বুধবার ২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরপর ২২ বিয়ে, শিকল-দড়িতে বেঁধেও কাউকে রাখতে পারেননি ঘরে

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট

পরপর ২২ বিয়ে, শিকল-দড়িতে বেঁধেও কাউকে রাখতে পারেননি ঘরে

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ভিক্ষুক মো. নূরুল ইসলাম। কাগজ ও পলিথিন দিয়ে তৈরি অনেকটা পাখির বাসার মতো জরাজীর্ণ এক কুঁড়ে ঘরে বসবাস তার। ফুলপুর উপজেলার ভাইকান্দি গ্রামের বেরাকপুর এলাকায় তার বাড়ি।

ভিক্ষা করেই চলে তার দুঃখগাঁথা জীবনের জীবিকা। তবে তার ৭০ বছরের দীর্ঘ জীবনে দুঃখ ঘুচিয়ে সংসারী হতে চেষ্টা করেছেন বারবার। এজন্য তিনি একে একে বিয়ে করেছেন ২২টি। কিন্তু কোনো স্ত্রীই তার সংসারে টিকেনি বেশিদিন। এ নিয়ে এলাকাবাসীসহ উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও ভিক্ষুক নূরুল ইসলামের মনের দুঃখ ঘুচেনি আজও। এ নিয়ে প্রায়ই মনোকষ্টে বিরহের গান গেয়ে আপন মনে পথ চলতে দেখা যায় তাকে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভিক্ষুক নূরুল ইসলাম শুয়ে আছেন নিজগৃহে বাঁশের তৈরি জরাজীর্ণ এক মাচার বিছানায়। কিন্তু তার এ ঘরটি এতটাই নিচু যে ওই ঘরে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে নুইয়ে থেকেই ওই ঘরে প্রবেশ ও বাহির হতে হয়। তার ঘরের চারপাশে পুটলায় ঝুলে থাকতে দেখা গেছে সারিসারি প্লাস্টিকের বস্তা ও ব্যাগ। এতে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে নূরুল ইসলামের প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র।

কেমন আছেন জানতে চাইলে নূরুল ইসলাম বলেন, ভালো না, জীবনে দুঃখ নিয়েই আছি। সুখ পাইলাম না। একটা ঘরের জন্য আমার সব বউ পালাইয়া গেছে গা। শুনছি কত মানুষ সরকারি ঘর পায় কিন্তু আমারে কেউ একটা ঘর দিল না।

এ সময় তার ২২ বিয়ের গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোটবেলায় মানুষের বাড়িতে কাম (কাজ) করতাম। তহন আটা আনা, চার আনা ময়না দিত আর কালাই ভাজা খাওয়াইত। তহন আমার এক ফুফু বলে নূর ইসলাম তর কাছে আমার পাগলি বিয়া দেহালাই (দিয়ে দেই)। তখন আমি বিয়ে করে ঘর জামাই হই। তার নাম ছিল হাজেরা খাতুন। কিন্তু বিয়ের ২/৩ বছর পর বউ খালি ঝগড়া করে, এরপর আমি রাগ করে হেরে থইয়া (রেখে) আয়া পড়ছি। এরপর ভালা ও পাগলি মিলাইয়া ৭/৮ বিয়ে করি। কয়েক মাস থাইক্কা সবাই চলে গেলে আমার প্রথম বউ আবার আমার ঘরে আসে। এরপর আমার চারটি সন্তান হয়। এরমধ্যে তিনটা সন্তান মারা গেছে। এহন একটি মেয়ে আছে। তার নাম শ্যামলা খাতুন, বিয়ে দিয়ে দিছি।

এরপর প্রথম বউ হাজেরা মারা গেলে অনেক পাগলি ধরে এনে বিয়ে করতে করতে ২২টি বিয়া করেছি। কিন্তু আমার ভাঙা ঘরে কেউ টিকলো না। এদের অনেককে শিকল ও দড়ি দিয়ে বাইন্ধা (বেঁধে) সঙ্গে সঙ্গে রাখছি। পরে সুযোগ পাইয়া সবাই পালাইয়া গেছে।

জানা যায়, নূরুল ইসলামের বিয়ে করতে কোনো কাবিন লাগে না। মুন্সি দিয়ে তিনবার কবুল বলেই তিনি বিয়ে করেছেন একে একে ২২টি।

স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন জানান, নূরুল ইসলামের প্রথম বউ মারা যাওয়ার পর বিয়ে করা বেশির ভাগ বউ তার পাগলি ছিল। এরা কেউ বেশি দিন তার সংসারে থাকেননি।

নূরুল ইসলামের প্রতিবেশী মোহাম্মদ আলী বলেন, ভালো-মন্দ মিলিয়ে নূরুল ইসলাম বিয়ে করেছেন ২২টি। কিন্তু তার কোনো ঘর নাই। তিনি খুব কষ্ট করে ভাঙা ঘরে থাকেন। তার একটি ঘর হলে ভালো হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, আপনাদের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরেছি। খোঁজখবর নিয়ে তার (নূরুল ইসলাম) জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:০৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]