বৃহস্পতিবার ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মস্কোয় আক্রমণকারী কারা এই আইএস-কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট

মস্কোয় আক্রমণকারী কারা এই আইএস-কে?

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় একটি কনসার্টে বন্দুকধারীদের হামলায় এখন পর্যন্ত ৮২ জনের মৃত্যুর হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। আহত হয়েছেন আরো শতাধিক। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত ৮ টার পরপর মস্কোর উত্তর প্রান্তে ক্রোকাস সিটি হলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যে হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতিতে জানিয়েছে, মস্কোতে আইএস-কে যোদ্ধারা হামলা চালিয়ে শতাধিক মানুষকে হতাহত করেছে এবং ঘটনাস্থলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে নিরাপদে তাদের ঘাঁটিতে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে।

রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানিয়েছে, পাঁচজন বন্দুকধারী এই হামলা চালায়। প্রথমে গুলিবর্ষণের পর সেখানে গ্রেনেড বা বোমা নিক্ষেপ করা হয়। তাতে হলটিতে আগুন ধরে যায়।

প্রসঙ্গত, আইএস যখন ইরাক ও সিরিয়ার বড় অংশ দখল করে খেলাফত কায়েমের ঘোষণা দিয়েছিল, সেই সময় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে আইএস-কের গোড়াপত্তন হয়। পরে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক বাহিনীর অভিযানে আইএসের সেই কথিত খেলাফতের পতন ঘটে।

মস্কোয় আক্রমণকারী কারা এই আইএস-কে?

মস্কোয় একটি কনসার্টে বন্দুকধারীদের হামলায় জড়িত ছিল আইএসআইএস-কে। আইএসের এই শাখার পুরো নাম ইসলামিক স্টেট খোরাসান। ইরান, তুর্কমেনিস্তান এবং আফগানিস্তানের অংশবিশেষ নিয়ে খোরাসান নামের একটি এলাকা গঠিত। ২০১৪ সালের দিকে ইসলামিক স্টেট খোরাসানের উত্থান ঘটে এবং নৃশংস একটি দল হিসেবে তারা কুখ্যাত হয়ে ওঠে। তবে ২০১৮ সালের পর থেকে তাদের সদস্য সংখ্যা কমে এসেছে।

আফগানিস্তানের ভেতরে, বাইরে, মসজিদ এবং অন্যান্য স্থাপনায় হামলার জন্য ইসলামিক স্টেট খোরাসানের কুখ্যাতি রয়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে জানা যায়, ইরানে জোড়া বোমা হামলায় প্রায় ১০০ মানুষের মৃত্যুর পেছনে দায়ী ছিল আইএসের এই শাখাটি।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কাবুলে রাশিয়ার দূতাবাসে হামলা, ২০২১ সালে কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা তাদের কার্যক্রমের মাঝে এগুলো উল্লেখযোগ্য।

রাশিয়ার হামলা চালানোর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে?

বিশ্লেষকদের মতে, বিগত কয়েক বছরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ইসলামিক স্টেট। তারা বারবার পুতিনের সমালোচনা করেছে। এছাড়া মুসলিমদের বিরোধিতায় বিভিন্ন কার্যক্রমে রাশিয়ার অংশগ্রহণও ভালো চোখে দেখে না আইএস।

রাশিয়া ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শত্রু ইরান এবং তালেবান-শাসিত আফগানিস্তানে হামলা চালিয়েছে আইএসের এই শাখা। বিশ্লেষকদের মতে, আইএসআইএস-কে এর ক্ষমতা বেড়ে চলেছে। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপরেও তারা হামলা চালানোর মত শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে আইএসের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও কার্যত তেমন কিছু করছে না যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি দাবি করেছে, ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার পর আইএসের ব্যাপারে তেমন কিছু করতে পারছে না তারা। এমনকি তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করার মতো অবস্থানেও নেই যুক্তরাষ্ট্র।

আইএস-কের উল্লেখযোগ্য হামলা

আফগানিস্তানের ভেতরে ও বাইরে মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনায় বড় রকমের হামলা চালানোর ইতিহাস আছে আইএস-কের।

চলতি বছরের শুরুতে ইরানে জোড়া বোমা হামলায় প্রায় ১০০ জন নিহত হন। এ হামলা আইএস-কে চালিয়েছে বলে নিশ্চিত হন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।

প্রায় দুই বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে রাশিয়ার দূতাবাসে রক্তক্ষয়ী আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেন আইএস-কের সদস্যরা।

এ ঘটনার আগের বছর ২০২১ সালে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে ১৩ মার্কিন সেনা ও বেশ কিছু বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে আইএস-কে। তালেবানের কাবুল দখল এবং সেখান থেকে মার্কিন সেনা ও অনেক আফগানের দেশ ছাড়ার মুহূর্তে সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে চালানো হয় ওই হামলা।

আইএসের অর্থের উৎস কী?

