শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দৃশ্যমান হচ্ছে মেগা প্রকল্পগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট

দৃশ্যমান হচ্ছে মেগা প্রকল্পগুলো

দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। প্রতি মাসেই কোনো না কোনো প্রকল্প উদ্বোধন করা হচ্ছে। গত বছর চালু হওয়া পদ্মাসেতুতে ট্রেন চলাচলেরও উদ্বোধন হয়ে গেল গত মঙ্গলবার। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হওয়া মেট্রোরেল এখন মতিঝিল পর্যন্ত চালুর অপেক্ষায়।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ ও শাহজালাল বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালও এরই মধ্যে উন্মোচিত হয়েছে। শিগগিরই উদ্বোধন হবে কর্ণফুলী টানেল এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্প। এছাড়া আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ, খুলনা-মোংলা রেলপথসহ আরো বেশকিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন হতে চলেছে শিগগিরই।

গত বছরের ২৫ জুন পদ্মাসেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি ব্যতিক্রমী মাইলফলক অর্জন করে। এরপর গত ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা রেলসেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আরেকটি দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো।

থার্ড টার্মিনাল ৭ অক্টোবর

পদ্মা রেলসেতু উদ্বোধনের তিনদিন আগে ৭ অক্টোবর দেশের প্রথম ও বৃহত্তম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শাহজালালে ভবিষ্যতে যাত্রী বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নতুন রানওয়ে করার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের।

সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ও ক্যালিবারেশনের পর তৃতীয় টার্মিনালটি আগামী বছরের শেষে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণরূপে চালু হবে বলে জানিয়েছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তৃতীয় টার্মিনাল পূর্ণাঙ্গ চালুর পর শাহজালাল বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী হ্যান্ডলিং ক্ষমতা দাঁড়াবে দুই কোটি ৪০ লাখে, যা বর্তমানে মাত্র ৮০ লাখ। অর্থাৎ নতুন টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে যাত্রী হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বেড়ে হবে তিন গুণ। নতুন টার্মিনালের ৯০ শতাংশ কাজ সফট লঞ্চিংয়ের জন্য সম্পন্ন হয়েছে।

২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এর মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। বাকি টাকা অর্থায়ন করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

২ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

গত ২ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। পরদিন সকাল ছয়টা থেকে সাধারণ যানবাহন উড়ালসড়কে চলাচল করতে পারছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে রেললাইন ধরে তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এই উড়ালসড়ক।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের সম্ভাব্য উদ্বোধন ১২ নভেম্বর

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইনও দৃশ্যমান হয়েছে। ৯ অক্টোবর দুপুরে কক্সবাজারের চকরিয়া অংশে ৫০ মিটার রেললাইন বসানোর মধ্যে দিয়ে বহুল প্রতীক্ষিত এই রেললাইন দৃশ্যমান হয়। আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই রেললাইন উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে চলছে প্রস্তুতিও।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথটি দুটি ভাগে কাজ করছে ঠিকাদার। দোহাজারী থেকে চকরিয়া অংশের কাজ করছে সিআরইসি এবং তমা কনস্ট্রাকশন। আর চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অংশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিইসিসি এবং ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।

২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ফাস্টট্র্যাকভুক্ত হয়। ২০১০ এর জুলাই থেকে শুরু হয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে।

২৯ অক্টোবর মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল রুটের উদ্বোধন

ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬ এর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন হবে ২৯ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের জন্যে এ দিন নির্ধারণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। পরদিন থেকেই যাত্রী চলাচল শুরু হয় দেশের প্রথম এই বৈদ্যুতিক ট্রেনে।

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন যেভাবে ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হয়েছিল, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের ক্ষেত্রেও তাই করা হবে। এই অংশে মেট্রোরেলের সাতটি স্টেশন হল বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, টিএসসি, সচিবালয় ও মতিঝিল।

২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হবে। ঐদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের উদ্বোধন করবেন।

কর্ণফুলীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। চার লেন বিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। এছাড়া মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ফ্লাইওভার থাকবে।

৯ নভেম্বর খুলনা-মোংলা রেললাইন

সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ‘খুলনা-মোংলা রেল লাইন নির্মাণ’ প্রকল্প আগামী ৯ নভেম্বর উদ্বোধন হতে পারে। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। মোট ৯১ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৮৬ কিলোমিটার লাইন বসানোর কাজ শেষ। আর ১১টি প্লাটফর্মের সবগুলোর কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া এ রেলপথে ১০৭টি ছোট-বড় সেতু ও ৯টি আন্ডারপাসের কাজও শেষ হয়েছে। রূপসা নদীর ওপরে সাতটি স্প্যানসহ ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রেলসেতুর পুরোটাই দৃশ্যমান। এ পথে এখন পরীক্ষামূলক রেল চলাচল করছে। সব মিলিয়ে এ প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ। এখন রেলপথের ফিনিশিং, সিগন্যালিয় ও টেলিকমিউনিকেশনের কাজ চলছে।

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ

আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে। এই পথে ট্রেন চলাচল এখন আনুষ্ঠানিক শুরুর অপেক্ষায়। রেলপথমন্ত্রী বলছেন, দুই দেশের সুবিধাজনক সময়ে চালু হবে রেলপথটি। এটি চালু হলে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে মানুষ সহজে ও সুলভে এই অঞ্চলে ভ্রমণ করতে পারবে।

আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছিল একনেক। এরপর প্রকল্প সংশোধনে সময় বাড়ে ২০২২ সালের জুন নাগাদ। চতুর্থবারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। মোট প্রকল্প ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় অনুদান ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]