়োগ ৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার অ্যান্ড পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক, ঢাকেশ্বরী স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ডেভেলপমেন্ট অব আইসিটি ইন্ট্রা নেটওয়ার্ক ফর ফেজ-২৫, অষ্টম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের আগের দুই বছরে দেশে বিভিন্ন প্রকল্পে ১০ কোটি ডলারের বেশি অর্থায়ন করেছে সাতটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে শীর্ষ পাঁচটিই ছিল চীনের। ওই দুই বছরে ব্যাংক অব চায়না, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চায়না (চায়না এক্সিম ব্যাংক), চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংক- এ তিন ব্যাংকের প্রতিটি বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে ৫৯ কোটি ডলারের কিছু বেশি। এক্সিম ব্যাংক অব চায়না ঋণ দিয়েছে ৪৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়নার কাছ থেকে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়েছে ৪০ কোটি ডলার। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে ২০ বিলিয়ন ডলার খরচে ২৭টি প্রকল্প নিয়ে ‘বিনিয়োগ ও উৎপাদন সক্ষমতা সহযোগিতা জোরদারকরণ’ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ২৫টি প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে; একই সঙ্গে কিছু অনুদানও দিয়েছে চীন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্যানুযায়ী, স্বাধীনতার পর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন খাতে ঋণ ও অনুদান হিসেবে মোট ১ হাজার ৭৭ কোটি ডলারের বেশি অর্থ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। এর মধ্যে প্রায় ৬৯৪ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। সারা বিশ্বে চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নামক প্রকল্প হাতে এগিয়ে চলেছে। এ প্রকল্পের সঙ্গে ইতোমধ্যে পৃথিবীর অন্তত ৬৮টি দেশ যুক্ত হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হবে ২০৪৯ সালে।
ইআরডি সূত্রমতে, বিআরআইয়ের প্রতিশ্রুতির আওতায় চীন নয়টি প্রকল্পের জন্য ৮০৮ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। জুন পর্যন্ত ৪৪৭ কোটি ডলার ছাড় করা হয়। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে এবং ৮টি চলমান। ২০২৬ সালের মধ্যে সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। চলমান প্রকল্পের মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ কাজ শেষের পথে। ২৮ অক্টোবরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। প্রকল্পটির ব্যয় ৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল লাইন প্রকল্পের প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর খরচ ধরা হয় ৪৬ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। এর পরেই আছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ। জুন পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। রেললাইনটির খরচ ২৬৭ কোটি ডলার। জুন পর্যন্ত ১৯৯ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। এছাড়া ঢাকা থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি ১৫ শতাংশ হয়েছে। এর খরচ ১২০ কোটি ডলারের মধ্যে জুন পর্যন্ত ১৭ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। শেষ হবে ২০২৬ সালের জুনে। ২০০৫-২৩ সাল পর্যন্ত ১৮ বছরে দেশে ৭০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি বিনিয়োগ করেছে চীন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, যার পরিমাণ ৩২৭ কোটি ডলার। এছাড়া ধাতু (নির্মাণসংশ্লিষ্ট) সরবরাহ খাতে ২১৩ কোটি ডলার, পরিবহণ ও যোগাযোগ খাতে ১১০ কোটি ডলার, আর্থিক খাতে ১৬ কোটি ও অন্যান্য খাতে ৪১ কোটি ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। সর্বশেষ গত বছরের জুনে দেশের জ্বালানি খাতে ১৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না জেনারেল টেকনোলজি। এর আগে জানুয়ারিতে পরিবহণ ও জ্বালানি খাতে যথাক্রমে ২৪ কোটি ও ১২ কোটি ডলারের দুটি বিনিয়োগ এসেছিল।
বাংলাদেশে চীনের বিশাল বিনিয়োগ হবে দেশের জন্য অর্থবহ ও জনগণের জন্য কল্যাণকর।

লেখক: দয়াল কুমার বড়ুয়া, কলামিস্ট ও জাতীয় পার্টি নেতা, সভাপতি, চবি অ্যালামনাই বসুন্ধরা। সংসদ সদস্য প্রার্থী ঢাকা-১৮ আসন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]