অনুদান

প্রথম দিকে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা এবং ধনী ব্যক্তি আই এসকে অর্থায়ন করতেন। এই দাতাগুলো ছিল মূলত সুন্নি সম্প্রদায়ের এবং তারা সিরিয়ার সংখ্যালঘু আলাউয়ি সম্প্রদায়ের রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আই এসকে অর্থ যোগান দিতেন। এসব উৎস থেকে পাওয়া অর্থ ব্যবহার করা বিদেশী যোদ্ধাদের সিরিয়া এবং ইরাকে নিয়ে যাওয়া হলেও, আই এস এখন মোটামুটি স্বয়ং সম্পন্ন হয়ে উঠেছে।

তেল

আমেরিকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, আই এস ২০১৪ সালে তেল বিক্রি করে ১০ কোটি ডলার আয় করেছে। তারা অশোধিত তেল এবং তেল-ভিত্তিক সামগ্রী দালালদের কাছে বিক্রি করে, যারা সেগুলো তুরস্ক এবং ইরানে চোরাচালান করে বা সিরিয়ার সরকারের কাছে বিক্রি করে। তবে সম্প্রতি আই এস-এর তেল স্থাপনাগুলোর উপর বিমান হামলার ফলে তাদের অর্থের এই উৎস কমে গেছে।

অপহরণ

অপহরণ এই গোষ্ঠীর আয়ের একটি বড় উৎস। আই এস ২০১৪ সালে মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে অন্ততপক্ষে দুই কোটি ডলার আয় করে। আই এস থেকে পক্ষ ত্যাগ করে বেরিয়ে আসা একজন বলেছেন, অপহরণ অভিযান চালানোর জন্য সংগঠনটির একটি স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে, যার নাম ‘ইন্টেলিজেন্স এ্যাপারেটাস’। অপহরণকে আই এস তাদের পরিচিতি প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করে।

চুরি-ডাকাতি, লুট আর চাঁদাবাজি

মার্কিন অর্থ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, আই এস তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকার জনগণকে জোরপূর্বক চাঁদা দিতে বাধ্য করিয়ে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ ডলার আয় করে। যারা তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা দিয়ে যাতায়াত করে, বা সেখানে ব্যবসা করে বা শুধু বসবাস করে, তাদের কাছ থেকে ‘নিরাপত্তা’ দেবার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে চাঁদা আদায় করা হয়।

আই এস ব্যাংক লুট করে, গবাদিপশু চুরি করে এবং পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ করে অর্থ উপার্জন করে। সিরিয়ার বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চুরি করে বিক্রি করাও আই এস-এর অর্থের একটি উৎস।

ধর্মী সংখ্যালঘুদের উপর কর

আই এস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ধর্মী সংখ্যালঘুদের ‘যিযিয়া’ নামে একটি বিশেষ কর দিতে হয়। গত বছর ইরাকের মোসুল শহরে মসজিদগুলোতে একটি ঘোষণা পড়া হয়, যেখানে ক্রিশ্চানদের বলা হয় মুসলমান হয়ে যেতে, নয় ‘যিযিয়া’ দিতে। শহর ছেড়ে না চলে গেলে তাদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়। তাদের আমরা তিনটি পথ দিয়েছি। হয় ইসলাম গ্রহণ করো, নয় যিযিয়া করসহ ধিমা চুক্তি। তারা যদি প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে তাদের জন্য তলোয়ার ছাড়া আর কিছুই থাকবে না, আই এস বিবৃতিতে বলা হয়।

দাসত্ব

আই এস অপহরণকৃত মেয়েদের যৌন দাস হিসেবে বিক্রি করে অর্থ আয় করেছে। স্থানীয় ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের তথ্য অনুযায়ী, যখন আই এস ইরাকের উত্তরে সিনজার শহর দখল করে, তখন তারা হাজার হাজার ইয়াজিদি নারী এবং যুবতী মেয়েকে বন্দী করে, এবং তাদের অনেককে যৌন দাস হিসেবে ব্যবহার করে।

হান্নান নামের একজন ইয়াজিদি নারী বলেন তিনি আই এস-এর হাত থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তিনি বিবিসিকে বলেন, তাকে আরো ২০০ নারী ও মেয়ের সাথে একটি ক্রীতদাসীদের হাট-এ নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে আই এস যোদ্ধারা এসে নিজের পছন্দ মত মেয়ে নিয়ে যেত।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(230 বার পঠিত)
(204 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]