নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট
চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের কথা রাজবাড়ীর রিপন শেখের। পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য প্রধান শিক্ষককে ২ হাজার ৫০০ টাকা দেয় সে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ভুলে তার ফরম পূরণ না করায় পরীক্ষায় বসতে পারেনি রিপন।
রিপন শেখ রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের মেঘনা খামারপাড়া গ্রামের দিনমজুর অলিল শেখের ছেলে। পরে সে এ বিষয়ে পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
জানা গেছে, রিপন শেখ মাছপাড়া ইউনিয়নের মেঘনা হাই স্কুলের দশম শ্রেণির মানবিক শাখার ছাত্র। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য সে বিদ্যালয় থেকে নির্বাচনী পরীক্ষা দিয়ে তিন বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। পরে এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ৪ হাজার টাকা চান। কিন্তু রিপনের মা শিল্পী খাতুন অনেক কষ্টে ফরম ফিলাপের জন্য কুদ্দুস স্যারের কাছে ২ হাজার ৫০০ টাকা জমা দেয়।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিদ্যালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল দিয়ে রিপন শেখকে বিদায় জানায় শিক্ষকরা। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি অত্র বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীকে এডমিট কার্ড দেওয়া হলেও মেলেনি রিপন শেখের। বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম পিন্টু রিপনকে জানায়, তার এডমিট কার্ড হয়নি। পরীক্ষার একদিন আগে এমন কথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরে রিপনের।
শিক্ষার্থী রিপন শেখ জানান, পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য ৫০০ টাকা ও এডমিট কার্ড গ্রহণের জন্য ৩০০ টাকা দিয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যালয় থেকে বিদায়ও নিয়েছে। পরীক্ষার আগের দিন এডমিট কার্ড আনতে গেলে তাকে জানানো হয় তার এডমিট কার্ড হয়নি।
রিপনের মা শিল্পী খাতুন বলেন, আমার স্বামী দিনমজুর। আমি পরের বাড়িতে কাজ করে কোন মতো খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাই। রিপনের ফরম ফিলাপের জন্য ৪ হাজার টাকা দাবি করে বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কুদ্দুস স্যার। আমি প্রতিবেশীর কাছ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা ধার করে নিয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস স্যারের কাছে দেই। তবুও আমার ছেলে পরীক্ষা দিতে পারল না। পরীক্ষা না দিতে পেরে আমার ছেলে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম পিন্টু বলেন, দুই মাস হলো আমি এই স্কুলে যোগদান করেছি। যোগদানের আগেই ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ হয়েছে। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বিষয়টি সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন। তবে আমি জানতে পেরেছি, রিপনের ফরম ফিলাপের জন্য তৎকালীন প্রধান শিক্ষকের কাছে টাকা জমা দিয়েছিল তার পরিবার।
বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমি দুই মাস আগে বিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছি। আমি বিদায় নেয়ার আগেই ২০২৪ সালের পরিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ সম্পন্ন হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর মা আমার কাছে টাকা দিয়েছিল মনে হয়। শিক্ষার্থী নিজে আমার কাছে টাকা দিলে ফরম ফিলাপের বিষয়টি আমার মনে থাকত। রিপনের ফরম ফিলাপের বিষয়টি কোনো কারণে হয়ত আমার ভুল হয়েছে।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দ্রুততার সঙ্গে সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বলা হয়েছে।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থী রিপন শেখের সহপাঠীরা দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং রিপন পরীক্ষা না দিতে পারার জন্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দায়ী করেছেন।
Posted ১:৪২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ajkerograbani.com | Salah Uddin