শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবারও একে অপরকে দোষারোপ, বাগ্‌বিতণ্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট

আবারও একে অপরকে দোষারোপ, বাগ্‌বিতণ্ডা

রোজা শুরুর আগেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে পণ্যের মজুত ও সরবরাহ নিয়ে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। বৈঠকে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে আবারও একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে পাইকারি ব্যবসায়ী এবং এফবিসিসিআইর নেতাদের মধ্যে। এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি একই ধরনের সভায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে এমন পরিস্থতির সৃষ্টি হয়। সভায় বেশি আলোচনা হয় চিনির দাম ও সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে। সভা পরিচালনা করেন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

সভায় চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মফিজুল হক বলেন, চিনি রাখা এবং বিক্রি করা খুবই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিনির দর মিলগেটে ১০২ টাকা বেঁধে দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। এখনও ১০৬ বা ১০৭ টাকা নিচ্ছে মিলগেটে। তা ছাড়া মিল পর্যায়ে থেকে চিনি দিচ্ছে না। বাজারে এখনও চিনির ঘাটতি। এর সমাধান হওয়া জরুরি। এ অভিযোগের সত্যতা জানতে এফবিসিসিআই সভাপতি সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সিটি, মেঘনা ও এস আলম গ্রুপের কাছে পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত। গ্যাসের সরবরাহ ঠিক রাখলে উৎপাদনও ঠিক থাকবে। পণ্যের সংকট হবে না। দামও বাড়বে না।

মৌলভীবাজারের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, আমদানিকারকরা চিনি এবং তেল নিয়মিত দিলে রোজায় এক-দুই টাকা ব্যবসায় এসব পণ্য বিক্রি করা যাবে। কিন্তু বাজারে প্রয়োজন অনুযায়ী  সরবরাহ করা হচ্ছে না আমদানিকারকদের পক্ষ থেকে। এই বক্তব্যের পর এফবিসিসিআইর সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, চিনির ব্যবসায়ীরা ঢাকায় বসে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছেন।

তাঁরা পাইকারি পর্যায়ে যথাযথ আচরণ করছেন না। নেতারা ঢাকায় বসে ভুল তথ্য দেবেন এটা তো হবে না। এতে বাজারে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাসেম জসিম উদ্দিনের এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে গেলে তিনি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনি চুপ থাকেন। আপনি এখানে ঝগড়া করতে এসেছেন।’ এ বক্তব্যের প্রতিবাদ করে আবুল হাসেম বলেন, ঝগড়া করব কেন। আপনার সঙ্গে তো আমার ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। পাইকারি ব্যবসায়ীরা আপনার এ দোষারোপ কেন মেনে নেবেন।
এরপর খুচরা বাজারে চিনির অস্বাভাবিক দাম এবং কম সরবরাহের বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরাও। একজন  সাংবাদিক লাল চিনি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানানোর পর মঞ্চে থাকা এফবিসিসিআইর বেশিরভাগ নেতা এর  প্রতিবাদ জানান। তাঁরা বলেন, এখানে আমদানি করা পরিশোধিত সাদা চিনির কথা হচ্ছে।

চিনির পর আলোচনা হয় গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি নিয়ে। তবে এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে দাওয়াত করা হলেও ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন বা বিক্রির সঙ্গে জড়িত কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। তবে পোলট্রি খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কাঁচামাল সরবরাহকারী ভুটা ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি মিজানুল হক বলেন, ব্রয়লারের মুরগি খাদ্য উৎপাদনে ৬০ শতাংশ ভুট্টা ব্যবহার হয়। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভুট্টার উৎপাদন ২০ শতাংশ বেশি হবে। ইতোমধ্যে ভুট্টার কেজি ৪২ টাকা থেকে ৩৬ টাকায় নেমে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘দুবাইয়ে গরু উৎপাদন হয় না। তারা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। এরপরও সেখানে বাংলাদেশি মুদ্রা ৫০০ টাকায় মাংস কেনা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে কিনতে ৭৫০ টাকা।  দেশে উৎপাদিত গরুর মাংসের যে দাম, ব্রাজিল থেকে মাংস আমদানি করলেও এত বেশি হবে না।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় শিল্পকে বিকশিত করতে গরু ও ব্রয়লার আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু বাজারে যদি এভাবে দাম বাড়তে থাকে তাহলে ভোক্তাদের স্বার্থে গরু ও ব্রয়লার আমদানি করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া হবে।’
এর আগে সভার শুরুতে জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে, দেশেও বাড়বে। কারণ অনেক পণ্য আমদানি হয়। তবে যাদের দুই কেজি দরকার তারা কেনেন ৫ থেকে ৬ কেজি। এতে বাজারে প্রভাব পড়ে। দুই থেকে তিন শতাংশ ব্যবসায়ী সেই সুযোগটি নেন। মুষ্টিমেয় এসব ব্যবসায়ীরা অপকর্মের দায়ভার ৯৮ শতাংশ ব্যবসায়ী নেবেন না। অযৌক্তিকভাবে  দাম বাড়ানোর কারণে কোনো বাজারের কমিটি বাতিল হোক বা কাউকে ধরে নিয়ে যাক, তা এফবিসিসিআই প্রত্যাশা করে না। আইন মেনেই সবাইকে ব্যবসা করতে হবে। তবে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে বিভিন্নভাবে সমন্বয় করতে হয়। ট্যাক্স ছাড় দিতে হয়। সরকারকে সেই বিষয়টি দেখতে হবে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রোজায় প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর মজুত পর্যাপ্ত আছে। যেমন– খেজুরের আমদানিকারকরাও বলেছেন, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে। দাম যেন আর না বাড়ে। পাশাপাশি রোজায় ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি হবে– এ ধরনের সংস্কৃতি চালু করা দরকার।

সভায় ক্রয় রসিদ নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বারের একজন প্রতিনিধি বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ,  পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রয় রসিদ দিচ্ছেন না। এর সুরাহা দরকার। পাইকারি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, মিলাররা তাঁদের ক্রয় রসিদ দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে  এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এটি বহু দিনের অভিযোগ। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। ২০০ বছরের পুরোনো পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। ডিও (ডেলিভারি ওর্ডার) ব্যবসা বাতিলের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশ স্মার্ট হচ্ছে। ক্রয় রসিদ দিয়ে স্মার্টভাবে ব্যবসা করতে হবে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। ক্রয় রসিদ নিয়ে আর লুকোচুরি চলবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন সংগঠনটির সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুও।

পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, ভোজ্যতেলের মজুত পর্যাপ্ত আছে। রোজায় সয়াবিনের চেয়ে পাম অয়েলের চাহিদা বেশি থাকে। পাম অয়েল এখনও সরকারের দরের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
সভায় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হোসেনসহ এফবিসিসিআইর অন্য নেতারাও বক্তব্য রাখেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩

ajkerograbani.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

সম্পাদক ও প্রকাশক
মুহা: সালাহউদ্দিন মিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়

২ শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সরণি, মগবাজার, ঢাকা-১২১৭। সম্পাদক কর্তৃক তুহিন প্রেস, ২১৯/২ ফকিরাপুল (১ম গলি), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০ থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।

ফোন : ০১৯১৪৭৫৩৮৬৮

E-mail: [email protected]