দয়াল কুমার বড়ুয়া | রবিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
সারা পৃথিবীতে যানজটের শহর হিসেবে ঢাকার বিশেষ পরিচিতি ছিল। সাম্প্রতিক নানা উদ্যোগে সেই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তার পরও প্রতিদিন যানজটের অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় ঢাকাবাসীকে। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা ঢাকা উড়ালপথের একাংশ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই অংশটিতে অর্থাৎ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত উড়ালপথে আজ থেকে সাধারণ যান চলাচল শুরু হবে। এর ফলে বিমানবন্দর সড়কের অতি পরিচিত যানজট এড়িয়ে ১১ কিলোমিটার পথে বিরতিহীনভাবে চলাচল করা যাবে। বলা হয়েছে, আগামী বছর এই উড়ালপথের বাকি অংশও উন্মুক্ত হবে। তখন কাওলা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা নিশ্চিত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ঢাকা মহানগরীর যানজট বহুলাংশেই কমাতে সক্ষম হবে।
বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত উড়ালপথের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার হলেও এই উড়ালপথে ওঠানামার জন্য যে মোট ৩১টি র্যাম্প বা পথ রয়েছে, সেগুলোসহ মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। এর ফলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ পূর্বাঞ্চলের যানবাহনগুলো মহানগরের মধ্যে থাকা বর্তমান সড়কগুলো ব্যবহার না করেই উত্তরায় নেমে পশ্চিমাঞ্চলে বা উত্তরাঞ্চলে যেতে পারবে। একইভাবে পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনসহ সাভার ইপিজেড ও শিল্পাঞ্চলের মালপত্র নিয়ে যানবাহনগুলো দ্রুততম সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে যেতে পারবে।
এতে যেমন যাতায়াতের সময় কমবে, তেমনি কমে আসবে বিপুল জ্বালানি খরচ। শ্রমঘণ্টার হিসাবেও বিপুল পরিমাণ অর্থমূল্যের সাশ্রয় হবে। এর দ্বিতীয় ধাপে থাকছে ঢাকা-আশুলিয়া উড়ালপথ, দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার। এই দুই উড়ালপথের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হলে সাভার ইপিজেড থেকে আশুলিয়া-বাইপাইল-আব্দুল্লাপুর হয়ে বিমানবন্দর, কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে কুতুবখালী পর্যন্ত এক রেখায় যুক্ত হবে। এ পথের মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার এবং র্যাম্পসহ পুরো পথের দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে প্রায় ৮২ কিলোমিটার।
বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থায় এটি আরেকটি বিপ্লব হিসেবেই চিহ্নিত হবে।
শিল্পায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ-জ্বালানির পাশাপাশি দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নে ব্যাপক মনোনিবেশ করে। পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন, বিদ্যমান মহাসড়কগুলো চার লেন করা, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি, ঢাকা মহানগরীতে মেট্রো রেলসহ আরো অনেক মেগাপ্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মেট্রো রেলের আরো কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে বা শুরু হবে শিগগিরই। বিদ্যমান দুটি বন্দরের উন্নয়নের পাশাপাশি মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দর ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল ও কক্সবাজারে আধুনিক বিমানবন্দর নির্মাণসহ আরো অনেক কার্যক্রম এরই মধ্যে প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। ফলে শুধু ঢাকা মহানগর নয়, সারা দেশেই যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
দেশকে এগিয়ে নিতে হলে যোগাযোগ অবকাঠামোর পরিকল্পিত উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। আমরা আশা করি, উন্নয়নের এই ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
লেখক: দয়াল কুমার বড়ুয়া, কলামিস্ট ও জাতীয় পার্টি নেতা, সভাপতি, চবি অ্যালামনাই বসুন্ধরা। সংসদ সদস্য প্রার্থী ঢাকা-১৮ আসন।
Posted ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin