নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
১২ বছরের শিশু রবিউল। দুই বছর আগে মারা যান তার মা। বাসায় কাউকে না বলে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ঘুরতে এসে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয় সে। পরে তাকে ভর্তি করা হয় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। দুর্ঘটনায় যারা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন একে একে সবাই স্বজনদের দেখা পান। কিন্তু দেখা মেলেনি শিশু রবিউলের স্বজনদের। অবশেষে বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দেখা পেয়ে বাবা মিলনের কোলে উঠে বসে সে। যেন এক শান্তির পরশ।
রবিউলের বাবা মিলন মিয়া জানান, মিলনের তিন ছেলে। এরমধ্যে রবিউল দ্বিতীয়। মিরপুরে একটি হোটেলে বাবুর্চির কাজ করেন মিলন। আর পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ঢাকার মিরপুরের শাহ আলী মাজার এলাকায়।
ছেলেকে হারানো সম্পর্কে তিনি বলেন, সোমবার (২৩ অক্টোবর) সকালে কাউকে কোনো কিছু না বলে রবিউল ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ছেলের সন্ধানে অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছি, থানায় গিয়েছি। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাইনি। রবিউল ট্রেনে কোথাও যেতে পারে, এটা আমাদের ধারণাই ছিল না। ফলে দুর্ঘটনার খবর জানা থাকলেও এই নিয়ে সন্দেহ জাগেনি। শেষে পুলিশের মাধ্যমে ছেলের সন্ধান পেলাম।
এদিকে বাবাকে কাছে পেয়ে মনের যত ভয় সব যেন নিমিষেই পালিয়ে গেছে রবিউলের কাছ থেকে। এখন তার কথাবার্তা আর আগের মতো এলোমেলো নেই। রবিউল ভৈরব কিভাবে পৌঁছালো সে বিষয়ে জানায়, সোমবার (২৩ অক্টোবর) তার এক বন্ধুর সঙ্গে ঢাকা থেকে ট্রেনে করে ভৈরবে পৌঁছায়। ভেবেছিল ভৈরবে ঘোরাফেরা শেষে আবার ঢাকা চলে যাবে। তাই ফিরে যেতে ভৈরব থেকে এগারসিন্ধুর ট্রেনেও ওঠে। সে ট্রেনের পেছনের আগের বগিতে উঠেছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার পর সে তার বন্ধুকেও হারিয়ে ফেলে। তাই ভয়ে সঠিকভাবে কিছুই বলতে পারছিল না।
দুর্ঘটনার পর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তার পরিবারের সন্ধান পেতে ছবিসহ পোস্ট করা হয়। কিন্তু তাতেও কোনো সাড়া মেলেনি। এভাবে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রবিউলের কেটে যায় তিনটি দিন। এরমধ্যে রবিউল কিছুটা সুস্থ হলেও কথা বলছিল এলোমেলো। নিজের নাম বলতে পারলেও আর কিছু সঠিকভাবে বলতে পারছিল না। তাই তাকে শান্ত রাখতে চিকিৎসকরা ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতেন।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বলেন, আমরা খুব খুশি ও আনন্দিত রবিউল তার বাবাকে খুঁজে পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে ভৈরব রেলস্টেশন থেকে ঢাকায় উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া আন্তনগর এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনের পেছনের দুই বগির সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় আহত হন শতাধিক। পরে হাসপাতালে আরো একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মোট ১৮ জনের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসন।
Posted ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin