নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
নওগাঁয় জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন তারা। আর এ পানিফল চাষ কৃষিকে অর্থনৈতিক ভাবে আরো সমৃদ্ধ করেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পানিফল চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট ও গাইবান্ধাসহ কয়েকটি জেলায়। উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় পানিফল চাষে আগ্রহ বেড়েছে নওগাঁর কৃষকদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ১১শ টন ফল উৎপাদনের আশা কৃষি বিভাগের। যার বাজারমূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা।
নওগাঁ সদর উপজেলার দূর্গাপুর, খাগড়া ও মরাবিলাসহ আশপাশের মাঠে বছরের অধিকাংশ সময় থাকে জলাবদ্ধতা। যেখানে ইরি-বোরো ছাড়া অন্য কোন ফসল হয় না। জলাবদ্ধতার মধ্যে সেখানে বিকল্প হিসেবে গত কয়েক বছর থেকে কৃষকরা বেছে নিয়েছেন পানিফল চাষ। বিল এলাকায় এ ফল চাষ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে যখন জলাশয়গুলোতে পানি জমতে শুরু করে তখন পানিতে পানিফলের চারা ছেড়ে দেওয়া হয়। এর প্রায় তিনমাস পর থেকে গাছে ফল আসা শুরু হয়।
পানিতে ভেসে থাকা শাপলার মতো এ গাছটি পানিফল নামে পরিচিত। খাল, বিল, জলাশয় ও রাস্তার ধারে জমে থাকা পানিতে দেখা মিলে এ ফল। পাতার নিচে ধরে আছে থোকা থোকা লাল, কালচে ও সবুজ রংয়ের পানিফল সংগ্রহ করছেন চাষিরা। তিনমাসের এ ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। বিঘাপ্রতি এ ফল চাষে খরচ পড়ে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। যেখানে খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা।
চাষিরা বলছেন, অনেকে শুধু পানিফল চাষের জন্য বিঘাপ্রতি তিন হাজার টাকায় জমি ইজারা নেয়। বিঘাপ্রতি ফলন হয় প্রায় ৭০ মণ। প্রতিমণ বিক্রি হয় ৭০০-৭৫০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে প্রায় ২০ হাজার টাকা। পানিফল চাষ শেষে জমির মালিক সেখানে ইরি-বোরো আবাদ করে।
দূর্গাপুর গ্রামের চাষি আব্দুস সামাদ বলেন, এ মাঠে বছরে প্রায় ছয়মাস জলাবদ্ধতা থাকে। এখানে বোরো ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল হয় না। নিজের জমিতে গত কয়েক বছর ধরে পানি ফল চাষ করা হচ্ছে। তবে অনেকে পানিফল চাষের জন্য বিঘাপ্রতি ৩ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে থাকে। এ ফল চাষে খরচ পড়ে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা। আর খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে প্রায় ২০ হাজার টাকা। আমার কাছে মনে হয়েছে বাড়তি একটা ফসল। পানি শুকিয়ে এ জমিতে বোরো ধান চাষ করা হবে।
চাষি লিটন সরদার বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর জলাশয়ে পানি কম। তারপরও ফলন ভালো হয়েছে। দাম মোটামুটি ভালো পাওয়া যাচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ীরা এসে পানি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি লাভবান হতে পারব।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। অনাবাদি জমিতে পানিফল চাষ একটি বাড়তি ফসল। নিচু এলাকায় জলাবদ্ধ জমি এক থেকে দেড় ফুট পানি জমে থাকে সেখানে এ ফলের চাষ হয়। পরিশ্রম ও খরচ কম হয়। যা চাষ করে কৃষকরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হচ্ছে। এ ফলটি পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ।
Posted ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩
ajkerograbani.com | Salah Uddin